কীর্তি সাসপেন্ড, তবু কাঁটা জেটলির

প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ ঠুকে গত পরশুই শাস্তির জোরালো দাবি তুলেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তবু ৪৮ ঘণ্টা সময় নিলেন নরেন্দ্র মোদী! সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শেষ হল আজ, প্রধানমন্ত্রীও রাশিয়ায় উড়ে গেলেন। আর তার পরেই ক্রিকেট দুর্নীতিতে জেটলির বিরুদ্ধে সরাসরি কালি ছোড়ার দায়ে দলীয় সাংসদ কীর্তি আজাদকে সাসপেন্ড করল বিজেপি। তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিসও ধরালো দল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৫:১৩
Share:

প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ ঠুকে গত পরশুই শাস্তির জোরালো দাবি তুলেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তবু ৪৮ ঘণ্টা সময় নিলেন নরেন্দ্র মোদী! সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শেষ হল আজ, প্রধানমন্ত্রীও রাশিয়ায় উড়ে গেলেন। আর তার পরেই ক্রিকেট দুর্নীতিতে জেটলির বিরুদ্ধে সরাসরি কালি ছোড়ার দায়ে দলীয় সাংসদ কীর্তি আজাদকে সাসপেন্ড করল বিজেপি। তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিসও ধরালো দল।

Advertisement

প্রায় দেড় দশক ধরে দিল্লি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (ডিডিসিএ)-এর সভাপতি ছিলেন জেটলি। তাঁর জমানায় ডিডিসিএ-তে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে যখন তোলপাড় করছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল, তখন তাতে হাওয়া দিয়েছিলেন কীর্তি। প্রথমে সাংবাদিক বৈঠক করে জেটলির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন। তার পর লাগাতার তোপ দেগেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই ‘দলবিরোধী’ কাজের জন্যই আজ সাসপেন্ড হলেন কীর্তি।

কিন্তু তাতে কি দমলেন দ্বারভাঙার প্রাক্তন ক্রিকেটার-সাংসদ?

Advertisement

শাস্তি ঘোষণার সময়ে ছিলেন বিমানে। আমদাবাদে পৌঁছে খবরটা পেয়েই কীর্তি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলেন, ‘‘প্রতিক্রিয়ায় কী বলি বলুন তো! এ তো খুশির খবর। ক্রিকেট-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ৯ বছর ধরে লড়াই করছি। সত্যি কথা বলছি। এটা দল বিরোধী কাজ হল কোথায়? তা ছাড়া জেটলিকে তো আমি চোর বলিনি! বরং প্রধানমন্ত্রীকে আমি সমর্থন করি। তিনি বলেছিলেন, না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা।’’ ঘনিষ্ঠ মহলে কীর্তি দাবি করেছেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে মোদীর সঙ্গে কথা বলবেন।

দৃশ্যতই অসম লড়াই ছিল জেটলি-কীর্তি কাজিয়া। সে দিক থেকে আপাত ভাবে অ্যাডভান্টেজ পেলেন জেটলি। আজ বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ছিলেন অর্থমন্ত্রী। এমনিতে সংসদের অধিবেশন চললে নিয়ম করে সেন্ট্রাল হলে অন্য সাংসদ-সাংবাদিকদের সঙ্গে আড্ডা দেন জেটলি। গত ক’দিনে সেখানে তাঁকে বিশেষ দেখা যায়নি। কিন্তু আজ রাজ্যসভার বিরোধী নেতাদের নিজের বাসভবনে মধ্যাহ্নভোজে নিমন্ত্রণ করেন জেটলি। সেখানে হাসিঠাট্টা চলে দেদার। যদিও বিজেপির একাধিক সূত্র বলছেন, এই ছবিটা নেহাতই সাময়িক। এত তাড়াতাড়ি অস্বস্তি ঝেড়ে ফেলা জেটলির পক্ষে অসম্ভব।

প্রশ্ন হল, কেন?

বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, দলেরই একাংশ যে কীর্তিকে জেটলির বিরুদ্ধে উস্কে দিয়েছেন— তার লক্ষণ যথেষ্ট। আজ কীর্তির বিরুদ্ধে কার্যত কোনও বিজেপি শীর্ষ নেতাই মুখ খোলেননি। ভুলে গেলে চলবে না, জেটলির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছেন কীর্তি। অমিত শাহ-রামলালদের সঙ্গে কথা বলার পরেও তিনি সাংবাদিক বৈঠক করেছেন। সংসদেও বলেছেন। এবং তার থেকেও মারাত্মক হল, ডিডিসিএ-র দুর্নীতির তদন্তের জন্য দিল্লি সরকারের কাছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মারফত যে ফাইলটি এসেছিল, সেটি পাঠিয়েছিলেন খোদ কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল। এই সিদ্ধান্ত তাঁর একার সিদ্ধান্ত ছিল কি না, সে বিষয়ে অনেকেই সন্দিহান।

ঘরোয়া আলোচনায় এক বিজেপি নেতা বলছিলেন, ‘‘কীর্তি একটু বেশিই ব্যক্তি-আক্রমণ করে ফেলেছিলেন। মোদী মডেলের দস্তুর হল, কোনও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে না-সরানো। বরং মন্ত্রী দুর্বল হলেই সুবিধে। কিন্তু সরকারের মান ও জেটলির অভিমানের ভারসাম্য রাখতে এটুকু জরুরি ছিল। তাই শাস্তি পেলেন কীর্তি।’’ তবে এই নেতাও বলছেন, জেটলির পুরোপুরি আশ্বস্ত হওয়ার কিছু নেই। কারণ গত কাল সংসদীয় দলের বৈঠকেই গোটা ঘটনা থেকে নিজের দূরত্ব তৈরি করে ফেলেছেন মোদী। বুঝিয়ে দিয়েছেন, হাওয়ালা কাণ্ডে লালকৃষ্ণ আডবাণী যেমন নিজেকে নিষ্কলঙ্ক প্রমাণ করেছিলেন, এখন সেই দায় জেটলির। আজ বিজেপির আর এক বিক্ষুব্ধ সাংসদ শত্রঘ্ন সিন্হা সেই খোঁচা দিয়েই টুইটারে লিখেছেন, ‘আডবাণীজির পথে হাঁটলেই ভাল করতেন অর্থমন্ত্রী।’

স্বাভাবিক ভাবেই কীর্তির সাসপেনশনকে অস্ত্র করে মোদী-অমিতের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে কংগ্রেস ও আপ। আর কীর্তি নয়া উদ্যমে গুগলি দাগা শুরু করে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘দেখুন না এর পর কী হয়। ভাল মজা হবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন