তেলঙ্গানায় শেষ বেলায় কি টাকাই জিতবে?

গুদাম্বা কত? ৫০। আর হিপ্পাসারা? ৮০!

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

ওয়ারঙ্গল শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৫৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

গুদাম্বা কত? ৫০। আর হিপ্পাসারা? ৮০!

Advertisement

ওয়ারঙ্গল জেলার শাসক তেলঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির অফিসে কর্মীদের ভিড়ে বসে শেষবেলায় হিসেব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন টি রমেশ। প্রবল চিৎকার, হইচইয়ের মধ্যে আগন্তুক দেখেই তড়িঘড়ি খাতা বন্ধ। তেলুগুতে জানতে চাইলেন, কী চাই? ‘নো তেলুগু’ বলতেই আশ্বস্ত হলেন তিনি। ভাঙা হিন্দিতে বললেন, ‘‘একটু বসুন আসছি।’’

প্রায় মিনিট পঁয়তাল্লিশ রাজনীতির আলোচনা, তিন কাপ চা, বিস্তর সিগারেট উড়িয়ে খোলস থেকে বেরোলেন রমেশ। কিসের হিসেব হচ্ছিল, তা জানতে গিয়ে বুঝলাম, ভোটের আগের রাতে কোন কর্মীর নিজের এলাকায় কত বোতল মদ চাই, তাঁর হিসেব কষছিলেন তিনি। রমেশ বললেন, ‘‘ভোটের আগের দিন একটু তো তোয়াজে রাখতে হবে ভোটারদের। তাই একটু খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা।’’ জানলাম, শহরে ভোটারদের জন্য থাকছে গুদাম্বা। ফল পচিয়ে বানানো মদ। আর অন্য দিকে হিপ্পাসারা বানানো হয় মহুয়া থেকে। যা মূলত গ্রামীণ এলাকার জন্য। দু’টোই আসলে চোলাইয়ের প্রকারভেদ। আধা শহুরে ও গ্রামীণ এলাকাগুলিতে ভোটের আগের রাতে মদ ও মাংসের ঢালাও আয়োজন করার অভিযোগের আঙুল উঠেছে মূলত শাসক শিবিরের দিকেই। টি রমেশ অবশ্য বলছেন, ‘‘বাকি দলেরাও কেউ ধোয়া তুলসিপাতা নয়।’’

Advertisement

জনগাঁও কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী তথা প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পি লক্ষ্মইয়ার অভিযোগ, ‘‘কমিশন ঘোষিত প্রার্থী-পিছু খরচের বাইরে প্রতিটি কেন্দ্র-পিছু ২৫ কোটি টাকা ধরেছে কেসিআরের দল। সভায় কর্মী ধরে নিয়ে যাওয়া থেকে ভোটের আগের রাতে খাওয়া-দাওয়া-সব হচ্ছে ওই টাকায়।’’ সভায় কর্মী ধরে নিয়ে যাওয়া নিয়ে বিস্তর অভিযোগ জমা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। জানা গেল, সমর্থকদের রেট চলছে পাঁচশো, তিনশো ও দু’শো। খরচে এক নম্বরে টিআরএস।

তারপর বিজেপি ও কংগ্রেস। তাই ভিড় শাসক শিবিরেই।

ওয়ারঙ্গলের পথে আলের স্টেশনের কাছে তেলঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির দফতরের সামনে মহিলাদের ভিড়। লাইন দিয়ে দলের প্রতীক গোলাপি শাড়ি ও টুপি বিতরণ হচ্ছে। গ্রামীণ এলাকা বলে দর একটু কম। জানা গেল, খাবার ও দিনের শেষে ৩৫০ টাকা পাবেন মহিলারা। সঙ্গে শাড়ি ফ্রি। বসে নেই নির্বাচন কমিশন। তল্লাশিতে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ১১৫ কোটি টাকা। ধরপাকড়ে অবশ্য জড়িয়েছেন তিন দলের নেতারাই। বুধবার গভীর রাতে ওয়ারঙ্গল জেলায় একটি ভ্যান থেকে ৩.৫০ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের অনুমান, ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য এই টাকা কোনও রাজনৈতিক নেতার কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

টাকা যখন ভোট কিনছে, তখন ওয়ারঙ্গল টাউন থেকে বাইশ কিলোমিটার দূরে গঙ্গাদেবীপল্লি গ্রাম সম্পূর্ণ অন্য একটি পৃথিবী। গ্রামবাসীরা এক জোট হয়ে শপথ নিয়েছেন, এ বারের ভোটে কোনও প্রার্থীর কাছ থেকে একটি টাকাও নেবেন না। আর্দশ গ্রামের তকমা পাওয়া গ্রামপ্রধান কুসাম রাজামৌলি জানালেন, ‘‘কিছু লোক টাকা দিয়ে ভোট কিনতে চাইছিল। তাই ওই শপথ।’’ গত ত্রিশ বছর ধরে গ্রামের উন্নতিতে লেগে রয়েছেন পেশায় কৃষক রাজামৌলি। ফলে গ্রামের আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে মদের দোকান নেই। সকলেই সাক্ষর। দু’য়ের বেশি তিন সন্তান নেই কারও। প্রত্যেকের বাড়িতে সোলার বিদ্যুৎ, শৌচাগার। ১ টাকায় মেলে ২০ লিটার পরিশ্রুত পানীয় জল। গোটা গ্রামে একটি পাতা পর্যন্ত পড়ে নেই। দেশ-বিদেশ থেকে আদর্শ গ্রামের ৩৯টি পুরস্কার পাওয়া রাজামৌলির আক্ষেপ, ‘‘উন্নয়ন নয়। রাজ্যের যা পরিস্থিতি দেখছি তাতে শেষবেলায় যে যত টাকা ছড়াবে সেই মনে হচ্ছে ভোটে জিতবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন