দরজায় কড়া নেড়ে প্রচার শুরু নীতীশের

সকাল থেকেই তৈরি হয়ে বসেছিলেন কৃষ্ণপ্রসাদ সাহু। অন্য দিন সদর দরজা খোলাই থাকে। আজ তাঁর প্রতীক্ষাতেই দরজা বন্ধ! তেমনই নির্দেশ। তিনি আসবেন, দরজা খট-খটাবেন। তবেই তো খুলবে দরজা। শেষ পর্যন্ত তিনি এলেন, খুলল কৃষ্ণপ্রসাদের দরজাও!

Advertisement

দিবাকর রায়

পটনা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৫ ০৩:১৩
Share:

ভোটার বাড়ি আছ! জনসংযোগ বাড়াতে দরজায় নীতীশ। পটনা সিটির বেলোয়ার গলি এলাকায় বৃহস্পতিবারের ছবি। ছবি: শ্যামলী দে।

সকাল থেকেই তৈরি হয়ে বসেছিলেন কৃষ্ণপ্রসাদ সাহু। অন্য দিন সদর দরজা খোলাই থাকে। আজ তাঁর প্রতীক্ষাতেই দরজা বন্ধ! তেমনই নির্দেশ। তিনি আসবেন, দরজা খট-খটাবেন। তবেই তো খুলবে দরজা। শেষ পর্যন্ত তিনি এলেন, খুলল কৃষ্ণপ্রসাদের দরজাও!

Advertisement

দিনের আলো ফুটতেই সাজসাজ রব গোটা এলাকা জুড়ে। আষাঢ় মাসের বৃষ্টিতে কাদাজল মিলেমিশে একাকার। মাইকে গান বাজছে ‘বিহার মে বাহার হো...নীতীশ কুমার আ রহে হো।’ গত কালই প্রচারের এই ‘থিম সং’ রিলিজ করেছে জনতা দল (ইউনাইটেড)। পুলিশ-নেতা-সাংবাদিকদের ভিড়ে গোটা পাড়াটা গিজগিজ করছে। পটনা শহরের এই এলাকা অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। উন্নয়ন সে ভাবে চোখে পড়ে না। গরিব-নিম্নবিত্ত মানুষের বাস। এ হেন এলাকাকেই নিজের ‘হাইটেক’ প্রচার শুরুর কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন নীতীশ কুমার।

গত মাসেই পটনা সিটির পশ্চিম দরজা এলাকার বাসিন্দা কৃষ্ণপ্রসাদ যোগ দিয়েছেন জেডিইউয়ে। স্বাভাবিক ভাবে তাঁর উৎসাহ একটু বেশিই। নতুন পোশাক নিজে পরেছেন। বাড়ির লোকেদের পরিয়েছেন। ব্যস্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁর বাড়ি থেকেই তো বিধানসভার জয়যাত্রা শুরু হবে। তাঁর বাড়ির কাছে বিখ্যাত পটনদেবীর মন্দির। প্রচার শুরুর আগে সেই মন্দিরে পুজো দেন নীতীশ কুমার। সেখান থেকে বেরিয়ে সোজা স্থানীয় দলীয় দফতরে। তারপরে কৃষ্ণপ্রসাদের বাড়ি। মুখ্যমন্ত্রীকে সামনে পেয়ে গদগদ তিনি। নীতীশ তাঁর কাছে জানতে চান সরকারের কাজ নিয়ে কোনও অভিযোগ রয়েছে কিনা। সজোরে মাথা নেড়ে জানিয়ে দেন, কোনও অভিযোগ নেই তাঁর। সেখানে মিনিট পাঁচেক কাটিয়ে পাশের বাড়ির দিকে রওনা দেন নীতীশ।

Advertisement

প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে গোটা এলাকার ৩০টি বাড়িতে ‘নক’ করলেন নীতীশ কুমার। বৃষ্টি আর ঘামে রীতিমতো সাধারণ সংগঠকের চেহারায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। চোখের পরিচিত সেই চশমা আপাতত নেই। মাসখানেক আগে চোখের অস্ত্রোপচার হয়েছে। তাই সাবধানী ছিলেন তাঁর নিরাপত্তা কর্মীরা। বেলোয়ার বাগিচা, বেলোয়ার গলির পরে নীতীশ হাজির হন হরিজন টোলিতে। তাঁকে কাছে পেয়ে ক্ষোভ উগরে দেন বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। লাগেনি বিদ্যুতের খুঁটিও। এ বার কল্পতরু নীতীশ। বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সঙ্গে থাকা আপ্ত সহায়ককে নির্দেশ দিলেন। প্রচারের কাজ সেরে কাছেই শিবচকের মেহেদিগঞ্জ এলাকায় গেলেন। ছোটখাটো একটা সভাও করে ফেললেন। নীতীশকে ঘিরে কয়েকশো নেতা-কর্মীর ভিড় জমে গেল। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘বিহারে এখন আইনের শাসন রয়েছে। উন্নয়নের কাজও চলেছে। কোনও হুমকি দিয়ে তা বন্ধ করা যাবে না। যাঁরা পরিবর্তন চাইছেন তাঁরা ঠিক কী চাইছেন সেটা স্পষ্ট করে বলতে হবে। আমরা মানুষের ভেদাভেদ করতে চাই না।’’

লোকসভা নির্বাচনের সময়ে নরেন্দ্র মোদীর প্রচার পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর। সেই প্রশান্ত কিশোরই ‘ব্র্যান্ড নীতীশ’কে বিহারে তুলে ধরতে কাজ করে চলেছেন। তবে প্রচারের প্রথম দিকে কিছুটা ধাক্কাই খেয়েছেন প্রশান্ত। ‘পর্চা পে চর্চা’ দিয়ে প্রচার শুরু করা হয়েছিল। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে তা ‘ফ্লপ’ করেছে। দ্বিতীয় দফায় শুরু হয়েছে ‘ঘর ঘর দস্তক’। মোট কথায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার। জেডিইউয়ের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক নবীন কুমার আর্য বলেন, ‘‘আজ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত এবং ২১ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত, দু’দফায় এই প্রচার চলবে। সারা রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন নেতা-কর্মী তিন ঘন্টায় ৩০ লক্ষ বাড়িতে পৌঁছবেন। এটাই এই প্রচারের লক্ষ্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন