মোদী এবং সঙ্ঘের প্রশংসায় রাজ্যপাল, কটাক্ষ কংগ্রেসকে

খুব হিসেব করে কথা বললেন না রাজ্যপাল। আর রাজনৈতিক কথায দিব্যি বলে গেলেন অসমের রাজ্যপাল পদ্মনাভ বালকৃষ্ণ আচার্য। শিলচরে এসে আজ নিজেকে ‘ব্যতিক্রমী রাজ্যপাল’ হিসেবেই তুলে ধরলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসায় উচ্ছসিত হলেন। টেনে আনলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা কেশব হেডগেওয়ারের কথা।

Advertisement

উত্তম সাহা

শিলচর শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৫ ০৩:৩১
Share:

সঙ্ঘের দফতরে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করছেন অসমের রাজ্যপাল পদ্মনাভ বালকৃষ্ণ আচার্য। শনিবার স্বপন রায়ের তোলা ছবি।

খুব হিসেব করে কথা বললেন না রাজ্যপাল। আর রাজনৈতিক কথায দিব্যি বলে গেলেন অসমের রাজ্যপাল পদ্মনাভ বালকৃষ্ণ আচার্য। শিলচরে এসে আজ নিজেকে ‘ব্যতিক্রমী রাজ্যপাল’ হিসেবেই তুলে ধরলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসায় উচ্ছসিত হলেন। টেনে আনলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা কেশব হেডগেওয়ারের কথা। রামদেবকে যোগের পুনর্জন্মদাতা হিসেবে বর্ণনা করলেন। সঙ্ঘের প্রাক্তন সদস্য রাজ্যপাল অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের শিক্ষা ভাবনা ও কল্যাণ আশ্রমের সমাজব্রতের কাহিনী শোনালেন। সেই সঙ্গে কংগ্রেসের নাম না করেও পুরনো শাসকশক্তির সমালোচনায় মুখর হলেন। রাজ্যপাল হয়েও ছাড়েননি রাজ্যপালদের। তাঁদের ব্রিটিশ জমানার মানসিকতার সমালোচনায় মুখর হন পদ্মনাভ বালকৃষ্ণ।

Advertisement

এনআরসি নিয়ে অসমের সাধারণ মানুষের উদ্বেগের কথাও তিনি জানেন। তিনিও চান, ভিন রাজ্য থেকে আসা নাগরিক কিংবা বৈবাহিক সূত্রে অসমে বসবাসকারীদের নাম এনআরসি-তে তোলা হোক। তিনি বললেন, ‘‘অসমিয়ারা দূরবীণ নিয়ে বিদেশি খোঁজা শুরু করেছেন। এ উচিত নয়। তাই বলে রাজ্য সরকারকে তিনি কিছু বলার পক্ষপাতী নন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় রাজ্যপাল আশ্বস্ত করলেন, ‘‘যে জায়গায় বললে কাজ হবে, সেকানেই আমি যা বলার বলব।’’

আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে সঙ্ঘের ঘনিষ্ঠ সংগঠন কেশব স্মারক সংস্কৃতি সুরভি ও পতঞ্জলি যোগ সমিতির দু’দিনের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করতে রাজ্যপাল আজ শিলচরে আসেন। তার আগে সঙ্ঘ কার্যালয়ে একটি কম্পিউটার প্রসিক্ষণ কেন্দ্রেরও উদ্বোধন করেন। যোগ শিবির সেরে যান লক্ষীপুর মহকুমার মারকুলিনে। সেখানকার আনারস চাষীদের সঙ্গে কথা বলেন রাজ্যপাল। শিলচর গুরুচরণ কলেজ প্রেক্ষাগৃহে যোগ দিবসের উদ্বোধন করে রাজ্যপাল নিজেও প্রাণায়াম, কপালভাতি করেন। করা হয় সূর্য নমস্কারও।

Advertisement

আয়োজকরা মঞ্চে জেলাশাসক এস বিশ্বনাথনের জন্য কোনও আসন রাখেননি। রাজ্যপাল তাঁকে মঞ্চে ডেকে নেন। বসান তাঁর ডান পাশের চেয়ারে। বাঁ দিকে ছিলেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমনাথ দাশগুপ্ত। রাজ্যপাল বলতে থাকেন, ‘‘স্বাধীনতা লাভের এত বছর পর ভারতবাসী স্বাভিমানের সঙ্গে উঠে দাঁড়ালেন। ভারতের প্রস্তাবে রাষ্ট্রসংঘ আন্তর্জাতিক যোগ দিবস ঘোষণা করল। ভারতের সঙ্গে যোগ অনুশীলন করবে গোটা বিশ্ব।’’ তাঁর কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই ভারতবাসীকে এই গর্ব এনে দিয়েছেন। আরেক জন হলেন রামদেব। তিনি যোগের পুনর্জন্ম ঘটিয়েছেন।’’

এরপরই কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘এত কাল আমরা দেখেছি, দেশে লুঠ চলছিল। সরকারি অর্থ ভাণ্ডার লুঠ করে সুইজারল্যান্ডে টাকা জমিয়েছেন অনেকেই। মুঘল-ব্রিটিশরাও ভারতে এসেছিল লুঠপাটের উদ্দেশে। বহু সম্পত্তি নিয়ে গিয়েছে ওরা। কিন্তু দেশের মানুষ হয়েও এক শ্রেণির লোকজন এতদিন ধরে যা করেছেন, তা বিদেশিরাও করতে পারেনি।’’

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন-ভাবনায় তিনি মোদী-দর্শনের উল্লেখ করেন। বলেন, ‘‘এই অঞ্চলের উন্নতির জন্য চাই তিনটি ‘ই’—এডুকেশন, ইলেকট্রিসিটি এবং এমপ্লয়মেন্ট। আর সে জন্যই মোদী-ভাবনার রূপায়ণ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষা কৌশল বদলাতে হবে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সরকারি চাকরির জন্য শিক্ষিত

হওয়া নয়, শিখতে হবে নিজেকে কর্মক্ষম করে তোলার কৌশল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকেও সে দিকে লক্ষ্য রেখেই বিষয় বাছাই করতে হবে।’’ উদাহরণ হিসেবে তিনি কাছাড়ের লক্ষ্মীপুর মহকুমার আনারসের কথা বলেন। শিক্ষিত হয়ে স্থানীয় আনারসের বিপণনে গুরুত্ব দিলে বেকারি কমবে বলে রাজ্যপাল বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে মোবাইল রিপেয়ারিং শেখানোর পরামর্শও তিনি দেন। উপজাতিরা একে অপরের ভাষা বোঝে না। বিদেশি ভাষাশিক্ষার সঙ্গে উপজাতি ভাষাগুলি শেখানোরও ব্যবস্থা করতে বলেন তিনি।

ভারতীয় সেনার সাম্প্রতিক মায়ানমার অভিযানের জন্যও তিনি মোদীর ভূয়সী প্রশংসা করেন। জানতে চান, ‘‘চিন বহুদিন থেকে অরুণাচল প্রদেশকে তাদের বলে দাবি করছে। কিন্তু কেউ কী এতদিন কিছু বলেছেন? আমরা কি তবে নপুংসক হয়ে গেলাম?’’ রাজ্যপালের কথায়, ‘‘পরাক্রমের সঙ্গেই জঙ্গিদের জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।’’

রাজ্যপাল হয়েও কী ভাবে এমন ব্যতিক্রমী হয়ে উঠলেন?

নিজেই জবাব দেন এবিভিপি-র প্রাক্তন সভাপতি পি বি আচার্য। আরএসএস প্রতিষ্ঠাতা হেডগেওয়ারকে সাধারণ পোশাকের সন্ন্যাসী বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘‘হেডগেওয়ার প্রতিষ্ঠিত সংগঠন থেকে আমি উঠে এসেছি।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘আরএসএস প্রচারকদের জন্যই আমরা আছি। তাঁদের জন্যই এ বার সরকার বদলেছে।’’

রাজ্যপালের মুখে এমন কথার পর কী চুপ করে থাকা যায়! বক্তৃতার মধ্যেই স্লোগান ওঠে, ‘ভারতমাতা কি জয়।’ আরএসএস প্রচারক শশীকান্ত চৌথাইওয়ালেও রাজ্যপালের সঙ্গে একই মঞ্চে বক্তৃতা করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন