‘ফর্সা কাশ্মীরি মেয়ে বিয়ে করুন’, বিতর্কে বিজেপি বিধায়ক

৩৭০ বাতিল পর্ব শুরু হওয়ার পর থেকে দেশ জুড়ে বদলে গিয়েছে গুগ্‌ল সার্চের ধারাও। গণজোয়ার এখন ‘ম্যারি কাশ্মীরি গার্ল’ খোঁজায়। যাতে সব চেয়ে এগিয়ে কেরল। তার পরে কর্নাটক। আর পশ্চিমবঙ্গের স্থান ষষ্ঠ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৯ ০৩:১৮
Share:

বিক্রম সাইনি

বাড়ি-জমি কেনা তো আছেই। বাড়তি ‘লাভ’, কাশ্মীরের ‘ফর্সা মেয়ে’। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের ‘সুবিধা’ বোঝাতে গিয়ে কর্মীদের এ ভাবেই বিয়ের টোপ দিলেন উত্তরপ্রদেশের বিজেপি বিধায়ক বিক্রম সাইনি।

Advertisement

বিতর্ক তুঙ্গে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলাও হয়েছে। শাসক দলের একাংশ কিন্তু আদৌ বিচলিত নন। বরং কাশ্মীরে পদক্ষেপকে নিজেদের জয় হিসেবেই দেখছেন কাটৌলির এই বিধায়ক। কাল মুজফ্‌ফরনগরের জনসভায় সাইনিকে বলতে শোনা যায়, ‘‘মোদীজি আমার স্বপ্নপূরণ করেছেন। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে দেশ খুশি। হিন্দু হোন, বা মুসলিম— আপনারাও আনন্দ করুন। বিজেপির কর্মীরা এ বার নির্বিঘ্নে কাশ্মীরে গিয়ে সম্পত্তি কিনতে এবং ফর্সা মেয়ে বিয়ে করতে পারবেন।’’

এ দিকে, ৩৭০ বাতিল পর্ব শুরু হওয়ার পর থেকে দেশ জুড়ে বদলে গিয়েছে গুগ্‌ল সার্চের ধারাও। গণজোয়ার এখন ‘ম্যারি কাশ্মীরি গার্ল’ খোঁজায়। যাতে সব চেয়ে এগিয়ে কেরল। তার পরে কর্নাটক। আর পশ্চিমবঙ্গের স্থান ষষ্ঠ।

Advertisement

ইতিমধ্যেই সাইনির সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রতিবাদে সরব নেটিজ়েনেরই একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, চলতি বছরের গোড়ায় এই বিধায়ককেই বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘যাঁরা দেশে থেকে নিজেদের অসুরক্ষিত মনে করছেন, তাঁরা দেশদ্রোহী। এক বার মন্ত্রী হলে সবক’টাকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেব।’’ সে বার তিনি ক্ষমা চাননি।

সাইনি আজও বলেন, ‘‘বাজে কথা তো কিছু বলিনি। ৩৭০ লোপ মানে, এখন ভারতের যে কেউ কাশ্মীরি মেয়েদের বিয়ে করতে পারেন।’’ তাঁর যুক্তি, আগে কাশ্মীরি মহিলাকে অন্য রাজ্যের কেউ বিয়ে করলে মেয়েটির স্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদা, সম্পত্তির উত্তরাধিকার বাতিল হত।

এটা ঘটনা। ২০১১-র আদমশুমারির রিপোর্ট আবার অন্য ছবিও দেখাচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে—ভিন্ রাজ্য থেকে কাশ্মীরে গিয়ে বিয়ে করে সেখানেই পাকাপাকি থেকে যাওয়া নতুন নয়। এ ক্ষেত্রে পঞ্জাবের পরেই স্থান পশ্চিমবঙ্গের। ২০১১-র রিপোর্ট বলছে, শুধু বিয়ের জন্য পঞ্জাব থেকে কাশ্মীরে যাওয়া অভিবাসীর সংখ্যা প্রায় ২৪ হাজার। আর পশ্চিমবঙ্গ থেকে— ৫,১৯৬। এ ছাড়া কাজের সূত্রে এ রাজ্য থেকে সেখানে যান আরও হাজার পাঁচেক বাঙালি।

পরিসংখ্যান বলছে, বিয়ের জন্য এ রাজ্য থেকে উপত্যকায় যাওয়া অভিবাসীর ৯৮.৪ শতাংশই শহুরে মহিলা। পুরুষ গিয়েছেন ৮২ জন। মাঝখানের এই আট বছরে সংখ্যা বা শতাংশে রদবদল হলেও, এই ‘ট্রেন্ড’ ভাবাচ্ছে অনেককেই। কাজের সূত্রে অভিবাসন অল্প সময়ের জন্য। কিন্তু বিয়ের জন্য পাকাপাকি ভাবে কারা যাচ্ছেন সেখানে, কেনই বা যাচ্ছেন— প্রশ্ন উঠছে। সীমান্তপারের সন্ত্রাস কিংবা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের জেরে উপত্যকা মাঝে মাঝেই অশান্ত হয়ে ওঠে বলেই প্রশ্নটা উঠছে।

বিশেষজ্ঞরা দু’টি সম্ভাবনার কথা বলছেন। প্রথমত, জম্মু-কাশ্মীরের থেকে এ রাজ্যে লিঙ্গ-অনুপাত অনেকটাই ভাল। তাই বিয়ের জন্য পাত্রী জোগাড়ে অনেক কাশ্মীরি পুরুষই অন্য রাজ্যে ঝুঁকে থাকতে পারেন। দ্বিতীয়ত, রেশম ও ফলের ব্যবসায় বিশেষত মালদহ, মুর্শিদাবাদের মতো জেলার সঙ্গে কাশ্মীরের সম্পর্ক বহু দিনের। টানা যাতায়াত করতে-করতে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া অস্বাভাবিক নয় বলেও মত অনেকের। উপত্যকায় অভিবাসীদের একটা বড় অংশ শহুরে উর্দুভাষী মুসলিম হওয়া সম্ভব বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন