অহোম বিজয় বিজেপির

জোট-রাজনীতিকে গুরুত্ব দিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে ১১ শতাংশের ফারাক গড়ে অসমে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিল বিজেপি। ভোটের এই দোলনই দেড় দশক পর অসম রাজনীতিতে ঘটিয়ে দিল বদল।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০২:৫৮
Share:

জোট-রাজনীতিকে গুরুত্ব দিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে ১১ শতাংশের ফারাক গড়ে অসমে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিল বিজেপি। ভোটের এই দোলনই দেড় দশক পর অসম রাজনীতিতে ঘটিয়ে দিল বদল।

Advertisement

এখনও পর্যন্ত পাওয়া হিসেব অনুযায়ী কংগ্রেস রাজ্যের ভোটারদের ৩১.১ শতাংশের সমর্থন পেয়েছে। বিজেপি পেয়েছে ২৯.৯ শতাংশ। আর বিজেপি জোটের দুই শরিক অসম গণ পরিষদ ও বড়ো পিপল্স ফ্রন্ট পেয়েছে যথাক্রমে ৮.৪ ও ৩.৮ শতাংশ ভোট। জোটের মিলিত শক্তির পিছনে রয়েছে ৪২.১ শতাংশ মানুষের সমর্থন। আর তথাকথিত তৃতীয় পক্ষ, বদরুদ্দিন আজমলের এআইইউডিএফ একাই পেয়েছে ১২.২ শতাংশ। উল্লেখ্য, গগৈ ও আজমলের প্রাথমিক কয়েক দফা আলাপ আলোচনার পরেও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবেই শেষ পর্যন্ত কেউই নিজের নিজের ‘অহং’ ছেড়ে জোটের সমঝোতায় আসেননি। ঠিক সময়ে দেওয়ালের লিখন পড়তে না পারাই কংগ্রেস ও ইউডিএফকে ক্ষমতা দখলের লড়াই থেকে ছিটকে দিল বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা। যদিও আজও তরুণ গগৈ জানিয়েছেন, আজমলের সঙ্গে জোট না গড়ার সিদ্ধান্ত অসমের স্বার্থেই। এবং সেটাই সঠিক। আজ ভোট হলেও তিনি আজমলের সঙ্গে হাত মেলাবেন না।

কংগ্রেসের এক বিজয়ী প্রার্থী তথা মুখপাত্রের মতে দলের পরাজয়ের পিছনে যে কারণগুলি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হল জোটবদ্ধ হওয়ার জন্য সচেষ্ট না হওয়া, পুত্র গৌরব গগৈকে তুলে ধরতে তরুণ গগৈয়ের অতি সক্রিয়তা, হিমন্তবিশ্বের নেতৃত্বে দলে বিদ্রোহ, উজানি অসমে আহোম ভোট ভাগ হয়ে যাওয়া, নামনিতে আশানুরূপ সংখ্যালঘু ভোট না পাওয়া। অগপ-বিজেপি নেতাদের মতে এই কারণগুলির সঙ্গে যোগ হয়েছে বহিরাগত আমলাদের উপরে কংগ্রেস তথা তরুণ গগৈয়ের অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়া। তাঁরা অসমের ধাতই বুঝতে পারেননি।

Advertisement

উপজাতি গোষ্ঠীর প্রতিনিধি সর্বানন্দ সোনোয়ালের বিনয়ী ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির বিপরীতে তরুণ গগৈ, রকিবুল ইসলাম, গৌতম রায়দের ঔদ্ধত্য ও অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দলের কাল হয়েছে বলে মনে করছেন কংগ্রেস নেতাদের একাংশ। শ্মশানের চেহারা নেওয়া রাজীব ভবনে দাঁড়িয়ে এক মুখপাত্র বলেন, “শুধু আম জনতার সঙ্গে নয়, দলের তৃণমূলস্তরের কর্মীদের সঙ্গেও উপরের সারির নেতাদের ব্যবহারে বদল এসেছিল। এমনকী রাজীব ভবনের প্রচার বিভাগে কাজ করা অনেক তরুণ কর্মীও এ বার বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন।”

কংগ্রেসের প্রবীণ নেতাদের মতে, নবীন প্রজন্মের ভোটাররাই পরিবর্তনের পক্ষে বেশি করে ভোট দিয়েছে। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই তারা কংগ্রেসের শাসন দেখে দেখে ক্লান্ত। অগপ আমলের কালো দিনের অভিজ্ঞতা তাদের নেই। তাই অগপকে সঙ্গে নিয়েও বিজেপি বাঙালি এলাকাগুলিতেও প্রচুর ভোট পেয়েছে।

এ দিকে, অসমের এই ফলাফল সর্বভারতীয় ক্ষেত্রেও বিজেপির নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটিকে কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। গত দু’বছরে মোদী-শাহ জুটি বারবার ধাক্কা খেয়ে দলের ভিতরে ও বাইরে আক্রমণের মুখে পড়েছিলেন। ২০১৭ সালের উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের আগে অসম তাঁদের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিল। আজ তারই প্রতিফলন ঘটেছে দিল্লিতেও। অশোক রোডে দলের
সদর দফতরে এ দিন হাজির হন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানাতে ছিল অসমিয়া ‘জাপি’ টুপি ও ‘গামোসা’। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে অসমের এতখানি গুরুত্ব ইদানীং কালে বোধহয় ছিল না।

এ বারে যে পাঁচটি রাজ্যে ভোট হল, তার মধ্যে একমাত্র অসমেই বিজেপির ক্ষমতায় আসার সুযোগ ছিল। সেই সুযোগ হারালে আবার দলের মধ্যেই মোদী-শাহর নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ত। সে কারণেই শুধু অসমের জন্যই এই জয় গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ নরেন্দ্র মোদীর জন্যও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন