বঙ্গ জয়েই বিজেপি-র স্বর্ণযুগ আসবে: অমিত শাহ

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খাসতালুকে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ না করেই ফিরে এসেছিলেন রাজনাথ সিংহ। চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বুঝিয়ে দিলেন, সেটি আদৌ দলের অবস্থান নয়।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

ভুবনেশ্বর শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৪৭
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খাসতালুকে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ না করেই ফিরে এসেছিলেন রাজনাথ সিংহ। চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বুঝিয়ে দিলেন, সেটি আদৌ দলের অবস্থান নয়। আরও একধাপ এগিয়ে বিজেপি সভাপতি আজ বলেন, ‘‘বাংলা-সহ বাকি রাজ্যে যতক্ষণ না বিজেপি সরকার গড়ছে, ততক্ষণ দলের স্বর্ণযুগ আসবে না।’’

Advertisement

রাজনাথের সঙ্গে মমতার সখ্য নতুন নয়। তা সত্ত্বেও মমতার কেন্দ্রেই নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ তাঁকে পাঠিয়েছিলেন বিজেপির হয়ে প্রচারে। কিন্তু মমতাকে আক্রমণ তো দূরস্থান, বক্তৃতায় তাঁর নামই না তুলে নিজের দলের রাজ্য নেতাদের হতাশ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। উল্টে মমতার পাঠানো মিষ্টি নিয়ে বিমানে চেপে কলকাতা ছেড়েছেন। তাতে মুখ ভার হয়েছে রাজ্য নেতাদের। আজ সকালে বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকে বাংলার হয়ে রাহুল সিংহ বলেন, মমতা সরকার যে ভাবে রামনবমী, হনুমান জয়ন্তীতে হামলা করেছে, তার নিন্দা করতে হবে দলের রাজনৈতিক প্রস্তাবে। কাঁথি দক্ষিণ কেন্দ্রের জয়কেও তুলে ধরতে হবে।

এর পরেই অমিত শাহ বলেন, “যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ও সঙ্ঘের উপর হিংসা হচ্ছে, তার ঘোরতর নিন্দা করছি। মমতা সরকারকে মনে রাখতে হবে, বিজেপি কোনও হিংসায় ঘাবড়ায় না। ভয়ও পায় না। শান্তিপূর্ণ পথেই বিজেপি এর জবাব দেবে।” মমতার কেন্দ্রে রাজনাথের সফর নিয়ে রাজ্য বিজেপির যে তেমন আশা ছিল, এমন নয়। বরং তারা মুখিয়ে আছে এ মাসের শেষে রাজ্যে অমিত শাহের তিন দিনের সফর নিয়ে। তার আগে তাঁর আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ফের আশায় বুক বাঁধছে রাজ্য বিজেপি।

Advertisement

আরও পড়ুন: বিজেপির নতুন ডাক ‘বিরোধী-মুক্ত’ ভারত

বিজেপি সূত্রের খবর, রাতে অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ওড়িশার মতো রাজ্যে, যেখানে বিজেপি কোনও দিন সরকার গড়েনি, সেখানে তাঁর রোড-শোয়ের সাফল্য দেখে সন্তুষ্ট মোদী। তাঁর মতে, যদি ওড়িশায় এই সাড়া মেলে, পূর্ব ভারতের বাকি রাজ্যেও তা সম্ভব।

রাজনাথের বাংলা সফর প্রসঙ্গে বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতা অবশ্য জানান, রাজনাথ সিংহ মমতাকে আক্রমণ না করে তেমন ভুল করেননি। তিনি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বটে। কেন্দ্র-রাজ্য সমীকরণ মেনেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা তাঁর কাজ। আর দলের সভাপতি হিসেবে দলকে চাঙ্গা করা অমিত শাহের কাজ। সেই অর্থে দেখতে গেলে দুজনেই নিজ-নিজ কাজ করেছেন। বিজেপির আর একটি সূত্রের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর মত ছাড়া রাজনাথ মমতা সম্পর্কে নরম মনোভাব নিয়েছেন, এমনটা ভাবা ভুল। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীও সম্প্রতি মমতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু রাজ্য নেতাদের পাল্টা বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি যখন মমতার বিকল্প হয়ে উঠছে, সেই সময় একেবারে জমি ছেড়ে দেওয়া সঠিক পদক্ষেপ নয়।

এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, অতীতেও প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছিল, সারদা-নারদ নিয়ে তদন্তে জোর এলে রাজ্যে বিজেপি কর্মীদের জোর বাড়ে। বঙ্গে বামেরা শেষ হচ্ছে। কংগ্রেস কিছু এলাকায় ব্যক্তি নির্ভর হয়ে টিকে আছে। এই অবস্থায় মমতার সঙ্গে কোনও সখ্যের বার্তা বিজেপি কর্মীদের পক্ষে ভাল নয়। ওই নেতার বক্তব্য, মানুষ যখন ভরসা পাবে যে মমতার বিকল্প বিজেপি, তখনই তারা দলকে ভোট দেবে। সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে বামেদের ভোট কেটে বিজেপির বাক্সে পড়েছে। কিন্তু তাই বলে মমতার ভোট কমেনি। আগামী পঞ্চায়েত ভোটও মমতার দখলে থাকবে বলেই বুঝতে পারছেন নেতাদের অনেকে। অমিত শাহের কথা অনুযায়ী, পরের বিধানসভায় বাংলা দখল করতে হলে মমতার ভোটেও থাবা বসাতে হবে। কিন্তু শুধুই মেরুকরণের রাজনীতি করলে বেশি ফায়দা পাবেন মমতাই। তাই উন্নয়নের বিকল্প মডেলও তুলে ধরতে হবে।

এই রণকৌশল নিয়েই আজ একপ্রস্ত আলোচনাও হয় বৈঠকের ফাঁকে। স্থির হয়েছে, শীঘ্রই পশ্চিমবঙ্গের জন্য তৈরি হবে একটি ‘ভিশন ডকুমেন্ট’। কর্মসমিতির বৈঠকের পর রাজ্য সংগঠনেও বদল হতে পারে। এ দিন কর্মীদের উদ্দেশে অমিত শাহ বলেন, ‘‘তোষণের রাজনীতির বিরোধিতার পাশাপাশি মোদীর তিন বছরের উন্নয়নের প্রকল্পও পৌঁছে দিতে হবে তৃণমূল স্তরে।’’

বাংলায় বুথ স্তরে দলের সংগঠনকে শক্ত করতে এ মাসে পশ্চিমবঙ্গে যাচ্ছেন অমিত শাহ। দলীয় সূত্রের খবর, সেপ্টেম্বরেও রাজ্যে তিন দিন কাটাবেন। বাকি নেতাদের পাঠাচ্ছেন এমন জায়গায়, যেখানে সংগঠন দুর্বল। বিজেপি সভাপতি বলেন, ‘‘এত দিন ধারণা ছিল, বিজেপি শুধু কংগ্রেসকে হারাতে পারে, আঞ্চলিক দলকে নয়। উত্তরপ্রদেশে সেই মিথ ভেঙেছে। ফলে পশ্চিমবঙ্গেও তা সম্ভব।’’ বিজেপি নেতা ও মোদী সরকারের মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিই মমতার বিকল্প হয়ে উঠছে। আগামী দিনে সে রাজ্যে বিজেপিই সরকার গড়বে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন