প্রতীকী ছবি।
দেশের শিল্পপতিরা লগ্নিতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। অগত্যা বিদেশি বিনিয়োগই ভরসা। লগ্নি টানতে তাই ফের সিঙ্গাপুর গেলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। দু’দিনের সফরে সেখানে বোঝাবেন, বিদেশি লগ্নির পথ প্রশস্ত করতে নরেন্দ্র মোদী জমানায় কতটা কী আর্থিক সংস্কার হয়েছে ও হচ্ছে। বিভিন্ন লগ্নি তহবিলের কর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন জেটলি।
দেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্য যে যথেষ্ট ভাল, তা প্রমাণে মোদী সরকারের একমাত্র অস্ত্র এই বিদেশি লগ্নি। মোদী জমানার তিন বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির পথ প্রশস্ত হয়েছে। তার ফায়দাও মিলেছে। ২০১৬-’১৭-য় বিদেশি লগ্নি হয়েছে প্রায় ২.৯২ লক্ষ কোটি টাকা। যা আগের বছরের থেকে ৯% বেশি। এই বিদেশি লগ্নির অর্ধেকই আসে মাত্র দু’টি দেশ থেকে। মরিশাস ও সিঙ্গাপুর। কোন দেশ থেকে কত লগ্নি আসছে, সেই নিরিখে ২০১৬-’১৭-য় প্রথম স্থানে ছিল মরিশাস। দ্বিতীয় স্থানে সিঙ্গাপুর। আগের বছরে ছবিটা ছিল ঠিক উল্টো।
এতেই প্রশ্ন উঠেছে, বিদেশ থেকে যে লগ্নি আসছে, তা কি সত্যিই লগ্নি? না কি এ দেশে কর ফাঁকির কালো টাকাই মরিশাস-সিঙ্গাপুর ঘুরে আবার এ দেশে ঢুকছে?
আরও পড়ুন: আসবেন মিত্তল, বিনিয়োগ টানতে স্কটল্যান্ডে মমতা
কালো টাকার অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ অরুণ কুমারের যুক্তি, ‘‘যদি কালো টাকাই এই সব কর ফাঁকির স্বর্গরাজ্য ঘুরে দেশে আসতে দেওয়া হয়, তার অর্থ হল আরও কালো টাকা তৈরিতে সাহায্য করা। হাওয়ালা বা আমদানি খরচের বিল ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখিয়ে বিদেশে কালো টাকা পাচার হচ্ছে। সেই অর্থ ফিরে আসার রাস্তা সহজ করে দিলে আরও কালো টাকা তৈরি হবে। এটা সৎ করদাতাদের প্রতিও অবিচার।’’ অর্থ মন্ত্রকের এক শীর্ষকর্তার বক্তব্য, ‘‘ইউপিএ আমলেও এই দেশগুলি থেকেই সব থেকে বেশি লগ্নি আসত। সিঙ্গাপুর-মরিশাস থেকে আসা লগ্নির সবটাই কালো টাকা, এমন কোনও প্রমাণ নেই।’’ তবে অর্থ মন্ত্রকও মানছে যে, সিঙ্গাপুর-মরিশাস থেকে আসা বিদেশি লগ্নির একাংশ কালো টাকা। কিন্তু সমস্যা হল, তার কতটা কালো, কতখানি সাদা, তা ধরার মতো কোনও ব্যবস্থা নেই।
মন্ত্রকের একটি সূত্রের যুক্তি, এ দেশের কালো টাকা যাতে ঘুরপথে লগ্নি হতে না পারে, তার জন্য সিঙ্গাপুরের সঙ্গে কর-চুক্তিতে সম্প্রতি সংশোধন হয়েছে। বস্তুত সেই কারণেই সিঙ্গাপুর থেকে আসা লগ্নি কিছুটা কমে গত অর্থ বছরে মরিশাস প্রথম স্থানে উঠে এসেছে। কিন্তু দেশীয় লগ্নি বাড়ন্ত হলে কোনও সরকারই বিদেশি লগ্নির রং দেখতে চায় না।
দিন দশেক আগেই ফাঁস হওয়া ‘প্যারাডাইস পেপার্স’-এ দেখা গিয়েছিল, এ দেশের মন্ত্রী, নেতা, শিল্পপতি, বলিউডের অভিনেতারা কর ফাঁকির স্বর্গরাজ্য বলে পরিচিত দেশগুলিতে টাকা ঢালছেন। সিঙ্গাপুর ও বারমুডার দু’টি সংস্থা থেকে ফাঁস হয়েছিল ওই নথি। কংগ্রেস, বামেদের মতো বিরোধী দলের তাই প্রশ্ন, মোদী তো বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকা উদ্ধার করে আমজনতার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তার কী হল?
২০১৬-’১৭
• মোট: ২.৯২ লক্ষ কোটি
• মরিশাস: ১.০৫ লক্ষ কোটি
• সিঙ্গাপুর: ৫৮ হাজার কোটি
২০১৫-’১৬
• মোট:২.৬২ লক্ষ কোটি
• মরিশাস:৫৫ হাজার কোটি
• সিঙ্গাপুর:৮৯ হাজার কোটি
২০১৪-’১৫
• মোট:১.৮৯ লক্ষ কোটি
• মরিশাস: ৫৫ হাজার কোটি
• সিঙ্গাপুর: ৪১ হাজার কোটি
*টাকা