Anurag Thakur

‘তুমি না থাকলে...’, চন্দ্রযানেও নেতাদের মোদীবন্দনা চলছেই

গত বুধবার সন্ধ্যায় চাঁদের মাটিতে অবতরণ করে ‘ল্যান্ডার’ বিক্রম। সে সময়ে ব্রিকস সম্মেলন উপলক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৩ ০৭:৪০
Share:

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। ছবি: পিটিআই।

জেতালে তিনিই জেতাবেন। রাজ্যের নির্বাচন হোক কিংবা চব্বিশের লোকসভা-দলকে জেতানোর প্রশ্নে শেষ কথা যে নরেন্দ্র মোদীই, সে কথা বিলক্ষণ জানেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাই আজ বিদেশ সফর করে প্রধানমন্ত্রী দেশে পা দিতেই চন্দ্রাভিযানের যাবতীয় সাফল্য কার্যত নরেন্দ্র মোদীর বলে আসরে নেমে পড়েন বিজেপি নেতৃত্ব। কারণ, দল ভাল করেই বুঝতে পারছে, চন্দ্রবিজয়ের আলোয় মোদীকে যত উজ্জ্বল করে তোলা যাবে, ততই ভোটের ময়দানে ফায়দা তুলতে পারবে বিজেপি। তাই দলীয় সভাপতি জে পি নড্ডা থেকে অমিত শাহ— ‘মোদী ভজনা’য় পিছিয়ে নেই কোনও নেতাই। বক্তব্যের মূল সুর, নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগেই চন্দ্রবিজয় সম্ভব হয়েছে।

Advertisement

গত বুধবার সন্ধ্যায় চাঁদের মাটিতে অবতরণ করে ‘ল্যান্ডার’ বিক্রম। সে সময়ে ব্রিকস সম্মেলন উপলক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকেই চন্দ্রযানের অবতরণ সরাসরি দেখেন তিনি, কথা বলেন ইসরো প্রধানের সঙ্গে। বক্তৃতা দেন। আবার গ্রিসে বৈঠক শেষ হতেই চলে আসেন বেঙ্গালুরুতে। আজ ভোরে ইসরোয় গিয়ে বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানিয়ে দিল্লি ফেরেন মোদী। পালাম বিমানবন্দরে তখন মোদীকে অভিনন্দন জানাতে পৌঁছে গিয়েছেন জেপি নড্ডা-সহ দলের দিল্লির সাংসদেরা।

বিজ্ঞান গবেষণায় মোদীর ভূমিকার প্রশংসা করে নড্ডা বলেন, ‘‘২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল। সে সময়ে সবাই হতাশ হয়ে পড়লেও, প্রধানমন্ত্রী হননি। উল্টে সকলকে উৎসাহ দিয়েছিলেন। আজ গোটা দুনিয়া ভারতের বিজ্ঞান গবেষণার প্রশংসা করছে। প্রধানমন্ত্রীর পথনির্দেশই এই সুযোগ করে দিয়েছে।’’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বলেন, ‘‘এ তো সবে শুরু। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সূর্য ও শুক্র গ্রহ অভিযানের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এ নতুন ভারত!’’

Advertisement

বিরোধীদের মতে, চন্দ্রবিজয়ের সাফল্যকে ভোটের ময়দানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত সাফল্য বলে প্রচারের কৌশল নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপি নেতৃত্ব ঘরোয়া ভাবে স্বীকার করে নিয়েছেন, আসন্ন ভোট বৈতরণী যদি কেউ পার করাতে পারেন তো তিনি হলেন নরেন্দ্র মোদী। তাই মোদীর ওই সাফল্যকে তুলে ধরার দায় রয়েছে দলের। তাই চন্দ্রবিজয়ের সাফল্য যে মোদীর, সেই দাবির পিছনে রয়েছে ঠান্ডা মাথায় কষা নির্বাচনী অঙ্ক। সেই কারণে আজ গ্রিস থেকে মোদীর সরাসরি বেঙ্গালুরু পৌঁছে যাওয়াও প্রচার করতে পিছপা হননি বিজেপি নেতারা। অমিত শাহ এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) লেখেন, ‘‘এক জন প্রকৃত নেতা সব সময়ে মানুষের পাশে থাকেন। চন্দ্র অভিযানের বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানাতে আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী গ্রিস থেকে সরাসরি বেঙ্গালুরুতে উড়ে যান।’’

অন্য দিকে, মোদীর সরাসরি বেঙ্গালুরুতে পৌঁছে যাওয়াকে লোক দেখানো রাজনীতি বলে প্রচারে নেমেছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা শক্তিসিংহ গোহিন বলেন, ‘‘চমক ও ঘোষণা দিয়ে বাজিমাতে এই প্রধানমন্ত্রী দক্ষ। তিনি এক সময়ে বলেছিলেন ভারতে কালো টাকা ফেরত আসবে। প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা আসবে। তা কি এসেছে? তাই এ সব প্রচার বন্ধ রাখা উচিত প্রধানমন্ত্রীর। চন্দ্রযানের সাফল্য আমাদের বিজ্ঞানীদের। বরং তাঁদের সম্মানিত করা হোক।’’

কংগ্রেসের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে বলেন, ‘‘এ সবই হল প্রধানমন্ত্রীর কৃতিত্ব কুড়িয়ে নেওয়ার কৌশল। মনে হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীই বোধহয় চন্দ্রযানটি চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।’’ পাশাপাশি চাঁদের মাটিতে চন্দ্রযানের অবতরণের স্থানটিকে ‘শিবশক্তি’ নাম দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করেছেন একাধিক বিরোধী সাংসদ। তাৎপর্যপূর্ণ আজ কেবল বিরোধী সংখ্যালঘু নেতাদের সরব হতে দেখা যায়। সম্ভবত হিন্দু ভোটের কথা মাথায় রেখে অন্যেরা এ বিষয়ে মন্তব্য করেননি। কংগ্রেসের রশিদ আলির কথায়, ‘‘শিবশক্তি নাম দেওয়া দুর্ভাগ্যজনক। পরিবর্তে অন্য কোনও নাম রাখা যেত।’’ এসপি সাংসদ সাফিকুর রহমানের প্রস্তাব, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আব্দুল কালামের নামে ওই স্থানটির নামকরণ হওয়া কাম্য ছিল।

শিবশক্তিকে ঘিরে যত বিতর্ক বাড়ছে, তত হাসছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁরা জানেন, শিবশক্তি নাম নিয়ে যত বিরোধীরা আপত্তি জানাবেন, তত হিন্দু ভোটের মেরুকরণ হবে। চাঁদ নিয়ে মেরুকরণের ফায়দা পাবে বিজেপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন