বক্তা: ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। কলকাতায় বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
সঙ্ঘ পরিবার এবং বিজেপি-কে তাঁরা একটুও জায়গা ছেড়ে দেবেন না বলে ঘোষণা করলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে এখন তৎপরতা বাড়িয়েছে গেরুয়া শিবির। সব রকমের ‘চক্রান্ত’ মোকাবিলা করেই তাঁরা লড়াইয়ের জন্য তৈরি বলে জানিয়েছেন মানিকবাবু।
ত্রিপুরার লড়াইয়ে সংহতি জানানোর জন্য বৃহস্পতিবার কলকাতায় প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে সভার আয়োজন করেছিল বাংলার সিপিএম। শহরের রাজপথে চাঁদা তোলা হয়েছিল ত্রিপুরার দলের হাতে দেওয়ার জন্য। তার পরেও এ দিন মানিকবাবু, সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুদের মঞ্চে উঠে এ রাজ্যের একাধিক জেলা সিপিএম কমিটি এবং বেশ কিছু মানুষ ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রিপুরার জন্য অর্থ সাহায্য করেছেন। নিজেরা আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়েও বাংলার কর্মী-সমর্থকেরা যে ভাবে সহমর্মিতার হাত এগিয়ে দিচ্ছেন, তা তাঁদের লড়াইয়ের প্রত্যয় আরও বাড়িয়ে দেবে বলে মন্তব্য করেছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী।
বর্তমান প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মানিকবাবুর মুখে কড়া আক্রমণ শোনা গিয়েছে বিজেপি-র বিরুদ্ধে। বরং, বিজেপি-র ‘মিথ্যা’র মোকাবিলায় ওই রাজ্যের কংগ্রেসও যে মুখ খুলছে, সেই কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, মানিকবাবুর ওই বিজেপি-নিশানার পরেই একই প্রেক্ষাগৃহে বক্তা ছিলেন ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব। তাঁরও আহ্বান, দেশ জু়ড়ে ‘ফ্যাসিবাদী’ শক্তির তাণ্ডব মোকাবিলায় ছুঁৎমার্গ ছেড়ে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক সব শক্তিকে একজোট করতে হবে।
এই প্রস্তাব দিয়েই আগে সিপিএমের পলিটব্যুরোকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন হাবিব। তাঁর সেই মত নস্যাৎ করে প্রকাশ কারাট লিখেছিলেন, মোদী জমানায় স্বৈরাচার চললেও তাকে এখনও ‘ফ্যাসিবাদ’ বলা যায় না। পার্টি কংগ্রেসের আগে কলকাতায় সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক যখন আসন্ন, সেই সময়ে হাবিবকে ডেকে সূর্যবাবুদের সভা করানো ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। আর নিজের রাজ্য চালানোর অভিজ্ঞতায় মানিকবাবুও বিজেপি-র বিপদের কথা বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
মানিকবাবু এ দিন বলেন, বিজেপি দাবি করেছিল রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে ভোট করতে হবে। অথচ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেরই রিপোর্ট দেখাচ্ছে, ত্রিপুরার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটেও ভেঙে পড়েনি! এর পরে সঙ্ঘ-বিজেপি চেষ্টা করেছে, সাধারণ বাসিন্দা ও উপজাতিদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে। তাঁর অভিযোগ, জাতিগত মেরুকরণও ঠিকমতো কার্যকরী হচ্ছে না দেখে গেরুয়া শিবির এখন ধর্মীয় মেরুকরণে নেমে পড়েছে। মানিকবাবুর কথায়, ‘‘প্রতি দিন হাজার মানুষ রাস্তায় নামছেন। তাঁরা রাস্তা ছেড়ে দেবেন না! বিজেপি ভেঙেও এখন লোক আসছে সিপিএমের পতাকার নীচে।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘আমাদের ছোট্ট রাজ্য। স্মল ইজ বিউটিফুল! বিকল্প উন্নয়নের ধারা নিয়ে ছোট্ট জায়গা থেকেই একটা বড় লড়াই চলছে।’’
মুখ্যমন্ত্রী যে দিন কলকাতায় সভা করছেন, সে দিনই ত্রিপুরায় তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র ধনপুরে সভা করতে গিয়ে অসমের বিজেপি সরকারের মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ভোটের পরে মানিকবাবুকে বাংলাদেশে পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন! তার প্রেক্ষিতে ত্রিপুরা বামফ্রন্ট বিবৃতি দিয়ে নির্বাচনের আগে মানুষকে সতর্ক থেকে বিভেদকামী শক্তির ‘ষড়যন্ত্র’ বানচাল করার আর্জি জানিয়েছে।