Babri Masjid

বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় আডবাণী-জোশীরা সবাই বেকসুর

ভাঙার ঘটনা পূর্ব-পরিকল্পিত নয়, রায় লখনউয়ের বিশেষ সিবিআই আদালতের।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৩:৫১
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

রামমন্দির নির্মাণ শুরু হয়ে গিয়েছে। অযোধ্যার সেই বহুবিতর্কিত স্থলে, ২৮ বছর আগে বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় এ বার বেকসুর খালাস হয়ে গেলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশী, উমা ভারতী-সহ সব অভিযুক্ত। লখনউ-এর বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারকের রায়, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরের ওই ঘটনার পিছনে কোনও ষড়যন্ত্র বা পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না। গোটাটাই ‘হঠাৎ ঘটে যাওয়া’ স্বতঃস্ফূর্ত জনরোষের ফল। ঘটনায় মোট অভিযুক্তের সংখ্যা ছিল ৪৯। এর মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি ৩২ জনের সে দিনের ভূমিকায় কোনও অপরাধ খুঁজে পায়নি আদালত। উল্টে ভাঙচুরের ঘটনা এঁরা আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন বলেও বলা হয়েছে রায়ে।

Advertisement

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর করসেবকরা মিলে মুঘল জমানার গোড়ার দিকে তৈরি বাবরি মসজিদ ধুলোয় মিশিয়ে দেয়। অভিযোগ ছিল, রীতিমতো পরিকল্পনা করেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। তার জন্য শাবল-গাঁইতি নিয়ে তাঁরা জড়ো হয়েছিলেন। সেই ঘটনায় প্রবীণ বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন উপ প্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুরলীমনোহর জোশী এবং মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উমা ভারতী, উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংহের মতো নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে মসজিদ ভাঙার ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা এবং করসেবকদের উস্কানি জোগানোর অভিযোগ ওঠে।

সেই মামলায় বুধবার ২ হাজার ৩০০ পাতার রায় দেন সিবিআই আদালতের বিচারক সুরেন্দ্রকুমার। তাতে বলা হয়, ‘‘মসজিদ ভাঙায় অভিযুক্তদের কারও হাত ছিল না। উন্মত্ত জনতাই এই ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেন। এর পিছনে সমাজবিরোধীদের হাতও ছিল। অভিযুক্তরা বরং মসজিদ ভাঙায় বাধা দেওয়ারই চেষ্টা করেছিলেন।’’

Advertisement

আদালতের রায়ের পর সাক্ষী মহারাজ। ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন: ঐতিহাসিক রায়, বললেন জোশী, আডবাণীদের শুভেচ্ছা নড্ডার​

বাবরি ধ্বংস মামলায় আদালতে একাধিক ভিডিয়ো ও ছবি আদালতে জমা করেছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিবিআই)। কিন্তু সেগুলির সত্যাসত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অভিযুক্তদের আইনজীবী মণীশ ত্রিপাঠী। অভিযুক্তদের ফাঁসানোর জন্য সেগুলি বিকৃত করা হয়েছে বলে আদালতে দাবি করেন তিনি। তাঁর সেই দাবিই মেনে নেন বিচারক সুরেন্দ্রকুমার। অরিজিনাল নেগেটিভ জমা না করায় ছবিগুলির সত্যতা নিয়ে ধন্দ প্রকাশ করেন তিনি। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা সাক্ষ্য প্রমাণ আইনের নিয়ম-কানুন মেনে চলেননি বলেও অভিযোগ করেন।

বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)-কেও এ দিন ক্লিনচিট ধরিয়ে দেয় সিবিআই আদালত। বিচারক সুরেন্দ্রকুমার বলেন, ‘‘প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে এই ঘটনার সঙ্গে আরএসএস এবং ভিএইচপি-র কোনও ভূমিকা ছিল না। পিছন থেকে অজ্ঞাত পরিচয় লোকজনই পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়েন।’’

আরও পড়ুন: মহাকাব্য নয়, এখন রাম মানে রাজনীতি আর অন্ধ ভক্তি​

বাবরি ধ্বংস মামলায় মোট ৪৯ জন অভিযুক্তের মধ্যে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অশোক সিঙ্ঘল, শিবসেনার বাল ঠাকরে, অযোধ্যার পরমহংস রামচন্দ্র দাসের মতো ১৭ জন ইতিমধ্যেই প্রয়াত হয়েছেন। এ দিন সশরীরে আদালতে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল বাকি ৩২ জনের। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে বয়স জনিত কারণে হাজিরা থেকে অব্যাহতি পান লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশী এবং কল্যাণ সিংহ-সহ ছ’জন। করোনা আক্রান্ত উমা ভারতী এই মুহূর্তে হৃষিকেশের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁকে হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। রামমন্দির ট্রাস্টের প্রধান নৃত্যগোপাল দাস এবং প্রাক্তন শিবসেনা সাংসদ সতীশ প্রধানও অব্যাহতি পান। একমাত্র মুরলীমনোহর জোশী ছাড়া ওই পাঁচ জন ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতে হাজিরা দেন। সাক্ষী মহারাজ, সাধ্বী ঋতাম্ভরা-সহ বাকি ২৬ জন অভিযুক্ত সশরীরে আদালতে হাজির হন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement