ছেলের এক কোটি টাকা মাইনে! শুনে বাক্‌রুদ্ধ ঝালাই মিস্ত্রি বাবা

এক কোটি টাকা! ছেলের মুখে তার নতুন চাকরির মাইনের কথা শুনে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি বাবা। কিছু ক্ষণ কোনও কথা বলতে পারেননি তিনি। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন ছেলের মুখের দিকে। ভেজা চোখে ফের জিজ্ঞেস করেন, ‘কত?’ ছেলে বাবাকে জানায়, ‘এক কোটি দু’লাখ।’ এ বার ছেলে বাত্সল্যকে বুকে জড়িয়ে ধরেন বাবা চন্দ্রকান্ত সিংহ চৌহান।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১৪:১৪
Share:

বাত্সল্য সিংহ চৌহান

এক কোটি টাকা!

Advertisement

ছেলের মুখে তার নতুন চাকরির মাইনের কথা শুনে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি বাবা। কিছু ক্ষণ কোনও কথা বলতে পারেননি তিনি। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন ছেলের মুখের দিকে। ভেজা চোখে ফের জিজ্ঞেস করেন, ‘কত?’ ছেলে বাবাকে জানায়, ‘এক কোটি দু’লাখ।’ এ বার ছেলে বাত্সল্যকে বুকে জড়িয়ে ধরেন বাবা চন্দ্রকান্ত সিংহ চৌহান।

বিহারের খাগারিয়ার চন্দ্রকান্ত সিংহ পেশায় ঝালাই মিস্ত্রি। আর ছেলে বাত্সল্য সম্প্রতি মাইক্রোসফটে চাকরি পেয়েছেন। গত ডিসেম্বরে খড়্গপুরেই ক্যাম্পাসিং হয়। তার পরে পাঁচ দফার পরীক্ষা শেষে তাঁকে মনোনীত করে বিশ্বের অন্যতম তথ্যপ্রযুক্তি ওই সংস্থা। আইআইটি খড়্গপুরের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র ২১ বছরের বাত্সল্য জানিয়েছেন, মাইক্রোসফটের পরীক্ষা মোটেও সহজ ছিল না। পাঁচ ধাপ পেরোনোর পর তাঁকে যখন নিশ্চিত করেন মাইক্রোসফট কর্তৃপক্ষ, প্রথমে তিনি বিশ্বাস করতে পারেননি। ঠিক যেমনটা অবাক হয়েছেন তাঁর বাবাও। বাত্সল্যের কথায়, ‘‘ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে বাবার আমাকে পড়ানোটা সার্থক হল।’’

Advertisement

ছোটবেলা থেকেই বাত্সল্য পড়াশোনায় বেশ ভাল। বিহার বোর্ডের অধীনে স্থানীয় একটি স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন তিনি। মাধ্যমিকে ভাল রেজাল্ট করার কারণে সরকারি বৃত্তিও মিলেছিল। মূলত বৃত্তি-নির্ভরই ছিল তাঁর পড়াশোনা। তবে, এ সবের বাইরেও পড়াশোনার ক্ষেত্রে যখন যে রকম টাকা-পয়সা প্রয়োজন পড়েছে, চন্দ্রকান্ত তা বিভিন্ন ভাবে জোগাড় করেছেন। ছেলেকে বুঝতেও দেননি। তাঁর কথায়, ‘‘বাবা সব সময় বলে, জীবনে উন্নতি করতে হবে। তবে, মাধ্যমিকের সময়ে আমি জানতামও না আইআইটি-টা ঠিক কী!’’

আরও খবর
গুগলে এ বার ২ কোটির চাকরি খড়্গপুর আইআইটির পড়ুয়ার

২০০৯-এ আইআইটি এন্ট্রান্স দিয়েছিলেন বাত্সল্য। কিন্তু, ফল ভীষণ খারাপ হয়। এর পর লোন করে ছেলেকে রাজস্থানের কোটায় একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি করেন চন্দ্রকান্ত। তার পর খড়্গপুর আইআইটিতে পড়াশোনা। চন্দ্রকান্তের কথায়, ‘‘জানেন, কোটা থেকে ছেলের বাড়িতে আসার ট্রেনের টিকিটের টাকাটা শুধু জোগাতে পারতাম। ওখানে ওর থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা কোচিং সেন্টারের তিন শিক্ষক করে দিয়েছিলেন। আমরা কোটায় গেলে যে সমস্ত খাবার ওঁরা আমাদের খাওয়াতেন, তা কোনও দিন বাড়িতে খাইনি। আসলে ওঁরা প্রথমেই বাত্সল্যের প্রতিভাটা বুঝতে পেরেছিলেন।’’

বাত্সল্য ছাড়াও আরও পাঁচ সন্তান রয়েছে চন্দ্রকান্তের। তাদের কেউই এখনও প্রতিষ্ঠিত নয়। সকলেই পড়াশোনা করছে। ঝালাই মিস্ত্রি বাবা তাদেরকেও বাত্সল্যের জায়গায় পৌঁছে দিতে বদ্ধ পরিকর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন