সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধারে নতুন দিশা দেখাচ্ছেন এই বঙ্গতনয়া

বহতা অংশুমালি মুখোপাধ্যায় পেশায় ওয়েব ডেভেলপার। সিন্ধু-গবেষণার কাজে তাঁকে উৎসাহ ও সহায়তা জুগিয়েছেন প্রসিদ্ধ গণিতবিদ, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রণজয় অধিকারী, প্রয়াত গবেষক ইরাভথম মহাদেবন এবং বহতার বাবা অধ্যাপক অমর্ত্য মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯ ০২:৩৯
Share:

বহতা অংশুমালি মুখোপাধ্যায়

প্রায় সাড়ে চার হাজার বছরের পুরনো সিন্ধুলিপির পুঞ্জীভূত অন্ধকারে আলো পড়তে শুরু করল। কিছুটা অলক্ষে, কিন্তু তুমুল পরিশ্রমে সেই আলো ফেলার কাজটি করছেন এক বঙ্গতনয়া। সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধার নিয়ে তাঁর দীর্ঘ নিবন্ধ ‘নেচার’ ব্র্যান্ডের পত্রিকা ‘প্যালগ্রেভ কমিউনিকেশন্স’-এ প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে।

Advertisement

বহতা অংশুমালি মুখোপাধ্যায় পেশায় ওয়েব ডেভেলপার। সিন্ধু-গবেষণার কাজে তাঁকে উৎসাহ ও সহায়তা জুগিয়েছেন প্রসিদ্ধ গণিতবিদ, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রণজয় অধিকারী, প্রয়াত গবেষক ইরাভথম মহাদেবন এবং বহতার বাবা অধ্যাপক অমর্ত্য মুখোপাধ্যায়। বেঙ্গালুরু নিবাসী বহতা জানাচ্ছে‌ন, তাঁর প্রথম কাজটি ছিল পাঠোদ্ধারের পদ্ধতি নির্ধারণ। তাঁর কথায়, ‘‘সিন্ধুলিপির বহু রকমের পাঠপ্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশই একে অন্যের নিয়ম মানে না। অন্যকে খণ্ডনও করে না। আমি এর মধ্যে দাঁড়িয়ে গাণিতিক প্রমাণের মতোই অকাট্য একটি পদ্ধতি আবিষ্কারের চেষ্টা করেছি চিহ্নগুলির বর্গবিভাজনের মাধ্যমে।’’

কী ভাবে বর্গবিভাজন করা হল? গবেষণায় জানা যাচ্ছে, সিন্ধুলিপির বার্তাগুলির অধিকাংশই শব্দচিত্র বা লোগোসেন্ট্রিক পদ্ধতিতে লেখা। বহতা জানাচ্ছেন, ‘‘আমার কাজের প্রাথমিক পদ্ধতি ছিল এই শব্দচিত্রগুলির ধ্বনিরূপ আগেভাগে বের করতে না চেয়ে, তারা কী ভাবে একে অন্যের সঙ্গে বসছে, কোন নিয়ম বা সূত্র মানছে, তাদের আকার আকৃতি কেমন, কী ধরনের বস্তুসামগ্রীতে তা খোদাই হয়েছিল, সেই বস্তুসামগ্রীগুলি কোন জায়গায় এবং কোন প্রাচীন বস্তুর কাছে পাওয়া গিয়েছিল তা খতিয়ে দেখা।’’

Advertisement

সংসদ বাংলা অভিধানের সম্পাদক এবং ভাষাতত্ত্ব বিশারদ সুভাষ ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘১৯২২ সালে সিন্ধুসভ্যতার নিদর্শন আমাদের সামনে আসে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বহতার কাজ ইতিমধ্যেই সমাদৃত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অনেক গবেষক প্রশংসা করছেন। দু’রকম ভাবে ও শব্দচিত্রের ব্যাখ্যা করেছে। একক ভাবে একটি শব্দচিত্রটির একটি মানে, আবার অন্যের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে যখন তা বাক্য হচ্ছে তার অর্থ ব্যবহার হয়ে দাঁড়াচ্ছে অন্য রকম।’’ যেমন বহতার মতে, ‘‘শব্দচিত্রলিপিতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রেবাস প্রিন্সিপল ব্যবহৃত হত। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, একাক্ষরী একটি শব্দ ‘মা’ বোঝাতে শিশু কোলে মায়ের ছবি দেওয়া হল। আবার ‘খা’ বোঝাতে একটি মানুষের খাওয়ার ছবি দেওয়া হল। দু’টি শব্দচিত্রই তাদের অন্তর্নিহিত অর্থকে সুচারু ভাবে ফুটিয়ে তুলল। এই বার যদি ‘মাখা’ লিখতে হয়, তা হলে তার জন্য নতুন শব্দচিত্র উদ্ভাবন না করে, মা এবং খা-এর জন্য ব্যবহৃত দুটি শব্দচিত্রকে পাশাপাশি বন্ধনী দিয়ে জুড়ে দেওয়া হল।’’

এই পদ্ধতিতেই এগোচ্ছে বহতার গবেষণা। নিজস্ব চিত্র

বহতার দাবি, সিন্ধুলিপি-উৎকীর্ণ সিলমোহর ও ফলকগুলি প্রায় দশ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সভ্যতার জনপদগুলিতে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং নানা উৎপাদন সামগ্রীর বণ্টনব্যবস্থায় প্রামাণ্যতার সূচক হিসেবে ব্যবহার হত। কাজে লাগত প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডেও। এখনকার সিলমোহর, মুদ্রা, টোকেন ইত্যাদিতে যেমন নানান তথ্য ভরে দেওয়া থাকে, সিন্ধু সিলমোহর আর ফলকগুলিতেও লেখা থাকত জরুরি তথ্য। পাঠোদ্ধারের পদ্ধতি ঠিক করার পরের ধাপে বহতা এ বার সে লিপির প্রত্যক্ষ পাঠোদ্ধারও করতে পারবেন বলে আশা করছেন। ‘‘ওর দ্বিতীয় নিবন্ধের জন্য অপেক্ষা করছি’’, বললেন সুভাষবাবু। অপেক্ষায় রয়েছেন সিন্ধু-প্রেমী তামাম গবেষকরাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন