কৃষক-ক্ষোভেই তিন রাজ্যের ভোটের ফলে বেহাল বিজেপি

হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যের ভোটের ফল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, চাষিদের সমস্যা, অভিযোগ, ক্ষোভ কতখানি বাস্তব।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৯
Share:

মহারাষ্ট্রে নাসিক থেকে মুম্বই চাষিদের ‘লং মার্চ’ থেকে দিল্লির সংসদ মার্গে সারা দেশের চাষিদের বিক্ষোভ—দু’তিন বছরে দেশ জুড়েই চাষিদের আন্দোলন দানা বেঁধেছে। —ফাইল চিত্র।

চাষিদের ক্ষোভই বিজেপির কাল হয়ে দাঁড়াল।

Advertisement

হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যের ভোটের ফল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, চাষিদের সমস্যা, অভিযোগ, ক্ষোভ কতখানি বাস্তব। এবং সেই ক্ষোভ বিজেপিকে যেমন গদিচ্যুত করতে পারে, তেমনই ২০১৯-এ নরেন্দ্র মোদীর ফের প্রধানমন্ত্রীর গদিতে ফেরার পথেও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। যে নরেন্দ্র মোদী আগেভাগেই দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে ২০২২-এর মধ্যে চাষিদের আয় দ্বিগুণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন।

মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান—হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যই মূলত কৃষিপ্রধান এলাকা। গ্রামই বেশি। তিন রাজ্যের ৫১৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৪৩৭টি কেন্দ্রই গ্রামীণ এলাকায়। ভোটের ফল বলছে, তিন রাজ্যেই গ্রামে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। মধ্যপ্রদেশের গ্রামে দখলে থাকা ৭৫টির বেশি বিধানসভা কেন্দ্র খুইয়েছে তারা। রাজস্থানের গ্রামে বিজেপির প্রায় ৪০টি আসন হাতছাড়া হয়েছে। ছত্তীসগঢ়ের গ্রামেও বিজেপির হাত থেকে ৩০টির কাছাকাছি আসন বেরিয়ে গিয়েছে। কংগ্রেস তারই সুফল কুড়িয়েছে। বিজেপির জন্য চিন্তার কারণ হল, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ়ে খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে যথাক্রমে ৭০ ও ৭৫ শতাংশ চাষি ও ক্ষেতমজুর। রাজস্থানে সংখ্যাটা ৬৩ শতাংশ। তিনটি রাজ্যেই বিজেপির খারাপ ফলের অর্থ হল, চাষি ও ক্ষেতমজুররা তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

Advertisement

মহারাষ্ট্রে নাসিক থেকে মুম্বই চাষিদের ‘লং মার্চ’ থেকে দিল্লির সংসদ মার্গে সারা দেশের চাষিদের বিক্ষোভ—দু’তিন বছরে দেশ জুড়েই চাষিদের আন্দোলন দানা বেঁধেছে। মূল ক্ষোভ, চাষিরা ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। চাষের মোট খরচের দেড় গুণ সহায়ক মূল্যের সঙ্গে যোগ হয়েছিল কৃষিঋণ মকুবের দাবি। কৃষক সভার নেতা হান্নান মোল্লা বলেন, ‘‘বিক্ষোভ তৈরি হলেও সরকার চাষিদের দাবি নিয়ে মাথা ঘামায়নি। তারই মূল্য চোকাতে হয়েছে। লোকসভা ভোটেও গ্রামের সমস্যা, চাষিদের ক্ষোভ ছায়া ফেলবে।’’

আরও পড়ুন: রামের নামেও ভোট দিল না সতীর রাজ্য!

২০১৪-য় মোদীর প্রতিশ্রুতি ছিল, বছরে ১ কোটি চাকরি। তা রক্ষা হয়নি। চাষিদের আয় দ্বিগুণ করার স্বপ্ন দেখিয়েও প্রধানমন্ত্রীকে তাঁদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে। অর্থনীতিবিদদের যুক্তি, কৃষিতে সঙ্কট ও চাকরির অভাব একই মুদ্রার দুই পিঠ। চাকরির অভাব বলেই বাধ্য হয়ে গ্রামের মানুষের কম রোজগারের চাষে ভরসা করেন। নোট বাতিল সঙ্কটকে আরও তীব্র করেছিল। চাষিরা ফসলের দাম পাননি। বীজ-সার কিনতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন। কাজ হারিয়ে শ্রমিকরা গ্রামে ফিরতে বাধ্য হয়েছিলেন।

কতখানি তীব্র ছিল চাষিদের সমস্যা? সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, মধ্যপ্রদেশে ২০০৪ থেকে ২০১৬-র মধ্যে ১৬,৯৩২ জন চাষি আত্মহত্যা করেছেন। যার অর্থ, দিনে গড়ে তিন জনেরও বেশি। ছত্তীসগঢ়েও ওই ১২ বছরে ১২,৯৭৯ জন চাষি আত্মহত্যা করেছেন। তুলনায় রাজস্থানে কম হলেও ওই সময়ে আত্মহত্যার সংখ্যা সাড়ে ৫ হাজারের বেশি। কেন্দ্র ও তিন রাজ্যের বিজেপি সরকার গ্রাম-গরিবের জন্য বিনা মূল্যে সিলিন্ডার থেকে শৌচাগারের মতো নানা উপহার দিয়েছে। কিন্তু গ্রামের সঙ্কটে চোখ বুজে থেকেছে। একশো দিনের কাজে দরাজ হয়নি। কোষাগারে টাকার অভাব বলে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ঋণ মকুবের দাবি খারিজ করে দিয়েছেন। তার মধ্যেই মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরে ২০১৭-র জুনে চাষিদের উপর গুলি চলেছে।

কৃষক আন্দোলনের নেতা যোগেন্দ্র যাদব বলেন, ‘‘এ বার জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির বদলে রুটিরুজি আর চাষের সমস্যাই প্রধান হয়ে উঠেছিল। সেটাই বিজেপিকে সবচেয়ে বেশি ধাক্কা দিয়েছে। ২০১৪-তে বিজেপি দলিত-জনজাতির ভোটও পেয়েছিল। তারাও এখন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন