বড়সড় এক সংষ্কারের পথে হাঁটল কেন্দ্র। নয়া মনোস্বাস্থ্য বিলে একের পর এক প্রস্তাবে সেই ইঙ্গিত দিয়েছে মোদী সরকার। নতুন আইন কার্যকর হলে, আত্মহত্যা আর অপরাধ হিসাবে গন্য হবে না। পাশাপাশি, মানসিক চিকিত্সায় শিশুদের উপর শক থেরাপির প্রয়োগও নিষিদ্ধ হবে।
নতুন মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা বিল, ২০১৬ সোমবার পাশ হয়েছে লোকসভায়। গত বছরের অগস্টে রাজ্যসভায় এই বিলটি পাশ হয়েছিল। সেই সময়েই লোকসভায় এ বিল পেশ করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডা জানিয়েছিলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১-২ শতাংশ মানুষ স্কিত্জোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিজঅর্ডারের মতো মানসিক রোগে ভোগেন। তা ছাড়া, প্রায় ৫ শতাংশ মানুষ অবসাদজনিত রোগে আক্রান্ত। গত বছর লোকসভায় পেশ হলেও তা পাশ হয় সোমবার। এখন আইন হিসাবে স্বীকৃতি পেতে ওই বিলটির শুধু রাষ্ট্রপতির প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সম্মতির অপেক্ষা।
এই মুহূর্তে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনও ব্যক্তি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, তবে তা অপরাধের সামিল। সাজা হিসাবে ওই ব্যক্তির সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে। নয়া ওই বিলে বলা হয়েছে, যদি অন্য কোনও কারণ প্রমাণিত না হয় তবে ধরে নিতে হবে ওই ব্যক্তি অতিরিক্ত মানসিক চাপের মুখে পড়েই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। ফলে, নয়া আইন অনুযায়ী আত্মহত্যা মানসিক চাপেরই ফল। আর সে জন্য কোন ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া যায় না। কাজেই আত্মহত্যার চেষ্টাকে আর ‘অপরাধ’ হিসাবে দেখবে না আইন।
আরও পড়ুন
একাধিক চিনা সামরিক পরিকাঠামোর বিপদ বাড়িয়ে আরও শক্তিশালী ব্রহ্মস
বিলে প্রস্তাব, মানসিক রোগীর চিকিৎসার সমস্ত তথ্যই গোপন রাখতে হবে। প্রতীকী ছবি।
মানসিক চিকিত্সার ক্ষেত্রে একাধিক পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে নয়া ওই বিলে। যেমন, গরিব অথচ মানসিক ভাবে অসুস্থ মানুষদের জন্য সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগ থাকবে। সে ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তি যদি দারিদ্যসীমার উপরে অথচ আর্থিক ভাবে সঙ্গতিহীন হন, তিনিও ওই সুযোগের আওতায় আসবেন। শিশুদের মানসিক চিকিত্সার ক্ষেত্রে শক থেরাপি বন্ধ করা যেমন হচ্ছে, তেমনই প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ওই থেরাপি দেওয়ার আগে রোগীর অনুমতি নেওয়ার কথা আইনে বলা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে রোগীকে অজ্ঞান করে উপযুক্ত ওষুধ প্রয়োগ করেই শক থেরাপি দিতে হবে।
আরও পড়ুন
৯৬ হাজার টাকার পুরনো নোট, মায়ের সঞ্চয় জলে, বিপাকে অনাথ সন্তানেরা!
নতুন এই বিলে অন্যান্য সুযোগসুবিধার পাশাপাশি গোপনীয়তার শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। মানসিক রোগীর চিকিৎসার সমস্ত তথ্যই গোপন রাখতে হবে। নয়া আইনে রোগীর সম্মতি ছাড়া তা কোনও ভাবেই প্রকাশ করা যাবে না। মানসিক রোগের চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসক বা সমাজকর্মীকে একই ছাতার তলায় আনতেও উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। জাতীয় স্তরে ‘সেন্ট্রাল মেন্টাল হেলথ অথিরিটি’ ও প্রতিটি রাজ্যে ‘স্টেট মেন্টাল হেলথ অথিরিটি’ গঠনের সংস্থান রাখা হয়েছে ওই বিলে। দেশের সমস্ত মনোবিদ, নার্স বা এই ক্ষেত্রে কর্মরত সমাজকর্মীকে তাতে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করাতে হবে বলেও বিলে বলা হয়েছে। মানসিক রোগীদের অধিকার যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে তা দেখতে একটি রিভিউ বোর্ডও গঠিত হবে।
আইন ভাঙার শাস্তির বিধানও ওই বিলে রাখা হয়েছে। নতুন মনোস্বাস্থ্য বিলে বলা হয়েছে, এই সংক্রান্ত কোনও শর্তভঙ্গ হলে ছয় মাস জেল অথবা ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা একসঙ্গে দু’টি শাস্তিই হবে। দ্বিতীয় বার একই অপরাধে দু’বছরের জেল বা ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা একসঙ্গে দুই শাস্তি ভোগ করতে হবে।