প্রতীকী ছবি।
লাল সালোয়ার-কামিজে সুসজ্জিত হয়ে হবু বরের জন্য অপেক্ষা করছিলেন কনে। কিছু পরেই হবু বর উপস্থিত। চোখে-মুখে নেশার ছাপ স্পষ্ট। টলতে টলতে এগিয়ে আসছিলেন তাঁর দিকে। হবু বর কি মাদকাসক্ত! সন্দেহ হয় কনের। আর তাতেই বিয়ে করবেন না বলে বেঁকে বসেন কনে। কনের জেদের কাছে হার মেনে শেষমেশ বিয়ের মণ্ডপ ছাড়েন বর-পক্ষ। সম্প্রতি পঞ্জাবের দিনানগরে ঘটনাটি ঘটেছে।
দশেরার বাসিন্দা সুনিতা সিংহের সঙ্গে খানপুরের জসপ্রীত সিংহের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। জসপ্রীত পেশায় ট্রাক চালক। মহারাজা রণজিৎ সিংহ গুরুদ্বারে সুনিতার পরিবার আগে হাজির হয়। কিছু পরে পাত্র পক্ষও এসে উপস্থিত হয়। সবই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু জয়প্রীতকে হেঁটে আসতে দেখেই সন্দেহ হয় সুনিতার। জসপ্রীত নিজের ভারসাম্য রাখতে পারছিলেন না। টলতে টলতে এগোচ্ছিলেন। তখনই বেঁকে বসেন সুনিতা। একজন মাদকাসক্তকে তিনি বিয়ে করতে চান না বলে জানিয়ে দেন। সুনিতার পরিবার অবশ্য প্রথমটা তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। বারবারই তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা হয় যে, এমন কোনও নেশা জয়প্রীত করেন না।
আরও পড়ুন: আমেরিকায় কাজ হারিয়ে ফেরা ব্যাঙ্ক কর্মীর স্ত্রী আত্মঘাতী
হাল ছাড়েননি সুনিতা। প্রথমে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য জসপ্রীতকে টেনে নিয়ে যান সিঙ্গোয়াল কমিউনিটি হেলফ সেন্টারে। কিন্তু সেখানে পরীক্ষার কোনও সরঞ্জাম ছিল না। সেখান থেকে বেরিয়েই গুরুদাসপুরের একটি বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে পৌঁছন। পরীক্ষার পর জানা যায়, জসপ্রীত সত্যিই মাদক সেবন করেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গেই কারও কথা না শুনে বিয়ে ভেঙে দেন সুনিতা। এর পর সুনিতার পরিবারও তাঁর পাশে দাঁড়ান।
মাদক সেবন পঞ্জাবের অন্যতম সমস্যা। ড্রাগ মাফিয়াদের রমরমা সেখানে দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। পঞ্জাবে পুরুষদের একটা বড় অংশই মাদকাসক্ত। বছর খানেক আগে এই রাজ্যের মাদকচক্র আর মাদকাসক্তি নিয়ে তৈরি ছবি ‘উড়তা পঞ্জাব’ নিয়ে বেশ হইচইও হয়। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ক্যাপ্টেন অমরিন্দ্র সিংহ ড্রাগ কেনাবেচা বন্ধ করার জন্য একটি বিশেষ টাস্ক-ফোর্স গঠন করেছেন। বিশেষ টাস্ক-ফোর্স গত দু’মাসে প্রায় ১,০০০ জনকে গ্রেফতারও করেছে। এ হেন পরিস্থিতিতে সুনিতার এই পদক্ষেপ সমাজে একটি দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন অনেকেই। সুনিতার এই সিদ্ধান্তের জন্য রে়ড ক্রসের তরফ থেকে তাঁকে পুরস্কৃত করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।