মফিজুল কি পেল লটারি, সংশয়ে লক্ষ্মীপুর

হাওয়ায় ছড়িয়েছে, তিনি ৫০ টাকা দিয়ে লটারির টিকিট কেটে জিতেছেন কোটি টাকার প্রথম পুরস্কার। আর সেই খবরে মালদহের অজ গ্রামে তাঁর অতি দরিদ্র বাড়ির সামনে এসে ভিড় জমিয়েছেন পড়শিরা।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

লক্ষ্মীপুর (মালদহ) শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৬ ০৩:২৮
Share:

দুই মফিজুল। বাঁ দিকের ছবিটি সংবাদ সংস্থা-প্রকাশিত। ডান দিকেরটি মুম্বই থেকে পাঠিয়েছেন খোদ মফিজুল।

হাওয়ায় ছড়িয়েছে, তিনি ৫০ টাকা দিয়ে লটারির টিকিট কেটে জিতেছেন কোটি টাকার প্রথম পুরস্কার। আর সেই খবরে মালদহের অজ গ্রামে তাঁর অতি দরিদ্র বাড়ির সামনে এসে ভিড় জমিয়েছেন পড়শিরা। যাঁদের মুখে মুখে ফিরছে এখন হরেক আব্দার। কেউ বলছেন, মিষ্টি খাওয়াও। কেউ বলছেন, খাসি আনো, ভোজ লাগাও! কিন্তু সদ্য ‘কোটিপতি’ যুবকটি বলছেন, তিনি না, এই লটারি জিতেছে অন্য লোক!

Advertisement

নাম, মফিজুল রহমান শেখ। সাকিন, মালদহ জেলার কালিয়াচক ২ ব্লকের গ্রাম পঞ্চায়েত লক্ষ্মীপুরের এক অখ্যাত গ্রাম জহরদি টোলা। সাধারণ দিনমজুরের পরিবার। বাবা মারা গিয়েছেন কিছু দিন আগে। তাই তিন ভাইয়ের সব থেকে ছোট মফিজুলকেও একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তার পরে সে সব ছেড়ে তাঁকে নামতে হয়েছে রোজগারের চেষ্টায়। বুধবার সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানায়, রাজমিস্ত্রির কাজে সুদূর কেরলে গিয়েছেন ২২ বছরের এই যুবক। এবং সেখানে গিয়েই জিতে ফেলেছেন কোটি টাকার পুরস্কার। সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী, কেরলের কোঝিকোড় শহরের কাছে ভেল্লিমাডুকুন্নুতে রয়েছেন মফিজুল। সেখানে পৌঁছেই তিনি ৫০ টাকা দিয়ে লটারির টিকিট-টি কাটেন। পরদিনই আসে প্রথম পুরস্কার জয়ের খবর। এখানেই শেষ নয়। সংবাদ সংস্থার আরও জানায়, এর পরে মফিজুলের ভয়ের চোটে সোজা চলে যান স্থানীয় চেভায়ুর থানায়। সব শুনে পুলিশ মফিজুলকে স্থানীয় ব্যাঙ্কে নিয়ে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে দেয়। তাদের পাশে নিয়ে টিকিটটি হাতে ছবিও তোলেন মফিজুল। সেখানেই দেখা যায়, মুখ শুকিয়ে গিয়েছে তাঁর।

উত্তর লক্ষ্মীপুরের বাতাসে এই লক্ষ্মীলাভের খবর ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। আর তাতেই পড়শিদের অত্যুৎসাহে যেন ঘি পড়ে। চাটাই ও টালির ছাউনি দেওয়া ঘরে তিনটি ঘরে থাকে পুরো পরিবার। তার পাশে মাটির গাঁথনি দিয়ে ঘর তৈরি করেছেন মফিজুলের দুই দাদা তৌফিজুল ও হাফিজুল। তাঁরাও ভিন রাজ্যের চাকরি করেন। বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, সামনে বসে ওঁদের বৃদ্ধা মা রুমেলা বেওয়া। আর তাঁকে ঘিরে রজরত আলি, মহবুল হোসেন, আসগর আলিরা। সকলের মুখেই কিছু না কিছু আব্দার। বলছেন, এখন মানুষ আমাদের কোটিপতি পাড়ার বাসিন্দা বলছে। আর এমন দিনে মিষ্টি খাব না!

Advertisement

মায়ের মুখে কিন্তু উদ্বেগের ছাপ। বললেন, ‘‘টাকা পেয়েছে কি না সেটাই আগে দেখুন!’’ কী ব্যাপার? বৃদ্ধা বললেন, ‘‘ছেলে আমাকে বলেছে, সে কোনও টাকা পায়নি।’’

ফোন করতেই ও পারে রীতিমতো আর্তনাদ করে উঠলেন মফিজুল। বললেন, ‘‘কোনও লটারির টিকিট কাটিনি। টাকা পাব কোথা থেকে!’’ কিন্তু সকলেই যে বলছে? মফিজুল বললেন, ‘‘কী ভাবে এই গুজব ছড়াল, বুঝতে পারছি না। বাড়ির লোক থেকে শুরু করে পাড়ার বন্ধুরা, সকলেই বারবার ফোন করছে। আরে, টাকা পেয়ে তো বাড়িতেই আগে বলব!’’

আপনি কবে কেরলে পৌঁছলেন— প্রশ্ন করতেই মফিজুল বলে উঠলেন, ‘‘আমি তো কেরলে আসিনি। মুম্বইয়ে রয়েছি।’’ যে ফুড মার্কেটে কাজ করছেন, বললেন তার নামও। পরিবারের দাবি, ওই মার্কেটে কুলির কাজ করেন মফিজুল। গত জানুয়ারি মাসে গিয়েছেন সেখানে। কিন্তু খবরে যে বলছে, কেরলের কোঝিকোড়ে রয়েছেন আপনি? মফিজুলের জবাব, ‘‘তবেই বুঝুন!’’

পড়শিদের কেউ কেউ অবশ্য এখনও বলছেন, ও-ই টাকা পেয়েছে। ভয়ের চোটে চেপে যাচ্ছে। কিন্তু ছবি বলছে অন্য কথা। সংবাদ সংস্থার ছবির সঙ্গে মিলছে না মফিজুলের পাঠানো নিজের ছবি।

এমন রহস্যের শেষ কোথায়, এখনও জানে না কেউ। শুধু প্রায় সকলের অলক্ষে বৃদ্ধা মায়ের দীর্ঘশ্বাস শোনা যায়, ‘‘আল্লার দয়ায় ছেলেটা টাকা পেলে শেষ বয়সে একটি ভাল করে বাঁচতে পারব!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন