প্রতীকী ছবি।
চার বছর আগে শিশু বিক্রির একটি খবরকে কেন্দ্র করে ত্রিপুরায় রাজনীতির লড়াই জমে উঠেছে। বিজেপি বিষয়টি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন। আর শাসক দল সিপিএমের মুখপাত্র গৌতম দাস বলেছেন— ‘‘যিনি নিজের সন্তান বিক্রি করেছিলেন, তিনি আসলে এক জন প্রতারক!’’
ত্রিপুরার খোয়াই জেলার তেলিয়ামুড়া মহকুমার মুঙ্গিয়াকামী ব্লকের উত্তর মহারানিপুরের বাসিন্দা কর্ণ দেববর্মা অভাবের তাড়নায় তার এক সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন— এই সংবাদকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার বিকাল থেকে আজ সারা দিন তোলপাড় হয়েছে। কর্ণ দেববর্মার ৭ সন্তান। তার মধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়। কর্ণের অভিযোগ, অভাবের তাড়নায় চার বছর আগে তিনি নিজের আট মাসের মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন।
জেলার সমাজ কল্যাণ দপ্তরের পরিদর্শক করুণ দেববর্মা জানিয়েছেন, কর্ণ টাকার বিনিময়ে তাঁর এক আত্মীয়াকে নিজের একটি মেয়েকে দিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি আজ ফোনে বলেন, ‘‘খবর আসার পরেই মুঙ্গিয়া ব্লকের সমাজ কল্যাণ সুপারভাইজারকে পাঠানো হয়েছিল কর্ণের বাড়িতে। কাকে তিনি শিশুটিকে দিয়েছেন, সেটা এখনও তিনি স্বীকার করতে চাইছেন না।’’ টাকা খুঁজতে তাঁরা পুলিশের সাহায্য নেবেন বলেও জানিয়েছেন করুণ দেববর্মা। কর্ণের বোন বাসন্তী দেববর্মা অবশ্য এ দিনই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জন্মের আট দিন পরে তিনিই মেয়েটিকে নিজের কাছে এনেছিলেন। বর্ষা নামের শিশুটি তাঁর কাছে থেকেই বড় হচ্ছে।
তেলিয়ামুড়া মহকুমার সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক শীর্ষেন্দু দেববর্মা জানিয়েছেন, ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কর্ণবাবু ৭টি সরকারী প্রকল্পে সাহায্য পেয়েছে। ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে তাঁর ঘর হয়েছে, এমজিএনরেগা প্রকল্পে পুকুর পেয়েছেন, পঞ্চায়েত থেকে একটি টিউবওয়েল এবং ত্রিপুরা স্বশাসিত জেলা পরিষদ থেকে এক একর জায়গায় একটি রাবার বাগানও তাঁকে করে দেওয়া হয়েছে। কুটিরজ্যোতি প্রকল্পে এ বছর বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হয়েছে কর্ণের বাড়িতে। শৌচালয়ও নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। শীর্ষেন্দুবাবু জানিয়েছেন, এত সুবিধা পাওয়ার পরে কর্ণের বিপিএল কার্ড পাওয়ার কথা নয়, তাই পাননি।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি বিপ্লব দেব বলেন, ‘‘খবরের কাগজে শিশু বিক্রির ঘটনাটি দেখেই আমি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি। আমরা তো সেখানে যাইনি!’’ বিপ্লববাবু জানান— যিনি নিজের সন্তান বিক্রি করেছেন, তিনি তো নিজেই সে কথা জাহির করে বলেছেন। বিজেপি সভাপতি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তো বলেন, রাজ্যে স্বর্ণযুগ চলছে। এই তার প্রমাণ!’’
রাজ্যের শাসক দল সিপিএমের মুখপাত্র গৌতম দাস অভিযোগ করেছেন, শিশু বিক্রির ঘটনাটি বিজেপির সাজানো। বিধানসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজ্যের মানুষকে বিভ্রান্ত করছে বিজেপি। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘লোকটি একটি প্রতারক। সরকারের দেওয়া এতগুলি প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার পরেও বলেছেন, কিছুই পাননি।’’