নিরাশ করল এটিএম, উদ্বেগে বরাক

সঙ্কট আরও তীব্র। আজ ছুটি থাকায় ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে নোট বদল ও টাকা তোলা বন্ধ ছিল। টাকা মেলে শুধু স্টেট ব্যাঙ্কের সদর শাখা চত্বরের এটিএমগুলিতে। আগামী কাল সেগুলিও চলবে না বলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলচর শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৫২
Share:

সঙ্কট আরও তীব্র। আজ ছুটি থাকায় ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে নোট বদল ও টাকা তোলা বন্ধ ছিল। টাকা মেলে শুধু স্টেট ব্যাঙ্কের সদর শাখা চত্বরের এটিএমগুলিতে। আগামী কাল সেগুলিও চলবে না বলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে। টাকার স্থানীয় ভাণ্ডার একেবারেই তলানিতে। উপায় শুধু রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। রাত পর্যন্ত তাদের কাছ থেকেও টাকা আসার কোনও খবর নেই।

Advertisement

দু-এক দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে যাঁরা ব্যাঙ্ক কাউন্টার বা এটিএমে ভিড় বাড়াতে চাননি, তাঁদের অবস্থা এখন নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। আর যাঁরা তিন-চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে সামান্য কিছু টাকা পেয়েছেন, সে সব ফুরিয়ে যেতে দেখে তাঁরাও দুশ্চিন্তায়। এই অবস্থায় বাজার-হাটে বেচাকেনা একেবারে কমে গিয়েছে।

ছোট নোটের জন্য মানুষ এতটাই দিশেহারা যে, গত কাল যে সব এটিএমে টাকা দেওয়া হয়েছিল, আজ ভোরেই সেগুলিতে লম্বা লাইন দেখা যায়। কিন্তু সারা দিনই কোনও কোনও এটিএমের ঝাঁপ ফেলা ছিল। কোনওটির সামনে ঝুলেছে ‘আউট অব সার্ভিস’ নোটিস। বেলা বাড়লে মানুষ হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরেন। অনেকে আবার এক এটিএম থেকে আরেক এটিএমে হন্যে হয়ে ঘোরেন। শেষ পর্যন্ত স্টেট ব্যাঙ্কের সদর শাখার লাইনে দাঁড়ান।

Advertisement

কাছাড়ের জেলাশাসক এস বিশ্বনাথনের দাবি, ছোট নোট মানুষের হাতে আটকা পড়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি টাকা ঘরে ফেলে না রেখে ব্যবহারের পরামর্শ দেন। না হলে দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলে তিনিও আশঙ্কা করছেন। বিশ্বনাথন জানান, ৯ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত জেলার ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরের মাধ্যমে ৫৫ কোটি টাকা বাজারে ছাড়া হয়। চা বাগানের মজুরি সমস্যাও মেটানো সম্ভব হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনাক্রমে জেলাশাসকের নামে পৃথক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রায় দুই কোটি টাকার ছোট নোট পাঠানো হয়েছে বাগানগুলিতে। সামান্য কয়েকটি বাগানে মজুরি প্রদান এখনও বাকি রয়েছে। সে জন্য তাদেরই দায়ী করেন বিশ্বনাথন। তিনি জানান, ওই বাগানগুলি এখনও সম-পরিমাণ অর্থের নিশ্চয়তা প্রদানে সক্ষম হয়নি।

স্টেট ব্যাঙ্কের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার হিমাঙ্কবিহারী রায় জানিয়েছেন, ছোট নোট পেতে সমস্যা হলেও বাতিল নোট জমা দিতে মানুষ পিছিয়ে নেই। এখনও পর্যন্ত এই অঞ্চলে শতাধিক কোটি টাকার ৫০০ ও ১ হাজার নোট জমা পড়েছে। তবে এর পরও যে একাংশ ব্যবসায়ী বাতিল নোট গ্রহণ করছেন, তাকে বেআইনি বলে মনে করেন তিনি। একে ঠেকানো গেলে টাকা ভাঙানোর নামে কমিশন বা ঠকানোর কারবারও বন্ধ হয়ে যাবে বলে দাবি হিমাঙ্কবাবুর। তিনি বাতিল টাকা ঘরে বা দোকানে ফেলে রাখার চেয়ে দ্রুত ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে দিতে পরামর্শ দেন।

ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের আশা, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে তাঁদের টাকা আসতে বেশি দেরি হবে না। কিন্তু তাঁদের আশঙ্কা অন্য জায়গায়। তাঁরা অনুমান করছেন, যে সব নোট পাঠানো হচ্ছে, সবগুলি ২ হাজার টাকার। তাতে বর্তমান সমস্যা কোনওমতে মিটবে না। যাঁরা কষ্ট করে হলেও এক বার টাকা বদলে নিয়েছেন, ব্যাঙ্ককর্তাদের অনুরোধ, তাঁরা যেন দ্বিতীয় বার লাইনে না দাঁড়ান। এক জনের এক বারই টাকা বদলানোর সুযোগ রয়েছে, জানান তাঁরা। ব্যাঙ্ককর্তাদের বক্তব্য, কিছু মানুষ বিভিন্ন নথি ব্যবহার করে ২-৩ বার টাকা বদলে নিচ্ছেন। তাঁদের পরামর্শ— একবার বদলে নেওয়ার পরও যদি হাতে বাতিল টাকা থাকে, তবে তা নিজের অ্যাকাউন্টে জমা করে দিন। পরে নিয়ম মেনে তুলে নেবেন।

গ্রাহক সুরক্ষা সমিতির পক্ষ থেকে ছোট নোটের সমস্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তাঁরা জেলাশাসককে এ নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনার অনুরোধ জানান। শহরের প্রতি মোড়ে অন্তত একটি এটিএমে টাকা না ঢোকালে যে অসহায়ত্ব চরমে পৌঁছাচ্ছে সে ব্যাপারে সতর্ক করে দেন তাঁরা। বিশেষ করে, প্রবীণ নাগরিকদের হয়রানির কথা গ্রাহক সুরক্ষা সমিতি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করে। উপযুক্ত ব্যবস্থা না করে তড়িঘড়ি নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের সমালোচনায় মুখর এসইউসিআই। একই অভিযোগ কংগ্রেসের। গত কাল জেলা নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছিল, লাইনে দাঁড়ানো দুর্ভোগে পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়াবেন তাঁদের কর্মীবাহিনী। প্রয়োজনে পানীয় জলের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু আজ স্টেট ব্যাঙ্কের সদর শাখা চত্বরে কোনও কংগ্রেসের স্বেচ্ছাসেবককে দেখা যায়নি। আজ পথে-ঘাটে, হাটে-বাজারে একটাই জিজ্ঞাসা— টাকা এল কি না। বিকেলে জেলাশাসকের অফিসের সামনের এটিএমে টেকনিক্যাল শাখার কর্মীরা কাজ করতে ঢুকলে টাকা এসেছে মনে করে মুহূর্তে লম্বা লাইন পড়ে। টাকা ঢোকানো হচ্ছে না, তা জানানোর পরও কেউ সরতে চাননি। এমনকী, মেশিনের কাজ সেরে চলে যাওয়ার পর মানুষ ভিতরে গিয়ে কার্ড ঢুকিয়ে নিশ্চিত হন, টাকা নেই। এ ছাড়াও, যেখানেই দু-একজন কোনও এটিএমে ঢুকে টাকার খবর জানতে চেয়েছেন, সেখানেই মুহূর্তে মানুষকে ভিড় জমাতে দেখা গিয়েছে।

নজরে নতুন। ২ হাজার টাকার নোটের নকশা দেখতে ব্যস্ত পড়ুয়ারা। সোমবার করিমগঞ্জে। — উত্তম মুহরী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন