তালাক বিলে ভোটাভুটির চাল কেন্দ্রের

কথা ছিল আজই রাজ্যসভায় পাশ হবে লোকসভায় পাশ হওয়া বিলটি। তা না করে সরকার আজ বিরোধীদের সঙ্গে একপ্রস্ত কথা বলে। বুধবার এটি রাজ্যসভায় পেশ করা হবে। কংগ্রেস তথা বিরোধী শিবির এটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর পক্ষে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:০২
Share:

ছবি: পিটিআই।

রাজ্যসভায় বিরোধীরা গরিষ্ঠ হলেও তাদের পক্ষে তাৎক্ষণিক তিন তালাক নিয়ে বিলটির সরাসরি বিরোধিতা করা রাজনৈতিক ভাবে কঠিন। এবং ঝুঁকির। এই অবস্থায় বিরোধীরা শোরগোল করে সংসদ অচল করে রেখে বিলটির পাশ হওয়া ঠেকিয়ে রাখতে পারে। এমন আঁচ করে নরেন্দ্র মোদীর সরকার পাল্টা চাপের কৌশল নিল।

Advertisement

কথা ছিল আজই রাজ্যসভায় পাশ হবে লোকসভায় পাশ হওয়া বিলটি। তা না করে সরকার আজ বিরোধীদের সঙ্গে একপ্রস্ত কথা বলে। বুধবার এটি রাজ্যসভায় পেশ করা হবে। কংগ্রেস তথা বিরোধী শিবির এটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর পক্ষে। কিন্তু মোদী সরকারের স্পষ্ট অবস্থান হল, বিরোধীরা বাধা দিতে চাইলে সংসদে বিলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে হবে। মোদী সরকারের কাছে এটা স্পষ্ট যে, তিন তালাক বিল পাশ করিয়ে তাঁরা রাজনৈতিক ফায়দা কুড়োচ্ছেন বুঝতে পারলেও, কংগ্রেস ও বিরোধীরা মুসলিম ভোটের হিসেব কষে প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করতে পারছেন না। বিরোধীদের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই সরকার চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে, তাৎক্ষণিক তিন তালাকে শাস্তির আইনের বিরোধিতা করতে হলে, তা সংসদে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে করতে হবে।

পাল্টা কৌশল হিসেবে বিরোধীরা অন্য বিষয়ে হট্টগোল করেও সংসদ অচল করে দিতে পারে। বিশেষ করে বিজেপি-শাসিত মহারাষ্ট্রে দলিতদের উপরে হামলা, জাতি-সংঘর্ষের মতো টাটকা ঘটনাই পেয়ে গিয়েছে বিরোধীরা। পুণে থেকে অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে মুম্বইয়ের মফস্‌সলেও। রাহুল গাঁধী আজ দলিতদের উপরে হামলার জন্য বিজেপি-সঙ্ঘের ‘ফ্যাসিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি’-র সমালোচনা করেছেন।

Advertisement

রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডুর সঙ্গে বৈঠকে আজ কংগ্রেস, সিপিএম, সিপিআই, ডিএমকে, সপা, এডিএমকে নেতারা বৈঠক করে বিলটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি তোলেন। সূত্রের খবর, সরকারের তরফে অরুণ জেটলি ও বিজয় গয়াল স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তার জন্য বিরোধীদের রাজ্যসভায় প্রস্তাব এনে, সরকারকে ভোটাভুটিতে হারাতে হবে।

তাৎপর্যপূর্ণ হল, কংগ্রেস প্রকাশ্যে তাৎক্ষণিক তালাকে শাস্তির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিতে নারাজ। কংগ্রেস লোকসভায় বিলে আপত্তি তুললেও তা আটকানোর চেষ্টা করেনি। রাহুলের তেমনটাই নির্দেশ ছিল। তৃণমূলও এ বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিচ্ছে না। লোকসভায় তৃণমূল আলোচনাতেও অংশ নেয়নি। সংশোধনী, ভোটাভুটি দূরের কথা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় ডেরেক ও’ব্রায়েনকে জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যসভাতেও একই ভাবে তাৎক্ষণিক তালাকের বিতর্ক থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এখানেই বিরোধীদের বিপাকে ফেলতে চাইছে সরকার।

বিজেপির এক সাংসদ কটাক্ষ ছুড়েছেন, ‘‘রাহুল গাঁধীকে এ বার ঠিক করতে হবে, তিনি মুসলিম তোষণ ছাড়বেন, নাকি পৈতে!’’ আর সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী অনন্ত কুমার বলেন, ‘‘আমরা কংগ্রেস ও বিরোধী নেতাদের বলছি, তাঁরা লোকসভায় যেমন বিলে কোনও সংশোধনী চাননি, তেমনই রাজ্যসভাতেও বিলে আপত্তি না তুলে পাশ করিয়ে দিন।’’ কংগ্রেসের বক্তব্য, তাঁরা বিলের বিরুদ্ধে নন। তবে এটিকে আরও শক্তপোক্ত করতে চান। তালাক দেওয়ার জন্য স্বামীকে জেলে পাঠালে পারিবারিক ও সামাজিক বিবাদ বাড়বে। বিবাহ বিচ্ছেদের মতো সামাজিক ঘটনাকে এখানে ফৌজদারি অপরাধ গণ্য করে তিন বছর জেলের নিদান দেওয়া হচ্ছে। অনেক গুরুতর অপরাধেও এত শাস্তি হয় না।

কংগ্রেসের সমস্যা হল, তালাক বিলের বিরোধিতা করলে মুসলিমদের একাংশের ভোট হারানোর ভয় থাকে। কিন্তু মোদীর হারানোর কিছু নেই। বরং মুসলিমের একাংশের ভোটও ঝুলিতে আসতে পারে। সেই অঙ্কেই বিলটি নিয়ে পিছু হঠতে চাইছে না বিজেপি। বিরোধীরা বিল পাশে বিরোধিতা করলেও তাকে অস্ত্র করবে বিজেপি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement