স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী। —ফাইল চিত্র।
স্বাধীনতা দিবসে আশাহত হলেন বরাক উপত্যকার মানুষ। কেউ কোনও কথা দেননি, তবু সবাই আশা করছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণে উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব নিয়ে ঘোষণা থাকবে। আশায় ছিলেন, ১৫ অগস্টেই লামডিং-শিলচর ব্রডগেজ লাইনে যাত্রী ট্রেন চালানো হবে। দ্বিতীয়টি যে হচ্ছে না, তা টের পাওয়া যায় কয়েক দিন আগেই। প্রথমটির জন্য অনেকে ঠায় বসেছিলেন টিভির সামনে। নানা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আশার কথা শোনালেও নাগরিকত্বের বিষয়টিই ছিল না তাঁর দীর্ঘ বক্তৃতায়।
এ নিয়েই চর্চা চলছে উপত্যকার শহর-গ্রামে। রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের মতো করে যুক্তির জাল ছড়ালেও, সাধারণ মানুষ খোলামেলা হতাশা প্রকাশ করছেন। স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে এ ব্যাপারে আইন প্রণয়ন, সংশোধন বা অধ্যাদেশের কথা না বলায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, এনআরসি-ডি ভোটারের বিষয়গুলি কি তবে এ ভাবেই ঝুলিয়ে রাখবে বিজেপি সরকার?
শিলচর বার কাউন্সিলের সভাপতি অনিল দে বলেন, ‘‘আশা করছিলাম আমাদের কথা ভেবে তিনি এ ব্যাপারে কিছু অন্তত বলবেন।’’ তবে হতাশ নন অনিলবাবু। আশায় ছিলেন গুরুচরণ কলেজের পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অপ্রতীম নাগও। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী বক্তৃতা এবং পরবর্তী সময়ের চর্চায় এ সব আশা করাটাই স্বাভাবিক ছিল। এখন কী বলব ভেবে পাচ্ছি না।’’
প্রদেশ কংগ্রেস মুখপাত্র দীপন দেওয়ানজির কথায়, ‘‘বড় বড় কথা বলাই সার বিজেপি-র। আসলে এ নিয়ে দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা।’’ স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে আইনের কথা না হলেও মোদী একটি কিছু বলবেন বলে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করেছিলেন। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর উপর আস্থা হারাচ্ছেন বরাকের মানুষ।’’
হিন্দু নাগরিক সুরক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোপালকান্তি রায় বলেন, ‘‘আমরা উদ্বিগ্ন ডি ভোটারদের ডিটেনশন ক্যাম্পে ঢোকানো হচ্ছে বলে। এ কাজ অনৈতিক। রাজ্য সরকার ইচ্ছে করলেই পুলিশকে এ ব্যাপারে নির্দেশ জারি করতে পারে। সে জন্য আমরা আগামী কাল ক্ষুদিরামের মূর্তির পাদদেশে সকাল ৮টা সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত অনশনে বসব।’’
শিলচরের বিজেপি বিধায়ক দিলীপকুমার পাল যুক্তি দেখান— ‘১৫ অগস্টেই যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা চালু করা হবে, এ তো কথা ছিল না। ফলে এমন আশার কথাও নয়।’’ নাগরিকত্ব নিয়ে তিনি রামমাধবের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘এটি জটিল প্রক্রিয়া। তবে আশাহত হওয়ার কারণ নেই।’’
এ দিকে, রেল নিয়েও মানুষের আশা ছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনও ঘোষণা নেই। তবু রেল স্টেশনের অনুষ্ঠানে যদি স্থানীয় রেলকর্তারা সে ব্যাপারে কিছু বলেন, সে আশায় স্টেশন প্রাঙ্গণে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ভিড় জমান সাধারণ জনতা। স্টেশন সুপার মোহনলাল চক্রবর্তী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে বক্তৃতা করেন। ভোটের সময় উপযুক্ত জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের পরামর্শ থেকে গাঁধীজি হত্যার নিন্দা পর্যন্ত বহু কথাই ছিল তাঁর বক্তৃতায়। এমনকি, ডি ভোটারদের নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কিন্তু একবারের জন্য আসেনি ব্রডগেজ প্রকল্পের কথা। তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ রাজনীতির ধার ধারেন না। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের খবরও রাখেন না। সে জন্যই দারিদ্র থেকে রেহাই মেলে না।’’ তাঁর কথায়, সরকারি সুযোগ-সুবিধে সম্পর্কে অজ্ঞতার জন্যই উত্তরণের উপায় মেলে না।’’