গণনার দিনই শহিদ দিবস বরাকে

ভাষাশহিদ দিবসেই বিধানসভা ভোটের গণনা। কিন্তু সে জন্য আগামী ১৯ মে শহিদ দিবস পালনে কোনও ত্রুটি রাখতে চান না বরাকবাসী। তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে গোটা উপত্যকায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলচর শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৬ ০৩:৩৭
Share:

ভাষাশহিদ দিবসেই বিধানসভা ভোটের গণনা। কিন্তু সে জন্য আগামী ১৯ মে শহিদ দিবস পালনে কোনও ত্রুটি রাখতে চান না বরাকবাসী। তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে গোটা উপত্যকায়। অনেক সংগঠন ইতিমধ্যেই নিজেদের কর্মসূচি চূড়ান্ত করেছে। চলছে গান, নাটকের মহড়া।

Advertisement

ভাষাশহিদ স্টেশন শহিদ স্মরণ সমিতি এ বার ‘উচ্চারণের পাঠশালা’ নামে তিন দিনের কর্মশালার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রশিক্ষক আবৃত্তিকার দেবেশ ঠাকুর। উনিশ-কে সামনে রেখে এমন ভাবনা এই প্রথম। ১৬ মে বিকেলে কর্মশালার উদ্বোধন করবেন কাছাড়ের জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন। মোট ১০০ জনকে বাংলা উচ্চারণ শেখানো হবে সেখানে। উনিশে মে সকালে রেলস্টেশন প্রাঙ্গণে তাঁদের নিয়েই হবে দেবেশবাবুর অনুষ্ঠান, ‘শতকণ্ঠে উনিশ উচ্চারণ’।

ভাষাশহিদ স্টেশন শহিদ স্মরণ সমিতি প্রতি বছর তিন দিনের অনুষ্ঠানসূচি হাতে নেয়। উচ্চারণ কর্মশালা করলেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না, এ কথা জানিয়েছেন সভাপতি বাবুল হোড় ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব কর। এ বারও বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের কয়েক জন শিল্পী-কলাকুশলীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

Advertisement

তাঁরা জানান, বরাক উপত্যকার ভাষাশহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন বাংলাদেশের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, সে দেশের চলচ্চিত্র ও নাট্য পরিচালক নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ও মুক্তিযোদ্ধা মেজর সামসুল আরেফিন। নানা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বাংলাদেশের সঙ্গীত-নাট্যশিল্পী শিমূল ইউসুফ, আবৃত্তিকার ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, নৃত্যশিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুদেষ্ণা স্বয়ম্প্রভা, কণ্ঠশিল্পী লাভলি লস্কর, সূর্যলাল দাস ও আমিনূল ইসলাম লিটন। থাকবেন কলকাতার শুভেন্দু মাইতি এবং তানিয়া পালও। শ্রীহট্টের অ্যাকাডেমি ফর মণিপুরি কালচার অ্যান্ড আর্ট-এরও একদল শিল্পীও এখানে আসার ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছেন।

বাবুল হোড় ও রাজীব কর জানান, ১৮ মে বিকেল ৩টেয় রবীন্দ্র ও নজরুল নৃত্যের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কর্মসূচির সূচনা হবে। সন্ধ্যা ৫টায় আলোচনাসভা— ‘উনিশ আর এখন কোনও সংখ্যা নয়, উনিশ আমাদের লিগ্যাসি ডেটা’। রাতে গান-বাজনা দোহার ও দলছুট-এর।

স্মরণ সমিতির কর্মকর্তা স্বপন দাশগুপ্ত, চামেলি কর, নিলয় পাল-রা জানান, ১৯ মে সকাল সাড়ে ৬টায় রেলস্টেশন প্রাঙ্গণের শহিদ স্মৃতিসৌধে মাল্যদান ও পুষ্পার্ঘ নিবেদন শুরু হবে। সঙ্গে মুক্তমঞ্চে চলবে অনুষ্ঠান। দেশ-বিদেশের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে স্থানীয় সাংসদ সুস্মিতা দেব এবং বিধায়ক দিলীপকুমার পালকেও। ১১টা থেকে রয়েছে মাতৃভাষা উৎসব। তাতে বাংলা, ডিমাসা, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি, মণিপুরি, হিন্দি, মার, সাঁওতালি, নাগা, নেপালি, রিয়াং এবং অসমিয়া ভাষিক শিল্পীরা নিজের ভাষায় অনুষ্ঠান করবেন। সন্ধ্যা ৬টায় সান্ধ্য অনুষ্ঠানের সূচনা করবেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য নিযুক্তিপ্রাপ্ত উপাচার্য দিলীপচন্দ্র নাথ এবং বাংলাদেশের গোলাম কুদ্দুস।

২০ মে অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়। ‘উনিশের রবি প্রজন্ম’ নামে একটি সঙ্গীতানুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ১১ শিল্পী ১১টি গানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্দেশে উনিশের শ্রদ্ধা জানাবেন। রাত ৯টায় ভারত-বাংলাদেশের অনুষ্ঠান, ‘উনিশে-একুশে আলিঙ্গনে’।

উনিশে পালনের বড়সড় উদ্যোগ নিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ, বরাক উপত্যকার বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন, মাতৃভাষা সুরক্ষা সমিতি-সহ কয়েকটি সংস্থা। কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানগুলির আয়োজক শিলচর পুরসভা। সকাল সাড়ে ছয়টায় রেলস্টেশন প্রাঙ্গণে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের মত ঠিক আটটায় শ্রদ্ধাতর্পণ শুরু হয় শিলচর শ্মশানঘাটে। বেলা ২টা ৩৫ মিনিটে লাইন ধরে সবাই এগিয়ে চলেন শহিদ স্মৃতিসৌধের উদ্দেশে। এই অনুষ্ঠানগুলি এ বারও একই ভাবে পালিত হবে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের উনিশ-কর্মসূচির সূচনা হবে ১৭ মে। সে দিন বিকেল সাড়ে ৩টায় রাঙ্গিরখাড়ি থেকে শুরু হবে ‘উনিশের মহা-পথচলা’। শহর পরিক্রমা করে এরা মিলিত হবেন শিলচর রেলস্টেশন প্রাঙ্গণে। ১৮ মে গাঁধীবাগের সামনের রাস্তা আল্পনায় সাজিয়ে তোলা হবে। চলবে গান-বাজনা। ১৯ মে-তে স্থানে স্থানে ঘুরে নাচ-গান-নাটক পরিবেশন করবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের শিল্পীরা।

মাতৃভাষা সুরক্ষা সমিতি ১ মে তারিখেই মাসব্যাপী ভাষাশহিদ দিবস ও রবীন্দ্রজয়ন্তীর সূচনা করেছে। তাদের সাহিত্য-পত্রিকা প্রকাশের কাজও এগিয়ে চলেছে। সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে আর কয়েকটি সংস্থা।

প্রসঙ্গত, বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষায় ১৯৬১ সালের ১৯ মে শিলচরে ১১ তরুণ-তরুণী পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন। তাঁদের জীবনের বিনিময়েই পরবর্তী সময়ে বরাক উপত্যকায় বাংলা সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন