‘মাশরুম লেডি’ বীণা দেবী। ছবি: সংগৃহীত।
এমনও দিন গিয়েছে যে, দু’বেলা খাবার জোটাতে, সন্তানদের মুখে অন্ন তুলে দিতে হিমশিম খেতে হত। ছিল না মাথা গোঁজার পাকাপাকি ব্যবস্থা। সেই মহিলাই এখন ৭০ হাজার গ্রামীণ মহিলার রুজি-রুটির পথ দেখাচ্ছেন। গোটা দেশে তিনি ‘মাশরুম লেডি’ হিসাবে পরিচিত। এখন তিনি গ্রামীণ মহিলাদের নতুন করে বেঁচে থাকার পথ দেখাচ্ছেন। স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন।
তিনি বীণা দেবী। গোটা দেশ তাঁকে ‘মাশরুম লেডি’ হিসাবেই বেশি চেনে। বিহারের মুঙ্গের জেলার বাসিন্দা। মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে একচিলতে ঘর। তা-ও আবার জীর্ণ। ছোট্ট ঘরে চার সন্তান নিয়ে বাস বীণার। দারিদ্র, দিনের পর দিন আধপেটা খেয়ে থাকার জ্বালা তাঁকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ দেখায়। মাশরুম চাষ শুরু করেন বীণা। না, নিজের কোনও জমি ছিল না তাঁর। তাই ছোট্ট ঘরেই চৌকির নীচে প্রথম প্রথম খুবই সামান্য মাশরুমের চাষ শুরু করেন। সেই পথচলা শুরু মুঙ্গেরের বীণার।
প্রথমে এক কেজি মাশরুমের বীজ আনেন। চৌকির নীচে খুব অল্প জায়গায় সেই চাষ শুরু করেন। কিন্তু কী ভাবে চাষ করতে হয়, সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা ছিল না তাঁর। ফলে প্রথম দিকে খুব সমস্যার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। কিন্তু থেমে থাকেননি তিনি। নিজেকে এ বিষয়ে শিক্ষিত করে তুলতে ভাগলপুরে যান। বিহার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় মাশরুম চাষ সংক্রান্ত নানা তথ্য সংগ্রহ করেন। তার পর সেই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করেন ঘরের ভিতরেই। আবারও ব্যর্থ হন। কিন্তু তাতেও দমেননি বীণা। বেশ কয়েক বারের চেষ্টায় অবশেষে সফল হন। সামান্য পরিমাণে চাষ করে মাশরুম বিক্রি করা শুরু করেন গ্রামবাসীদের কাছে। ক্রমে চাহিদা বাড়তে থাকায় মাশরুম চাষের পরিমাণ বাড়াতে শুরু করেন। স্থানীয় বাজারে ২০০-৩০০ টাকা প্রতি কেজি মাশরুম বিক্রি করা শুরু করেন। তার পর ধীরে ধীরে টাকা জমিয়ে একটি জমি কেনেন। সেখানেই পাকাপাকি ভাবে মাশরুম চাষ শুরু করেন বীণা। এখন তিনি নিজে বেশ সফল।
তবে তাঁর সাফল্য নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি বীণা। ১০০টিরও বেশি গ্রামের মহিলাদের মাশরুম চাষে অনুপ্রাণিত করেছেন। তাঁদের স্বনির্ভর হওয়ার পথ দেখাচ্ছেন। ৭০ হাজার গ্রামীণ মহিলার কাছে বীণা হয়ে উঠেছেন ত্রাতা। তিনি আর মুঙ্গেরের এক গ্রামের দরিদ্র মহিলা বীণা দেবী নন, এখন সারা দেশে তিনি ‘মাশরুম লেডি’ নামেই পরিচিত। বীণার কথায়, ‘‘মহিলারা আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হলেই তবে তাঁদের আত্মসম্মান বাড়বে।’’ আর সেই ধারণাই নীরবে গ্রামীণ মহিলাদের মধ্যে চারিয়ে দিচ্ছেন বীণা। ২০১৪ সালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর এই কাজের জন্য সম্মানিত করেন। তখনও তিনি ‘মাশরুম লেডি’ হয়ে ওঠেননি। ২০১৮ সালে ‘উইমেন ফার্মার অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। ২০১৯ সালে পেয়েছেন ‘কিসান অভিনব পুরস্কার’। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর ‘মন কী বাত’-এ বীণার ঘুরে দাঁড়ানোর কাহিনি শুনিয়েছেন।