কংগ্রেসের মোকাবিলায় ফ্রন্টফুটে খেলছে বিজেপি

ব্যাকফুটে না গিয়ে শঠে শাঠ্যং নীতি নিয়েই এগোচ্ছে বিজেপি। সংসদের দ্বিতীয় দিনেও প্রত্যাশামাফিক ঝড়ে ফের ভন্ডুল হল অধিবেশন। পণ্য ও পরিষেবা করের রিপোর্ট পেশ কিংবা জমি বিল বদলের সিদ্ধান্ত নিলেও তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৫ ২০:৪৫
Share:

ব্যাকফুটে না গিয়ে শঠে শাঠ্যং নীতি নিয়েই এগোচ্ছে বিজেপি।

Advertisement

সংসদের দ্বিতীয় দিনেও প্রত্যাশামাফিক ঝড়ে ফের ভন্ডুল হল অধিবেশন। পণ্য ও পরিষেবা করের রিপোর্ট পেশ কিংবা জমি বিল বদলের সিদ্ধান্ত নিলেও তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তবু তাতেও না দমে বিজেপি এখন খুঁজেপেতে কংগ্রেসের ভাড়ারের দুর্নীতি সামনে নিয়ে আরও আক্রমণাত্মক অবস্থান নিল। সকালে শান্তা কুমারের মত বিদ্রোহীদের সামলে দুপুরের পর থেকে উত্তরাখন্ডে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত ও পরে অরুণাচলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পি কে থুঙ্গনের দুর্নীতি সামনে নিয়ে এসে কংগ্রেসকেই পাল্টা বিপাকে ফেলার চেষ্টা করল। অবিলম্বে রাওয়াতের পদত্যাগ দাবি করেছে দল। বিজেপি নেতৃত্ব জানেন, সংসদ ভন্ডুল করে আসলে কংগ্রেস নিজেদের অস্তিত্ব ফেরানোর চেষ্টা করতে চাইছে। ফলে তাদেরই মূল নিশানা করে বিরোধীদের ধীরে ধীরে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টার কৌশল নিচ্ছে বিজেপি।

তাই বলে কী হাতে হাত গুটিয়ে বসে থাকছে কংগ্রেস?

Advertisement

আজ সকালে সনিয়া ও রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে সংসদের গাঁধী মূর্তির পাদদেশে ধর্না দেওয়ার কথা ছিল কংগ্রেসের। কিন্তু সেটি আকস্মিক ভাবে পিছিয়ে যাওয়ায় একটু ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল বটে। কিন্তু পরে কংগ্রেস নেতারা জানান, যে ভাবে বিরোধীদের কাছে টেনে বিজেপি কংগ্রেসকে একঘরে করার কৌশল নিচ্ছে, তেমনই কংগ্রেস সরকার-বিরোধিতায় নিজেদের হাত আরও শক্ত করতে চাইছে। যে ভাবে জমি বিলের বিরোধিতায় সনিয়া গাঁধীর পাশে বিরোধী দলগুলি এককাট্টা হয়েছিল, একসঙ্গে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রতিবাদ যাত্রায় সামিল হয়েছিল, ঠিক সে ভাবেই এ বারেও বিরোধী জোটকে সংগঠিত করতে চাইছেন সনিয়া।

কংগ্রেসের এক নেতা আজ কবুল করেন, অরুণ জেটলিরা যতই যুক্তি দিয়ে প্রশ্ন তুলুন সুষমা স্বরাজ কোন ‘বেআইনি’ কাজ করেছেন, তিনটি ইস্যুর মধ্যে সুষমার বিষয়টিই হেভিওয়েট। আদালতের চোখে এক জন পলাতককে সাহায্য করার কথা সুষমা নিজে কবুল করা মানেই সেটি অপরাধ। ফলে বিজেপি যদি এ যাত্রায় পার পেয়ে যায়, তা হলে আগামী চার বছরে কংগ্রেস আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। তাই দাঁতে দাঁত কামড়ে লড়ে যাচ্ছেন সনিয়া। আজও লোকসভায় রাহুল গাঁধী-সহ কংগ্রেস সাংসদরা হাতে কালো ফেট্টি বেধে আসেন। সনিয়া তা না পড়লেও আজ সংসদে ছিলেন আক্রমণাত্মক। মুলতুবি প্রস্তাব স্পিকার খারিজ করার পর তিনি নিজের আসনে বসেই বিজেপির দিকে তীক্ষ্ণ প্রশ্ন ছোড়েন।

কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব জানেন, সুষমা স্বরাজ, বসুন্ধরা ও শিবরাজ প্রসঙ্গে বিরোধী দলগুলি হট্টগোল করলেও আসলে তিনটি বিষয়ে সকলের অবস্থান ভিন্ন। সমাজবাদী পার্টির নরেশ অগ্রবাল যেমন আজ স্পষ্ট বলেন, তাঁরা সুষমার কোনও দোষ দেখেন না। ইস্তফাও চান না। তৃণমূল ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ অবস্থান নিয়ে বিরোধিতা করছে। একমাত্র বাম, জেডি(ইউ), এনসিপি ছাড়া কংগ্রেসের অবস্থানের সঙ্গে তেমন কেউ নেই। তারমধ্যেই এনসিপির প্রফুল্ল পটেল আজ ঘনিষ্ঠ মহলে বলেন, কংগ্রেস ভুল করছে সুষমা-বসুন্ধরাকে নিশানা করে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক নেই। বরং ব্যপম কান্ডের সঙ্গে মানুষ নিজেদের জুড়তে পারে। বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, সমাজবাদী পার্টি ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের সঙ্গে ভিন্ন সুর গাইছে। মায়াবতী আজ সোচ্চার হলেও অচিরেই কংগ্রেসের সঙ্গত্যাগ করবেন। দুর্নীতির অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে নেহাৎ কম নয়। এখন শুধু কংগ্রেসের দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার হচ্ছে বিজেপি। প্রয়োজনে বাকিদের বিষয়েও হবে।

কংগ্রেস অবশ্য বুঝতে পারছে, হরিশ রাওয়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ এই পরিস্থিতিতে একটি ধাক্কা। তাই তড়িঘড়ি হরিশ রাওয়াতের ব্যক্তিগত সচিবকে সরিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঠিক একই ভাবে ব্যপম কান্ডে শিবরাজের ওএসডির বিরুদ্ধেও অভিযোগ ওঠায় কংগ্রেস এত দিন ধরে ইস্তফার দাবি তুলে আসছে। সকালে সুষমা স্বরাজ ট্যুইট করে জানান, প্রাক্তন কয়লামন্ত্রী সন্তোষ বাগরোডিয়াকে কূটনীতিক পাসপোর্ট করানোর জন্য কংগ্রেসের নেতারা তদ্বির করছেন। সংসদে তার খোলসা করবেন। বাগডোরিয়া এখন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত। কিন্তু বাগডোরিয়া বলেন, তিনি এই পাসপোর্ট পাওয়ার অধিকারী। কংগ্রেসও এই অভিযোগকে খুব একটা আমল দিচ্ছে না। কিন্তু হরিশ রাওয়াতের ব্যক্তিগত সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ দলকে একটু বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে।

বিজেপি ঠিক এটাই চাইছে। কংগ্রেসের বিরোধিতার ধার ভোঁতা করে দিতে। সকালে প্রধানমন্ত্রী শান্তা কুমারকে পরোক্ষে সতর্ক করে বলেন, প্রকাশ্যে কিছু বলার আগে দলের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে। কংগ্রেসের দুর্নীতি নিয়ে একটি পুস্তিকাও প্রকাশ করে বিজেপি। ব্যপম কান্ড নিয়ে আর একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে সাংসদদের পড়তে বলেন। শান্তা কুমার সেখানে উপস্থিত ছিলেন। নতুন করে আর বিদ্রোহও করেননি। দলের বিক্ষোভ সকালেই সামলে দুপুর থেকে বিজেপি পাল্টা আক্রমণাত্মক হয়। কিন্তু কংগ্রেসের বক্তব্য, বিরোধী শিবিরে যদি সব দল পাশেও না থাকে, যে ক’টি দল সঙ্গে থাকবে তারাই হট্টগোল করে সংসদ স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সরকার কোনও বিলও পাশ করতে পারবে না। বিজেপি যতই পুস্তিকা প্রকাশ করুক, সেই সব বিষয়ে কংগ্রেসই আগ বাড়িয়ে তদন্ত চেয়েছে। রাহুল গাঁধী ফের রাজ্য সফরে বেরোচ্ছেন। অন্ধ্র ও তামিলনাড়ুতে। সেখানে তিনি মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগবেন। আর সংসদ সামলাবেন সনিয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন