রবি-বরণে মাতল বরাক উপত্যকা

আত্মপরিচয় নিয়ে প্রায় সঙ্কটের মুখে পড়েন বরাকের বাঙালিরা। সে সব সময় রবীন্দ্রনাথেরই শরণ নেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৬ ০৩:৪২
Share:

আত্মপরিচয় নিয়ে প্রায় সঙ্কটের মুখে পড়েন বরাকের বাঙালিরা। সে সব সময় রবীন্দ্রনাথেরই শরণ নেন তাঁরা।

Advertisement

একেক সময় একেক চেহারায় সেই সঙ্কট দেখা দেয়। এখনও এনআরসি, বিদেশি বিতাড়ন, নাগরিকত্বের মতো ‘শব্দে’ বরাক উপত্যকার বাঙালিদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এ বারও রবীন্দ্রচর্চার মধ্যে দিয়েই সঙ্কট থেকে উত্তরণের দিশা খুঁজছেন বরাকবাসী।

এই লক্ষ্যে বিভিন্ন জায়গায় হয়েছে কবিপ্রণাম অনুষ্ঠান। প্রভাতফেরি আর শোভাযাত্রায় মুখরিত হয়ে ওঠে গ্রাম-শহর। সকাল সাড়ে সাতটায় শিলচর তারাপুরে রবীন্দ্রমূর্তির পাদদেশে মিলিত হন শহরের বিশিষ্টজনরা। আসেন স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা, সাধারণ মানুষ।

Advertisement

গুরুদেবকে পুষ্পার্ঘ দেন পুরপ্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর, উপ-প্রধান চামেলি পাল, পুরসদস্যা মিত্রা রায় ও মধুমিতা শর্মা, প্রাক্তন বিধায়ক দীপক ভট্টাচার্য, বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কাছাড় জেলা সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরী, সম্পাদক পরিতোষ দে, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের সভাপতি আশিস ভৌমিক, সম্পাদক অজয় রায়, আর্য সংস্কৃতি বোধনী সমিতির মুখ্য সংগঠক গৌতম ভট্টাচার্য, বিপ্লব দেবনাথ, সমর্পিতা ভট্টাচার্য, মৃদুল চৌধুরী, সঞ্জীব দেবলস্কর। এআইডিএসও এবং পথিকৃত-এর কর্মকর্তারাও কবিমূর্তিতে পুষ্পার্ঘ দেন। যৌথ ভাবে সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পুরসভা, লায়ন্স ক্লাব ও আর্য সংস্কৃতি বোধনী সমিতি। নাচ-গান-আবৃত্তির ফাঁকে ফাঁকে হয় বক্তৃতাও।

শিলচর পুরসভার সভাপতি নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথের ভাণ্ডার এত বিশাল, পড়ে শেষ করা যায় না। তাঁকে নিয়ে যত চর্চাই হোক না কেন, তা যথেষ্ট নয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘রবীন্দ্রনাথ বা রবীন্দ্রসাহিত্য বলার বিষয় নয়, তা উপলব্ধির।’’

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের সভাপতি আশিস ভৌমিক বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ বাঙালির কাছে গর্বের। তিনি আমাদের আত্মপরিচয়ের ঠিকানা। সঙ্কট এলেই এই অঞ্চলের বাঙালিরা কবিগুরুর কাছে সমাধান খোঁজেন।’’ তাই রবীন্দ্রচর্চায় গুরুত্ব দিতে বলেন তিনি।

বরাক বঙ্গের জেলা সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরী আজকের প্রজন্মে রবীন্দ্রচর্চা কমছে বলে আক্ষেপ করেন। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তরুণদের উপস্থিতি আশানুরূপ না হওয়া উদ্বেগের বিষয়।’’ তাঁদের অনুপস্থিতি এখন রীতিমত অনুসন্ধানের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক দীপক ভট্টাচার্য, গৌতম ভট্টাচার্য, পরিতোষ দে, মধুমিতা শর্মা-ও সেখানে বক্তৃতা করেন।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ রবীন্দ্রজয়ন্তীতে তিন দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। জেলা গ্রন্থাগারে তাঁদের আহ্বানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থা গান-বাজনা পরিবেশন করে। গতকাল একক ভাবনায় রবিঠাকুরের গান পরিবেশন করেন শহরের তরুণ শিল্পীরা। ছিল নাটকও।

গাঁধীবাগেও বিভিন্ন সংস্থা-সংগঠন কবিপ্রণামে অংশ নেয়। বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের প্রতিনিধিরা সেখানেও বিশ্বকবির উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানান, অনুষ্ঠান করেন। সংগঠনের কার্যবাহী সভাপতি দীনেন্দ্রনারায়ণ বিশ্বাস কবিগুরুর জীবন ও সাহিত্য নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন। উত্তমাশা কলা কেন্দ্রের শিল্পীরা অঙ্কনে অংশ নেন।

বঙ্গভবনে এ দিন রবীন্দ্রজয়ন্তীর আয়োজন করে বরাক বঙ্গের শিলচর আঞ্চলিক সমিতি। দিনভর নানা প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের পর সন্ধ্যায় হয় বিশিষ্ট শিল্পীদের সঙ্গীত-নৃত্য-আলেখ্য।

দ্বিতীয় লিঙ্ক রোডে রথীন্দ্রকুমার ব্রহ্মচারী স্মৃতি গ্রন্থাগারে রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা হয়। প্রতিযোগিতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করে শিলচরের ইস্ট ইন্ডিয়া ক্লাবও। ওই সংগঠনের প্রধান কর্মকর্তা সুনীল বিশ্বাস সারা বছর স্কুলে-স্কুলে ঘুরে নানা ধরনের প্রতিযোগিতা করান। এ দিন কবিগুরুর জন্মদিন বলে কেন্দ্রীয় ভাবে কুলদাসুন্দরী পাঠশালায় স্কুলছাত্রদের মধ্যে তাতক্ষণিক রচনা, অঙ্কন ও লিখিত ক্যুইজ প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়। সাড়া মেলে তাতে। রাজীব ওপেন ইনস্টিটিউটে রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপন করে মাতৃভাষা সুরক্ষা সমিতি। সোনাইয়ের মাধবচন্দ্র দাস কলেজে কবিপ্রণামের আয়োজক ছিল অবকাশ নামে এক সংস্থা।

করিমগঞ্জে শম্ভুসাগর পার্কে রবীন্দ্রমূর্তিতে মাল্যদান করেন পুরসভার প্রধান শিখা সূত্রধর সহ শহরের বিশিষ্টজনেরা। ছিলেন বিভিন্ন সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংস্থার কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ। সেখানে দিনভর গানবাজনা-আবৃত্তি করে চারণিক, মণিমুক্তা বিদ্যামন্দির, ভারত বিকাশ পরিষদ সহ বিভিন্ন সংস্থা। জেলা গ্রন্থাগারের সামনেও কবিমূর্তিতে মাল্যদান করে গানে-বাজনায় রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপন করা হয়।

‘রবীন্দ্রনাথ বাঙালীর আত্মপরিচয়’ এই স্লোগানকে সামনে রেখেই হাইলাকান্দিতে রবীন্দ্র জয়ন্তী আয়োজিত হয়। দু’দিনের যৌথ কর্মসূচি গ্রহণ করে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন এবং রবীন্দ্র ভবন কর্তৃপক্ষ। এ দিন রবীন্দ্রভবন প্রাঙ্গণে কবিগুরুর মূর্তিতে মাল্যদান করে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। আলোচনাসভায় বরাক বঙ্গের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতীশ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের স্মরণে-মননে রবীন্দ্রনাথ।’’ রবীন্দ্র ভবন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অশোক দত্তগুপ্ত বলেন ,‘‘রবীন্দ্র আদর্শকে সামনে রেখেই আমাদের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে।’’ আলোচনায় অন্যান্যদের মধ্যে অংশ নেন বিজয় কুমার ধর, মানসকান্তি দাশ, হীরজ্যোতি চক্রবর্তী, সুকোমল পাল। পরে হয় আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, গদ্যপাঠ, যেমন খুশি সাজো প্রতিযোগিতা এবং কবিতাপাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

দু’দিনের কর্মসূচির প্রথম দিনে গত কাল সকালে অনুষ্ঠিত হয় বসে আঁকো প্রতিযোগিতা। ছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রতিযোগিতা, রবীন্দ্রনৃত্য প্রতিযোগিতাও। বিকেলে আয়োজিত হয় তাৎক্ষনিক কবিতা লেখার অনুষ্ঠান। এতে নবীন-প্রবীণ ১৮ জন কবি অংশ নেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন