অসমিয়া ‘গামোছা’ সংস্কৃতি ঠেকাতে নিজস্ব উত্তরীয় তৈরি করছে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। কাজকর্ম অনেকটাই এগিয়েছে। প্রস্তাবিত নকশা সহ এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ অধিবেশনে পেশ করা হয়।
কিছু দিন আগেও বরাক উপত্যকার কোনও অনুষ্ঠানে অতিথিদের স্বাগত ফুলের তোড়ায় জানানো হতো। বিশেষ কাউকে স্বাগত জানাতেও মালা বা পুষ্পস্তবকেরই প্রচলন ছিল। কয়েক বছরে ছবিটা পাল্টেছে। এখন সরকারি-বেসরকারি যে কোনও কর্মসূচিতে অসমিয়া গামোছা গলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়। বরাক বঙ্গের কর্মকর্তারা একে অসমিয়াকরণের প্রয়াস বলেই মনে করছেন। না জেনে বঙ্গভাষীদের বিভিন্ন সংগঠনও সেই ফাঁদে পা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তাঁদের।
সম্প্রতি কাছাড় জেলা সমিতির অধিবেশনেও প্রসঙ্গটি ওঠে। প্রবীণ সাহিত্যিক মুজাম্মিল আলি লস্কর বলেন, কালাইনের এক মিলাদ মহফিলে তাঁকেও অসমিয়া গামোছা পরিয়ে দেওয়া হয়। জেলা সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরী জানান, বহু অনুষ্ঠানে তাঁকেও অসমিয়া গামোছায় বরণ করতে আসেন আয়োজকরা। তিনি সোজা আপত্তি জানান। তাঁর কথায়, ‘‘অসমিয়া গামোছার প্রতি বিদ্বেষ থাকার কোনও বিষয় নয়। অসমিয়াদের কোনও অনুষ্ঠানে বা ব্রহ্মপুত্রে গামোছায় স্বাগত
জানানো হলে সম্মানিত বোধ করব। কিন্তু বরাকে কেন অন্যের সংস্কৃতি ধার করা!’’
তা ঠেকাতেই বরাক উপত্যকার পরিচিতি-জ্ঞাপক উত্তরীয় তৈরি করছে বরাক বঙ্গ। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গৌতমপ্রসাদ দত্ত জানান, তাঁরা সে জন্য আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সাহায্য চেয়েছেন। ভাল সাড়া পেয়েছেন। বিভাগের পক্ষ থেকে বেশ কিছু নকশা পেশ করা হয়েছে।
দেওয়া হয়েছে একটি রিপোর্টও। ৮ জানুয়ারি কার্যবাহী সমিতির বৈঠকে সে সব নিয়ে চর্চা হয়েছে। বরাক বঙ্গের তিন দিনের কেন্দ্রীয় অধিবেশন করিমগঞ্জে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সেখানে আলোচনার পর উত্তরীয় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবশ্য নিজস্ব উত্তরীয় রয়েছে। নিজেদের উত্তরীয় আছে কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠনেরও। তবে সেগুলি তাঁদের অনুষ্ঠানেই ব্যবহৃত হয়। বরাক বঙ্গের আশা, তাদের অধিবেশনে গৃহীত উত্তরীয় বরাক বঙ্গের নয়, বরাক উপত্যকার হয়ে উঠবে।
প্রধানমন্ত্রী আবাসন প্রকল্প (গ্রামীণ) নিয়ে সরকারি তরফে একটি পুস্তিকা বরাক জুড়ে বিতরণ করা হচ্ছে। আগাগোড়া সেটি অসমিয়া ভাষায় লেখা। তারও সমালোচনা হয় বরাক বঙ্গের জেলা অধিবেশনে। তাঁরা এ নিয়ে জেলাশাসকের কাছে লিখিত নালিশ জানাবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। প্রাক্তন জেলা সভাপতি দীনেন্দ্রনারায়ণ বিশ্বাস বলেন, তাতে ভাষা আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে। সরকারি প্রকল্প সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানানোই যদি লক্ষ্য হয়, তবে বরাকে বাংলা ও বড়োল্যান্ডে বড়ো ভাষায় অনূদিত পুস্তক বিতরণের পরামর্শ দেন তিনি।
অধিবেশনে ফের তৈমুর রাজা চৌধুরীকে সভাপতি ও পরিতোষ দে-কে সম্পাদক মনোনীত করা হয়েছে। কোষাধ্যক্ষ আগের বারের জয়ন্ত দেবরায়ই।