’৯৩-এর মুম্বই, সিরিয়াল বিস্ফোরণের সেই দিন

শুক্রবারের দুপুর। দিনটা ১২ মার্চ ১৯৯৩। মুম্বই শহরের ১৩টি জায়গায় পর পর ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ। সেই সিরিয়াল বিস্ফোরণে নিহত হন ২৫৭ জন, আহত ৭১৩ জন। নরিম্যান পয়েন্ট, দালাল স্ট্রিট, দাদার, বান্দ্রা, সান্তাক্রুজ, পারেল— বেছে বেছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৫ ১৯:২৫
Share:

শুক্রবারের দুপুর। দিনটা ১২ মার্চ ১৯৯৩। মুম্বই শহরের ১৩টি জায়গায় পর পর ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ। সেই সিরিয়াল বিস্ফোরণে নিহত হন ২৫৭ জন, আহত ৭১৩ জন।

Advertisement

নরিম্যান পয়েন্ট, দালাল স্ট্রিট, দাদার, বান্দ্রা, সান্তাক্রুজ, পারেল— বেছে বেছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ, এয়ার ইন্ডিয়া ভবন, ভিক্টোরিয়া টার্মিনাস এমনকী শিবাজি পার্ক, জাভেরি বাজার-সহ বেশ কয়েকটি অভিজাত হোটেল ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিস্ফোরণের জেরে।

প্রথম বিস্ফোরণটা হয় বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে। এর পরের আড়াই ঘণ্টায় তছনছ হয়ে যায় বাণিজ্য নগরীর চেনা চেহারাটা। ওপড়ানো ল্যাম্পপোস্ট, ভাঙাচোরা-খুবলে নেওয়া রাস্তা, উড়ে যাওয়া দোকানের শাটার, পথে পড়ে থাকা সারি সারি রক্তাক্ত লাশ... এমনটাই ছিল সে দিনের মুম্বইয়ের ছবি। ওই দিন বেশির ভাগ জায়গাতেই টাইমবোমা বসানো হয়েছিল। তবে কোথাও কোথাও গাড়িবোমাও ব্যবহার করা হয়। এরই মধ্যে ওই রাতে শহরেরই ওরলিতে একটি পরিত্যক্ত মারুতি থেকে সাতটি একে ৪৭, ৭০০টি তাজা কার্তিজ এবং দু’টি হ্যান্ড গ্রেনেড উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার তদন্তে জাতীয় সুরক্ষা বাহিনী (এনএসজি)-সহ অন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

Advertisement

এই হামলার মূল দুই চক্রী দাউদ এবং ইয়াকুবের দাদা টাইগার মেমন ঘটনার পর থেকেই দেশছাড়া। ১৯৯৪-তে নয়াদিল্লি স্টেশনে ধরা পড়ে ইয়াকুব মেমন। পরে সে আদালতে আত্মসমর্পণের কথা বলে। এই মামলার শুনানির শুরুতে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয় আরও ১০ জনকে। পরে অবশ্য তাদের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করা হয়। কিন্তু, রেহাই মেলেনি ইয়াকুবের। তদন্তকারীদের দাবি, সেই মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী। এই হামলার কয়েক মাস আগে থেকেই নাকি সে দাউদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত! দুবাইয়ে বসে ইয়াকুব-টাইগার এই হামলার ছক বানায়। শুধু তাই নয়, তদন্তকারীদের দাবি, দাউদের নির্দেশেই এই হামলায় মূল ভূমিকা নেয় ইয়াকুব।

এই হামলার অন্যতম চক্রী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করে ইয়াকুবকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনায় মুম্বইয়ের সন্ত্রাস দমন আদালত। সেই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করে ইয়াকুব। প্রথমে সুপ্রিম কোর্টে এবং পরে রাষ্ট্রপতির কাছে। প্রত্যেক বারই তা খারিজ হয়ে যায়। এর পরে, প্রক্রিয়ায় গলদ ছিল এই দাবি জানিয়ে শীর্ষ আদালতে ফাঁসি রদের আবেদন করে ইয়াকুব। এ দিন সেই আর্জিও খারিজ হয়ে যায়। এবং তার ফলে বৃহস্পতিবার নাগপুর জেলে ফাঁসি হচ্ছে ইয়াকুবের।

২০০৪-এর পর থেকে এ পর্যন্ত তিন জনের ফাঁসি হয়েছে। ২০০৪-এর ১৪ অগস্ট একটি ধর্ষণের মামলায় ফাঁসি হয় ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের। ২০১২-র ২১ নভেম্বর মুম্বই-কাণ্ডে ফাঁসি হয় আজমল কাসভের। এর পর ২০১৩-র ৯ ফেব্রুয়ারি সংসদ হামলায় দোষী আফজল গুরুর ফাঁসি হয়। আদালত অনেককে ফাঁসির আদেশ শোনালেও ২০০৪-এর পর মাত্র তিন জনের ক্ষেত্রে তা কার্যকর হয়েছে। বৃহস্পতিবার ইয়াকুবের ফাঁসি হলে সেই সংখ্যাটি চারে গিয়ে দাঁড়াবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন