অরুণাচলের ধাঁচেই অসমেও সরকার ফেলে দেওয়ার ছক কষেছিল বিজেপি— এমনই অভিযোগ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ।
আজ তিনি বলেন, ‘‘অরুণাচলের পর উত্তরাখণ্ডেও বিজেপি যে ভাবে সরকার দখলের চেষ্টা করছে তা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক।’’ তাঁর অভিযোগ, বিজেপি হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে সামনে রেখে অসমেও কংগ্রেস সরকারকে ফেলার চেষ্টা করেছিল। কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্বের পিছনে কলকাঠি নেড়েছিল বিজেপিই। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল, অন্তত ৩৫ জন বিধায়ককে ভাঙিয়ে রাজ্যে অরুণাচলের মতোই সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি করা। গগৈয়ের দাবি, এই ষড়যন্ত্রে হিমন্তের সঙ্গী ছিল আলফা, আসু, অগপ। মুখ্যমন্ত্রীর আরও অভিযোগ, আরএসএস সমর্থিক রাজ্যপালদের কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেস সরকার ফেলার চেষ্টা করছে বিজেপি। অরুণাচলে জ্যোতিপ্রসাদ রাজখোয়ার মতো অসমে পদ্মনাভ বালকৃষ্ণ আচার্যও কংগ্রেস বিরোধী ভূমিকা নিয়েছেন। এ দিকে, তরুণ গগৈ অরুণাচলের রাজ্যপাল জ্যোতিপ্রসাদ রাজখোয়াকে ‘বিজেপি এজেন্ট’ বলে একাধিক বার অভিযোগ তোলায়, অরুণাচলের আইনজীবী ওসং সারো গৌহাটি হাইকোর্টের অরুণাচল বেঞ্চে গগৈয়ের নামে মামলা করেছেন। বিভিন্ন সভা ও সাংবাদিক সম্মেলনে সারদা ও লুই বার্জার কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হিসেবে হিমন্তের নাম নিচ্ছেন গগৈ। এ নিয়ে হিমন্ত ইতিমধ্যে ১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছেন। ওই মামলায় কামরূপের দেওয়ানি আদালত এ দিন গগৈকে নির্দেশ দেয়— সারদা বা লুই বার্জার সংক্রান্ত মামলার প্রসঙ্গে তিনি হিমন্তের নাম নিতে পারবেন না। কিন্তু গগৈ এ দিনও অভিযোগ করেন, হিমন্তর বিরুদ্ধে চলা তদন্তগুলি কেন্দ্র ধামাচাপা দিয়ে দিয়েছে।
কাছাড় কাগজকল বন্ধ থাকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কংগ্রেস সরকারকে দায়ী করেছিলেন। গগৈ তার দায় পাল্টা কেন্দ্রের উপরে চাপিয়ে জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সংস্থা বন্ধ থাকলে দায় পুরোপুরি কেন্দ্রের। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, বার্ষিক ১ লক্ষ টন কাগজ উৎপাদনে সক্ষম এই কারখানা চালু রাখতে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ টন কয়লার প্রয়োজন। মেঘালয় থেকে ওই কয়লা পাঁচগ্রামের কলে আসত। কিন্তু মেঘালয়ে কয়লা উত্তোলনের উপরে 'ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল'-এর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। মোদী সরকার এখন পর্যন্ত সমস্যাটি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি, বিকল্প কয়লার ব্যবস্থাও করেনি। এখন তারা মুখ বাঁচাতে কংগ্রেসকে দোষ দিচ্ছে।
এ দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কড়া সমালোচনা করে গগৈ বলেন, ‘‘রাজ্য বিভিন্ন প্রকল্পে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দেয়নি বলে ভুল প্রচার চালাচ্ছেন মোদী। আমরা যদি টাকা খরচ না করি, তা হলে কেন্দ্র টাকা পাঠিয়ে চলেছে কোন যুক্তিতে? কেন্দ্রই উল্টে বিশেষ সাহায্য কেড়ে নিয়ে রাজ্যের ৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি করেছে। আমার চিঠির জবাবও দেন না অর্থমন্ত্রী।’’ তাঁর যুক্তি— মোদী বলছেন অসম খুব অনুন্নত রাজ্য। তা হলে তো কেন্দ্রের উচিত রাজ্যকে আরও বেশি বিশেষ সাহায্য পাঠানো। তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপি নেতারা কালো টাকা ফেরত আনার ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দিয়ে এখন কালো টাকা সাদা করতেই ব্যস্ত। তাঁরা সোজা পথে কোথাও ক্ষমতা দখল করতে না পেরে ঘুরপথে সব দখল করতে চাইছেন। মোদী ও বিজেপির রাষ্ট্রীয় সভাপতি অমিত শাহ অসমে বিভিন্ন জনসভায় গগৈয়ের বয়স নিয়ে ব্যঙ্গ করে চলেছেন। বলেছেন, প্রবীণ গগৈ বরং সর্বানন্দ সোনোয়ালকে দায়িত্ব দিয়ে বিশ্রাম করুন। গগৈ বলেন, ‘‘মোদী বয়স্কদের সম্মান দিতে জানেন না। দলে বাজপায়ী, লালকৃষ্ণ অডবাণীদের অবস্থা দেখেই তা বোঝা গিয়েছে। সর্বানন্দকে মোদী বরং প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে দিন।’’