ঝুলিতে বিহার-হার, কাল লন্ডনে মোদী

বিহার বিপর্যয়ের ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই লন্ডনে পাড়ি দিতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী। দীর্ঘদিন বিহারের রাজনৈতিক প্রচারের প্রধান তারকা ছিলেন তিনি। হেরে যাওয়ার পরে সেই পোশাকটি ছেড়ে ফের রাষ্ট্রনেতার পোশাকে মোদী। রাজনৈতিক শিবিরের প্রশ্ন, এই পর্বান্তর তাঁর কাছে কতটা মসৃণ?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৫ ০২:৫৮
Share:

বিহার বিপর্যয়ের ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই লন্ডনে পাড়ি দিতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

দীর্ঘদিন বিহারের রাজনৈতিক প্রচারের প্রধান তারকা ছিলেন তিনি। হেরে যাওয়ার পরে সেই পোশাকটি ছেড়ে ফের রাষ্ট্রনেতার পোশাকে মোদী। রাজনৈতিক শিবিরের প্রশ্ন, এই পর্বান্তর তাঁর কাছে কতটা মসৃণ? বিহারের পরাজয়ের গ্লানি কি তাঁকে লন্ডনেও পিছু করবে না? ১২ তারিখ শুরু হচ্ছে মোদীর এই সফর। সেটি অনেক আগে থেকেই স্থির ছিল। কিন্তু আজ যদি বিহার জয় করে তিনি লন্ডন যেতেন, তাতে সফরটি অন্য মাত্রা পেত বলে অনেকেই মনে করছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রের অবশ্য দাবি, মোদীর আসন্ন ব্রিটেন সফর কিন্তু ঠিক সেই উচ্চতাই পেতে চলেছে, যা পরিকল্পিত ছিল। আজ বিদেশসচিব জয়শঙ্কর সাংবাদিক সম্মেলন করে এবং খোদ মোদী বিবৃতি দিয়ে তাঁর সফরের সবিস্তার রূপরেখা তুলে ধরেছেন। বরাবরই মোদী তাঁর বিদেশ সফরকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে যান— বৈভবে, প্যাকেজে, আড়ম্বরে, বিনিয়োগ টানার আবেদনে। তা নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষও কম থাকে না।

Advertisement

এ বারও মোদীর সফরে কোনও খামতি নেই। ঐতিহাসিক ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে তাঁর অনুষ্ঠানে ভারতীয় বংশোদ্ভুতদের ভিড় সমস্ত রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে, বলছেন বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা। বাকিংহাম প্যালেসে ব্রিটেনের রানির সঙ্গে একান্ত মধ্যাহ্নভোজ সারবেন তিনি। সে দেশের সংসদে বক্তৃতাও দেবেন, যা এর আগে কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী দেননি। মোদীর কথায়, ‘‘আমি নিশ্চিত, এই সফরটি ভারত-ব্রিটেনের সম্পর্ককে আরও গভীর করবে। আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু’দেশের সমন্বয় অনেক বাড়াব।’’

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং বিভিন্ন বক্তৃতামঞ্চে ভারতীয় বাজারকে তুলে ধরার পাশাপাশি এই সফরে রাজনৈতিক বার্তাও দিতে চান মোদী। ব্রিটেনের সঙ্গে বাণিজ্য,
প্রযুক্তি ও পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন বৈঠকের পাশাপাশি তিনি বাবাসাহেব অম্বেডকরের ব্যবহার করা ভবনটি পরিদর্শনে যাবেন। তাঁর কথায়, ‘‘বাবাসাহেব অম্বেডকর লন্ডনে থেকেছেন, কাজ এবং পড়াশোনা করেছেন। লন্ডন প্রবাসের সময় যে বাড়িতে তিনি থাকতেন সেটি দেখতে যাব। বিষয়টি আনন্দ এবং গর্বের।’’

ব্রিটেন সফরে গিয়ে অম্বেডকরের বাসস্থান দর্শন করে দেশের দলিত সম্প্রদায়কেই কি কোনও বার্তা দিতে চাইছেন মোদী? বিহারের পরাজয়ের পরে অম্বেডকর কি তাঁর পরবর্তী অস্ত্র? এই প্রশ্নের কোনও উত্তর না দিয়ে বিদেশসচিব শুধু বলেছেন, ‘‘অম্বেডকর এখানে ১৯২১-২২—দু’টি বছর কাটিয়েছেন। মহারাষ্ট্র সরকার বাড়িটি অধিগ্রহণ করেছে। খুবই ছোট দু’টি ঘর, এখন জরাজীর্ণ। মেরামতির কাজ চলছে। তাই ওখানে বড় অনুষ্ঠান হবে না। ওঁর ব্যবহার করা জিনিস দেখবেন প্রধানমন্ত্রী।’’

সাধারণত মোদীর বিদেশনীতির পরতে পরতে মিশে থাকে অর্থনীতি। এ বারও তাই। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘লন্ডনে গোলটেবিল বৈঠকে বিভিন্ন সংস্থার সিইও-দের সঙ্গে দেখা হবে।
এই ধরনের আলোচনায় আমি সর্বদাই উৎসাহিত বোধ করি। এখানে খোলামেলা কথা হয়, লগ্নিকারীদের মতামত সরাসরি জানা যায়।’’ মোদী আরও জানান, ‘‘ওখানকার ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের কাছে আমার বার্তা— আসুন, দেখুন ভারত আপনাদের জন্য কী সুযোগ তৈরি করেছে। আরও বেশি করে ভারতে বিনিয়োগ করুন।’’ টাটার জাগুয়ার ল্যান্ডরোভার তৈরির কারখানাটিও পরিদর্শনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। বিদেশসচিবের কথায়, ‘‘এই বার্তাই ব্রিটেনকে দিতে চাওয়া হচ্ছে যে আমরা শুধুমাত্র তোমাদের কাজ কেড়ে নিচ্ছি না। কাজ দিচ্ছিও।’’ প্রসঙ্গত এই সংস্থাটি সে দেশের বৃহত্তম বেসরকারি কারখানাও বটে।

এই সফরটিকে ফলাফলমুখীন করতে চাইছেন মোদী। গোটা দেশে অসহিষ্ণুতা-বিতর্ক চলছে। সামনেই সংসদের শীতকালীন অধিবেশন, কিন্তু সেটিও চলার সম্ভাবনা খুব কম। এরই মধ্যে বিহারের পরাজয়ের ধাক্কা। এই অবস্থায়, লন্ডন থেকে হাত ভর্তি করে ফেরাটা মোদীকে চাপ কাটিয়ে উঠতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে বলে মনে করে সাউথ ব্লক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন