রাজ্যে রাজ্যে বিক্ষোভ, পদ্মবনে বাড়ছে কাঁটা

সরকারে তো বটেই, দলেও কি রাশ আলগা হচ্ছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের? একের পর এক ঘটনায় এখন এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজধানীর অলিন্দে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:২২
Share:

সরকারে তো বটেই, দলেও কি রাশ আলগা হচ্ছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের? একের পর এক ঘটনায় এখন এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজধানীর অলিন্দে।

Advertisement

ওড়িশায় বিজেপির দুই প্রভাবশালী নেতা দিলীপ রায় এবং বিজয় মহাপাত্র দল ছেড়ে বলেছেন, ‘দলে ‘আসবাব’ হয়ে থাকতে পারব না!’’ মধ্যপ্রদেশে ভোট শেষ হতেই বিজেপির উষা ঠাকুর তোপ দেগেছেন দলের পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে। রাজস্থানে রাজ্য বিজেপি সভাপতি বাছতে গিয়ে বসুন্ধরা রাজের কাছে মাথা নোয়াতে হয়েছে খোদ অমিত শাহকে। উত্তরাখণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ত্রিবেন্দ্র সিংহ রাওয়তকে সরাতে চেয়ে দিল্লিতে অমিতের সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন বেশির ভাগ বিধায়ক। একটি ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে ত্রিবেন্দ্রর বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে অনেকের। তাঁর বদলে একজন ব্রাহ্মণ নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী করতে চান বিধায়কদের সিংহভাগ। দৌড়ে এগিয়ে মোদীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত রাজ্যসভা সাংসদ অনিল বালুনি। দৌড়ে আছেন কুমায়ুনের বিধায়ক অরবিন্দ পাণ্ডেও। অমিত তাঁদের বলেছেন, ১১ ডিসেম্বরের পরে এ নিয়ে কথা বলতে। উত্তরপ্রদেশে আদিত্যনাথকে বাগেই আনতে পারছেন না মোদী-অমিত।

বিদ্রোহের ছাপ অন্যত্রও। জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল হিসেবে যাঁকে নিয়োগ করা হয়েছে, সেই সত্যপাল মালিক খোলাখুলিই বলছেন, দিল্লি কী ভাবে উপত্যকায় নাক গলাচ্ছে! ছুটিতে পাঠানো সিবিআইয়ের ডিরেক্টর অলোক বর্মা থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর বিরল আচার্য, প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন থেকে সদ্য প্রাক্তন মুখ্য নিবার্চন কমিশনার ওমপ্রকাশ রাওয়ত— সরকারের নানা সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে অস্বস্তি বাড়াচ্ছেন।

Advertisement

দেশ জুড়ে দল এবং সরকারের এমন টুকরো টুকরো ছবিই বলে দিচ্ছে, মোদী-শাহের অস্বস্তিটা কতখানি। কটাক্ষ করে অনেকে বলছেন, কেউ বাগে নেই, সবাই ‘বাগী’ (বিদ্রোহী)!

আরও পড়ুন: দিল্লিতে সঙ্ঘ-র রথযাত্রা ফ্লপ! ভিড় বাড়াতে পড়শি রাজ্যে হানা

‘বাগী’দের নিয়ে জবাব দিতে গিয়ে নাজেহাল অমিত শাহ। জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপালের মন্তব্য প্রসঙ্গে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘উনি ‘দিল্লি’ বলেননি, বিজেপির কোনও নেতার সঙ্গে কথা বলে থাকবেন।’’ বসুন্ধরার সঙ্গে বিবাদ প্রসঙ্গে বলছেন, ‘‘তাঁর সঙ্গে আমার কিসের প্রতিযোগিতা? তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আর আমি দলের সভাপতি!’’ যোগীকে নিয়ে মুখ না খুললেও অমিতের অসন্তোষ স্পষ্ট।

কংগ্রেস নেতারা ঘরোয়া স্তরে বলছেন, এ সব বিজেপির অভ্যন্তরীণ বিষয়। এক সময় কংগ্রেস সম্পর্কে বলা হত— দলে অনেক মাথা আর নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব। এখন রাহুল গাঁধী বিবদমান নেতাদের একজোট করছেন। আর ঠিক উল্টো ছবি বিজেপিতে। এত দিন যাঁদের মুখ বন্ধ রেখেছিলেন মোদী-শাহ, তাঁরাই ক্ষোভ জানাচ্ছেন।

যদিও বিজেপি মুখপাত্র জিভিএল নরসিংহ রাও বলছেন, ‘‘ভোটের সময় এ সব খুচরো ঘটনা সব দলেই ঘটে। এগুলো কিছু না।’’ এ কথা মানছেন না মহারাষ্ট্রের নানা পাটোলে। মোদীর বিরুদ্ধে মুখ খুলে বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে আসা নানা বলছেন, ‘‘ভোট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। বিজেপিতে আরও অনেক উলটপুরাণ দেখবেন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন