শাহরুখকে দেখতে বডোদরা স্টেশনে ভিড়ের চাপে মৃত্যু, বিতর্কে বেলাইন ‘রইস’

চরিত্র নিয়ে বিতর্ক ছিল। বিতর্ক ছিল অভিনেত্রীকে ঘিরেও। এ বার ‘রইস’-এর প্রচারে নেমে বিতর্ক বাধিয়ে বসলেন খোদ শাহরুখ খান। আর সেই বিতর্কের আগুনে পাল্টা ঘি ঢাললেন বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ বিজয়বর্গীয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৭
Share:

মথুরা স্টেশনে শাহরুখ। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।

চরিত্র নিয়ে বিতর্ক ছিল। বিতর্ক ছিল অভিনেত্রীকে ঘিরেও। এ বার ‘রইস’-এর প্রচারে নেমে বিতর্ক বাধিয়ে বসলেন খোদ শাহরুখ খান। আর সেই বিতর্কের আগুনে পাল্টা ঘি ঢাললেন বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ বিজয়বর্গীয়।

Advertisement

গতকাল শাহরুখকে দেখার জন্য বডোদরা স্টেশনে প্রচণ্ড ভি়ড় হয়েছিল। সেই ভিড়ে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ফরিদ খান শেরানি নামে এক ব্যক্তি। তিনি ভাগ্নির সঙ্গে দেখা করতে স্টেশনে এসেছিলেন। ওই মহিলা এক জন সাংবাদিক এবং শাহরুখের সঙ্গে ট্রেনেই ছিলেন। ভিড় সামলাতে গিয়ে জখম হয়েছেন দুই পুলিশকর্মীও।

বিষয়টি জানাজানি হতেই এক বিবৃতি দিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছেন শাহরুখ। তাতে অবশ্য বিজেপিকে থামানো যায়নি। কৈলাশ বিজয়বর্গীয় আজ মন্তব্য করেন, ‘‘ভিড় দেখে কারও জনপ্রিয়তা বিচার করা উচিত নয়। আজ যদি দাউদ ইব্রাহিম রাস্তায় এসে দাঁড়ায়, তা হলে তাকে দেখতেও তো ভিড় জমে যাবে!’’

Advertisement

রইস-বিরোধী মন্তব্য অবশ্য কৈলাশের মুখে নতুন নয়। তিন দিন আগেই তিনি মোদী ও রাহুলের ছবি দিয়ে একটি টুইট করে বলেছিলেন, ‘‘যে রইস (ধনী) ব্যক্তি এই দেশেরই মানুষ নন, তাঁকে দিয়ে কারও কোনও কাজ হবে না। কিন্তু এক জন কাবিল (সমর্থ) দেশভক্তের পিছনে আমাদের সকলের দাঁড়ানো উচিত।’’ কৈলাশের টুইটের রাজনৈতিক ইঙ্গিত বুঝতে কারও অসুবিধে হয়নি। কিন্তু হিন্দু দেশভক্তির তাস খেলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি যে ভাবে রইস-এর নিন্দা করে কাবিল-এর পেছনে দাঁড়িয়েছিলেন, সেটাও কারও চোখ এড়ায়নি।

গত কয়েক দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চলছে যে, শাহরুখ অভিনীত এই ছবিটি দেশবাসীর বয়কট করা উচিত। কারণ, সিনেমাটির প্রধান চরিত্র গুজরাতের মদ ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ আসলে এক ঘোরতর সমাজবিরোধী। বিজেপির অভিযোগ, এই লতিফই পরে পাকিস্তানে গিয়ে দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে দেখা করে এবং বিভিন্ন ভারতবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়। কৈলাশের প্রশ্ন, এই ধরনের দেশবিরোধী চরিত্রকে এত মহিমান্বিত করে দেখানোর কি আদৌও কোনও প্রয়োজন আছে? তা ছাড়া, ছবির নায়িকা মাহিরা খান পাকিস্তানের বাসিন্দা। তাতেও বিজেপির আপত্তি রয়েছে। পাকিস্তানি অভিনেতাদের নিয়ে বিতর্কের সময়ে ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-এর অভিনেতা ফাওয়াদ খানের সঙ্গেই দেশ ছেড়েছিলেন মাহিরা। এবং পৃথিবীতে কোথাও তিনি রইস-এর হয়ে প্রচার করতে পারবেন না, এই শর্তে ছবিটি মুম্বইয়ে মুক্তির ‘ছাড়পত্র’ দিয়েছিল রাজ ঠাকরের মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা।

এই সব বিতর্ক তো ছিলই। তাতে নতুন ইন্ধন জুগিয়েছে গতকাল শাহরুখের মুম্বই-দিল্লি অগস্ট ক্রান্তি রাজধানী এক্সপ্রেসে চ়ড়ে প্রচার অভিযান। অভিযোগ উঠেছে, এ ভাবে ট্রেনে করে প্রচার করার জন্য নাকি অনুমতিই নেয়নি ‘টিম রইস’। রেলের পক্ষ থেকেও যে গাফিলতি হয়েছে, সেটা বুঝতে পেরে‌ এখন গোটা বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু।

প্রচারের জন্য হাতে সময় কম, তাই রাজধানী এক্সপ্রেসে মুম্বই থেকে দিল্লি সফর করে ছবির প্রচার সারবেন বলে ঠিক করেছিলেন শাহরুখ। সঙ্গে নিয়েছিলেন পরিচালক রাহুল ঢোলাকিয়া, সহ-অভিনেত্রী সানি লিওন-সহ নানা কলাকুশলীকে। কিন্তু তা করতে গিয়ে যে এ ভাবে বিশৃঙ্খলা, মৃত্যুর ঘটনা পর্যন্ত ঘটবে, তা ভাবতে পারেনি কোনও পক্ষই। আইনজীবী তথা সামাজিক বিষয় নিয়ে আন্দোলনকারী আভা সিংহ আজ সুরেশ প্রভুকে চিঠি লিখে জানতে চেয়েছেন, বডোদরার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কেন ততক্ষণাৎ প্রচারাভিযান বন্ধ করেনি রেল। রাতলাম, কোটা, মথুরা বা দিল্লির নিজামুদ্দিন— যাত্রাপথের প্রত্যেকটি স্টেশনেই ভিড় ছিল লাগামছাড়া। উপযুক্ত নিরাপত্তা না থাকায় যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারত বলে দাবি করেছেন ওই আইনজীবী।

তা যে সত্যিই হতে পারত, তা এখন বুঝতে পারছেন দিল্লির রেলকর্তারা। রেলভবনের এক শীর্ষ কর্তা মেয়েকে নিয়ে সকাল-সকাল পৌঁছে গিয়েছিলেন শাহরুখ দর্শনে। ভেবেছিলেন ফাঁকা দেখে মহাতারকার সঙ্গে নিজস্বী তুলবেন। ভিড়ের চাপে শাহরুখের কামরার মাইলখানেকের মধ্যেই পৌঁছতে পারেননি তিনি। সকালে নিজামুদ্দিন স্টেশনের প্রবল ভিড় দেখে আতঙ্কিত রেলকর্তারা চুপচাপ ভিআইপি গেট দিয়ে বার করে নিয়ে আসেন শাহরুখকে।

আরও অভিযোগ উঠেছে, শাহরুখকে দেখার চক্করে ভিড়ের ঠেলায় ট্রেন ধরতে পারেননি অনেকেই। ধাক্কাধাক্কিতে আহত হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। বিভিন্ন স্টেশন থেকে জমা হওয়া এই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখছে রেল মন্ত্রক। বডোদরা স্টেশনের বিশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে পশ্চিম রেলওয়ের বডোদরা ডিভিশনের রেল পুলিশ সুপার শরদ সিঙ্ঘল বলেন, ‘‘অনুমতি ছাড়াই ট্রেনে করে প্রচার চালানো হয়েছে, এই অভিযোগ সত্যি হলে কাউকে ছাড়া হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন