রাহুল গান্ধী (বাঁ দিকে) এবং অরবিন্দ কেজরীওয়াল। —ফাইল চিত্র।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির পাশাপাশি আপের বিরুদ্ধেও লড়াই করবে দল— শনিবার এই মর্মে প্রস্তাব পাশ করাল দিল্লি প্রদেশ কংগ্রেস। এর ফলে লোকসভা ভোটের আগে বিরোধী দলগুলির একমঞ্চে আসার উদ্যোগ ধাক্কা খেল বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও কংগ্রেসের অন্দরেই অনেকে মনে করছেন, এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বই। তবে দিল্লি-সহ বেশ কিছু রাজ্যে যে আঞ্চলিক রাজনীতির বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা-ও স্বীকার করে নিয়েছেন ওই কংগ্রেস নেতারা।
দিল্লি প্রদেশ কংগ্রেস সূত্রে খবর, শনিবারের বৈঠকে মূলত দু’টি প্রস্তাব পাশ করানো হয়েছে। সেগুলির মধ্যে একটি সাংগঠনিক এবং অপরটি রাজনৈতিক। এই প্রসঙ্গে দিল্লি কংগ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দীপক বাবারিয়া দলীয় কর্মী-সমর্থকদের জানান, রাহুল গান্ধী হিংসার রাজনীতির বিরুদ্ধে যে ভালবাসার বার্তা দিচ্ছেন, তা কংগ্রেসের তরফে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে এখন থেকেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার কর্মসূচি শুরু করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস।
অন্য যে প্রস্তাবটি পাশ করানো হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির পাশাপাশি আপের বিরুদ্ধেও লড়াই করবে কংগ্রেস। প্রস্তাবপত্রটি পাঠ করে দীপক বলেন, “কংগ্রেস কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করবে। কেন্দ্রের দুর্নীতিগ্রস্ত বিজেপি সরকার এবং দিল্লির আপ সরকারের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করব।” এই বিষয়ে অবশ্য এখনও পর্যন্ত আপের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য যে, কংগ্রেস এবং আপের মধ্যে ‘দূরত্ব’ আজকের নয়। গত ২৩ জুন পটনায় বিরোধীদের বৈঠকেও এই দূরত্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসে। দিল্লির অর্ডিন্যান্স বিতর্কে কংগ্রেসের সমর্থন চেয়ে তদ্বির করা হলেও হাত শিবিরের তরফে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি বলে অরবিন্দ কেজরীওয়ালদের অভিযোগ। পটনা থেকে ১৬টি বিজেপি বিরোধী দল একসঙ্গে চলার বার্তা দিলেও, বৈঠক শেষে হওয়া সাংবাদিক বৈঠতে কেজরীওয়াল কিংবা আপের কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না। অর্ডিন্যান্স নিয়ে মতপার্থক্যের কারণেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক ছেড়েছেন, এমন জল্পনা যখন তুঙ্গে, তখন বৈঠকের মূল উদ্যোক্তা তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার জানান, বিমান ধরার কারণেই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গিয়েছেন কেজরীওয়াল।
বিরোধী নেতানেত্রীদের মধ্যে অধিকাংশই লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে একের বিরুদ্ধে এক লড়়াইয়ে জোর দিচ্ছেন। আবার বেশ কিছু রাজ্যে যে কংগ্রেসের সঙ্গে আঞ্চলিক দলগুলির সমীকরণ ‘সহজ’ নয়, তা-ও অস্বীকার করছেন না কেউই। বিধানসভা ভোটে সাফল্য পেলেও গত লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির সাতটি লোকসভা নির্বাচনেই বিজেপির কাছে পরাস্ত হয় আপ। এই নির্বাচনে কংগ্রেসের সমর্থন পেলে এবং দিল্লিতে দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে ভোট পাটিগণিতে এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা বেশি আপের। সেই অঙ্ক মাথায় রেখে কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব কমাতে চাইছে দিল্লি এবং পঞ্জাবের শাসকদল আপও। কেজরীওয়াল বহু বার দাবি করেছেন যে, অর্ডিন্যান্স বিতর্কে সমর্থন চাইতে তিনি কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের সময় পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
কংগ্রেস সূত্রে খবর, আপের সঙ্গে সমঝোতা করার বিষয়ে দিল্লি প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে আপত্তি তো আছেই, গুজরাত কিংবা পঞ্জাবের মতো রাজ্যেও কংগ্রেস নেতারা চাইছেন না আপের সঙ্গে হাত মেলাতে। এ ক্ষেত্রে কংগ্রেস নেতাদের যুক্তি কংগ্রেসকে দুর্বল করে এবং ভোটে দলের ভোট কেটে প্রকারান্তরে বিজেপির সুবিধা করে দিচ্ছে কেজরীওয়ালের দল। দুই দলের সম্পর্ক যখন এমনই ‘গুমোট’ অবস্থায়, সে সময় আপের উপর চাপ বৃদ্ধি করতেই কংগ্রেসের এই প্রস্তাব পাশ করানো কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তবে দুই দলেই যে সব নেতা জোটের বিষয়ে আশাবাদী, তাঁরা মনে করছেন, লোকসভা ভোট এখনও বেশ খানিকটা দূরে। তার আগে জাতীয় রাজনীতিতে নানা উত্থানপতন ঘটবে বলে মনে করছেন এই নেতারা। প্রসঙ্গত, আগামী ১৩ জুলাই বেঙ্গালুরুতে দ্বিতীয় বারের জন্য বৈঠকে বসতে চলেছে বিরোধী দলগুলি। ওই বৈঠকে যোগ দেবে কংগ্রেস এবং আপও। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের আপ-অসন্তোষ কেটে যাবে বলেই মনে করছেন বিরোধী জোট নিয়ে আশাবাদী ওই নেতারা।