তিরুঅনন্তপুরমে জয়ের পরে বিজেপি কর্মী - সমর্থকদের উল্লাস। — নিজস্ব চিত্র।
ফাইনাল কয়েক মাস দূরে। তার আগে সেমি-ফাইনালেই ধরা পড়ছে বদলের ইঙ্গিত!
সংখ্যার বিচারে এখনও তারা তৃতীয় এবং হয়তো নগণ্যও। তবু ভোটের সমীকরণ ওলটপালট করে দিয়ে কেরলের রাজনীতিতে অন্যতম নির্ণায়ক হয়ে উঠে আসছে বিজেপি তথা এনডিএ। সঙ্কট বাড়ছে বামের। দক্ষিণের যে রাজ্য চিরকাল বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে বিভক্ত থেকেছে, সেখানেই এখন চর্চার রসদ জোগাচ্ছে বিজেপি।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেরলে ছিল পুর-নিগম, পুরসভা, এবং তিন স্তরের পঞ্চায়েত নির্বাচন। সব স্তরেই এ বার প্রথম শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ। যে ৬টি পুর-নিগমে ভোট হয়েছে, তার মধ্যে চারটিই এ বার ছিনিয়ে নিয়েছে ইউডিএফ। একটি এনডিএ-র দখলে। একমাত্র কোঝিকোড় পুর-নিগম ধরে রেখেছে বাম জোট এলডিএফ। পুরসভার ক্ষেত্রে ইউডিএফ ৫৪ (গত বারের ৪৩ থেকে বেড়ে) এবং এলডিএফ ২৮ (গত বার ৪১)। এনডিএ পাঁচ বছর আগের মতোই দু’টি পুরসভায় জয়ী। জেলা পঞ্চায়েতে (পশ্চিমবঙ্গে যেমন জেলা পরিষদ) ইউডিএফ এবং এলডিএফ ৭টি করে বোর্ডের দখল নিয়েছে। গত বার এলডিএফের অনুকূলে ফল ছিল ১১-৩। ব্লক পঞ্চায়েতে (এখানে যেমন পঞ্চায়েত সমিতি) এলডিএফ গত বারের ১০৮ থেকে কমে হয়েছে ৬৩ এবং ইউডিএফ ৩৮ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৯। টাই হয়েছে ১০টি ব্লক। এই স্তরেও এনডিএ-র খাতায় শূন্য। আর গ্রাম পঞ্চায়েতে ইউডিএফ পেয়েছে ৫০১টি এবং এলডিএফ ৩৪১টি। গত বার তাদের দখলে ছিল যথাক্রমে ৩২১ এবং ৫১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত। এনডিএ আগের বারের ১৯ থেকে বেড়ে ২৬-এ পৌঁছেছে। টাই হয়েছে ৬৪টি।
স্থানীয় নির্বাচনে এই ফলের জেরে কংগ্রেসের আসন্ন বিধানসভা ভোটে কেরলে ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন জোরালো হয়েছে। সিপিএমের নেতৃত্বাধীন শাসক ফ্রন্ট এলডিএফ চলে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে। বোর্ড দখলের নিরিখে এনডিএ বাকি দুই ফ্রন্টের চেয়ে অনেক পিছনে। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, রাজধানী শহর তিরুঅনন্তপুরমে পুর নিগমে জয়ী হয়েছে তারা। এবং তার চেয়েও উল্লেখযোগ্য তথ্য, নানা স্তরেই সাধারণ ভাবে বিজেপি শিবির এমন ভাবে ভোটে ভাগ বসিয়েছে যে, কাটাকাটির জেরে লাভ হয়েছে ইউডিএফের। ধাক্কা খেয়েছে বাম।
তিরুঅনন্তপুরম পুর নিগমের মোট ১০১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫০টিতে জয়ী হয়েছে এনডিএ। তিন দশক ধরে সেখানে ক্ষমতায় থাকা এলডিএফ পেয়েছে ২৯টি এবং ইউডিএফের দখলে গিয়েছে ১৯টি ওয়ার্ড। অন্যান্যদের দখলে দু’টি ওয়ার্ড। অর্থাৎ বোর্ড গড়ার জাদু-সংখ্যার চেয়ে একটি কম রয়েছে এনডিএ-র ঝুলিতে। তিন ফ্রন্টের বাইরে থাকা কারও সমর্থন নিতে হবে তাদের। তিরুঅনন্তপুরমে পাঁচ বছর আগে পুরভোটে দ্বিতীয় স্থানে ছিল এনডিএ। তিরুঅনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা যখন তীব্র, সেই সময়েই গেরুয়া উত্থান কংগ্রেস ও বাম, দুই শিবিরকেই কাঁপিয়ে দিয়েছে! উচ্ছ্বাস গোপন করেননি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর মন্তব্য, ‘‘তিরুঅনন্তপুরম পুর নিগমে যে জনাদেশ বিজেপি-এনডিএ পেয়েছে, কেরল রাজনীতিতে তা নতুন সন্ধিক্ষণ। রাজ্যের উন্নয়নের স্বপ্ন যে শুধু আমাদের দলই পূরণ করতে পারে, মানুষ তা বুঝতে পারছেন। বিকশিত তিরুঅন্তপুরম গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের দল কাজ করবে।’’ বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের দাবি, ‘বিকশিত কেরল’ গড়ার লক্ষ্যে রাজ্যের মানুষও এর পরে এনডিএ-র দিকে ঝুঁকবেন।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা এবং এই নির্বাচনে ইউডিএফের প্রচারের কাণ্ডারী ভি ডি সতীশনের দাবি, ‘‘বিজয়ন সরকারের বিদায়ের ঘণ্টা বেজে গিয়েছে! শাসক দলের নীতি ও রাজনীতির বিরুদ্ধে আমরা যে চার্জশিট তৈরি করে প্রচারে নেমেছিলাম, মানুষ তা গ্রহণ করেছেন। বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ইউডিএফ ক্ষমতায় আসবে।’’ প্রসঙ্গত, কেরলে ২০১০ সালে স্থানীয় নির্বাচনে বড় সাফল্য পেয়েছিল এলডিএফ এবং ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে ভি এস অচ্যুতানন্দনের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে তারাই মসনদে বসেছিল।
ভোটের ধাক্কা মেনে নিয়েই মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, ‘‘ফলাফল একেবারেই প্রত্যাশিত জায়গায় যায়নি। এই ফল আমাদের জন্য সতর্ক-বার্তা। তিরুঅনন্তপুরমে বিজেপির জয় এবং অন্যত্র তাদের প্রভাব বৃদ্ধি বুঝিয়ে দিচ্ছে, সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রচার ও কৌশলের বিরুদ্ধে আরও তেড়েফুঁড়ে লড়তে হবে।’’ বিজয়ন যেমন জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে সংযোগ বাড়ানোর কথা বলেছেন, তেমনই পর্যালোচনা ও ত্রুটি সংশোধনের বার্তা দিয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবি এবং রাজ্য সম্পাদক এম ভি গোবিন্দন।
তবে সঙ্কটের মধ্যেও বামেদের একমাত্র স্বস্তি—সবরীমালা মন্দির ও সেখানকার সোনা কেলেঙ্কারি নিয়ে নানা প্রচারের পরেও স্থানীয় পান্ডালম পুরসভায় ক্ষমতাসীন বিজেপির আসন কমে গিয়েছে, একক সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্লক হয়েছে এলডিএফ। পুরবোর্ড গড়ার পর্যাপ্ত সংখ্যা অবশ্য কেউই পায়নি।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে