বাইরের লড়াই শেষ। এ বার ঘর সাজানোর পালা।
ফলাফল বলে দিচ্ছে, দুই রাজ্যেই বিজেপি সরকার গড়তে চলেছে। হরিয়ানায় একক ভাবে। মহারাষ্ট্রে শিবসেনা বা এনসিপি-র মধ্যে কারও সমর্থনের জোরে। আজ দুপুরে দু’রাজ্য জয়ের ছবিটি স্পষ্ট হয়ে যেতেই বিজেপি সদর দফতরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে একটাই প্রশ্ন দু’রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী কে হচ্ছেন? দল বলছে, হরিয়ানায় সিদ্ধান্ত নেওয়া তুলনায় সহজ। কিন্তু মহারাষ্ট্রে এটা কিছুটা নির্ভর করছে জোটসঙ্গীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপরে।
দু’রাজ্যেই মুখ্যমন্ত্রী স্থির করা-সহ মন্ত্রিসভা গঠনের প্রশ্নে আজ রাতে দু’টি আলাদা পর্যবেক্ষক দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রসঙ্গে সন্ধ্যায় বিজেপি সদরে দলের সংসদীয় বোর্ড বৈঠকে বসেছিল। সেখানে ছিলেন নরেন্দ্র মোদী, রাজনাথ সিংহ, অমিত শাহরা। বিজেপি-সূত্রের খবর, বৈঠকে দু’রাজ্যের সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রীদের নাম নিয়ে আলোচনা হয়। হরিয়ানায় একাধিক নাম আলোচনায় এসেছে। জাঠ নেতা অভিমুন্য সিন্ধু, অ-জাঠ নেতা মনোহরলাল খাট্টার ও হরিয়ানার বিজেপি সভাপতি রামবিলাস শর্মা দৌড়ে রয়েছেন। কী রকম?
প্রাথমিক ভাবে অভিমুন্যকে মুখ্যমন্ত্রী করার পক্ষে সওয়াল করেছে দলের একাংশ। কিন্তু অভিমুন্য জাঠ সম্প্রদায়ের নেতা। হরিয়ানার ভোটে চৌটালাদের আইএনএলডি-র সঙ্গে পাল্লা দিতে মোট আসনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশে জাঠ প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপি। সেয়ানে-সেয়ানে লড়াইয়ের কৌশলটি খেটে গেলেও নীতিগত ভাবে বিজেপি’র লক্ষ্য ছিল, জাঠেদের বিরুদ্ধে অ-জাঠ শ্রেণির ভোটকে এক ছাতার তলায় আনা। ফল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অ-জাঠ তল্লাটে বিজেপি তুলনায় ভাল করেছে। কার্যত তারই সুবাদে তারা একা লড়ে প্রথম বার হরিয়ানার কুর্সি দখল করতে পেরেছে।
ফলে অ-জাঠ শ্রেণিকে চটিয়ে অভিমুন্যের মতো জাঠ নেতাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত করাটা বিজেপির পক্ষে বেশ সমস্যার। তাই বিকল্প হিসেবে উঠে আসছেন মনোহরলাল খট্টার। পঞ্জাবি নেতাটি প্রথম বার ভোটে দাঁড়িয়ে কারনাল আসনে জয়ী হয়েছেন। অবিবাহিত খট্টার শুধু সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ নন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও তাঁর সুসম্পর্ক। কৌশলী নেতা হিসেবেও পরিচিত। অন্য দিকে ব্রাহ্মণ নেতা রামবিলাস শর্মাও লড়াইয়ে রয়েছেন। রাজ্যের বিজেপি সভাপতি, তথা চার বারের এই বিধায়ক আগে বংশীলালের দল আইভিপি এবং বিজেপির জোট সরকারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন। হরিয়ানার সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সঙ্ঘের পছন্দ-তালিকায় একেবারে উপরের দিকে রয়েছেন শর্মা।
অর্থাৎ, জাঠ না অ-জাঠ মূলত এই প্রশ্নেই ঝুলছে হরিয়ানার ভাগ্য। অন্য দিকে, মহারাষ্ট্রে বৃহত্তম দল হয়েও মুখ্যমন্ত্রীর তখ্ত নিয়ে হবু জোটসঙ্গীর মর্জির উপরে কিছুটা হলেও বিজেপি’কে নির্ভর করতে হচ্ছে। পালাক্রমে মুখ্যমন্ত্রী স্থির করার শিবসেনা-প্রস্তাব খারিজ করে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, বিজেপি সরকার গড়লে আগামী পাঁচ বছরের মুখ্যমন্ত্রী হবেন দল থেকেই। কিন্তু প্রশ্ন, কে হবেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী?
দল বলছে, মহারাষ্ট্রে একক ভাবে বিজেপি সরকার গড়ত পারলে মুখ্যমন্ত্রী হতেন দেবেন্দ্র ফড়নবীস। নাগপুরের ওই ব্রাহ্মণ নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী করায় মোদী ও অমিত শাহের সম্মতি রয়েছে, তাঁর প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে সঙ্ঘ পরিবারেরও। মহারাষ্ট্র-রাজনীতিতে দীর্ঘ কাল ধরে মূলত ওবিসি নেতাদের কর্তৃত্ব। দেবেন্দ্রকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলে আগামী দিনে রাজ্যের ব্রাহ্মণ ভোটব্যাঙ্কের উদ্দেশে বার্তা দিতে পারবেন মোদী। পরিবর্ত হিসেবে গডকড়ীর নাম উঠলেও তাঁর প্রতি মোদীর ছাড়পত্র নিয়ে সংশয় আছে। গডকড়ী অবশ্য বলেছেন, “আমি দিল্লিতে ভাল আছি। সেখানে ভাল কাজ করছি। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কোনও বাসনা আমার নেই।” কিন্তু গডকড়ী-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, ভীষণ ভাবে দৌড়ে রয়েছেন তিনি। উপরন্তু তাঁর সঙ্গে এনসিপি-র সুসম্পর্ক রয়েছে। ফলে বিজেপি’কে শিবসেনার বদলে এনসিপি-র সমর্থনে সরকার গড়তে হলে শরদ পওয়ারদের প্রথম পছন্দ হবেন গডকড়ীই। তবে গডকড়ীর ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগে তাঁকে দলের সভাপতি পদ ছাড়তে হয়েছিল। গডকড়ীর নামে শিবসেনারও আপত্তি।
ওই দু’জন ছাড়াও একনাথ খাড়সে বা বিনোদ তাওড়ের মতো বর্ষীয়ান নেতারা দৌড়ে রয়েছেন। যদিও দলে একাংশের বক্তব্য, ওবিসি নেতা খাড়সে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। আর পাঁচ বারের বিধান পরিষদ তথা মরাঠি নেতা তাওড়ের সামনে বাধা হল, এই প্রথম বার তিনি বিধানসভা ভোটে অবতীর্ণ হয়েছেন। একই ভাবে উঠেছে প্রয়াত বিজেপি নেতা গোপীনাথ মুন্ডের মেয়ে পঙ্কজার নামও। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, মুন্ডে বেঁচে থাকলে মুখ্যমন্ত্রী বাছাই নিয়ে কোনও উদ্বেগই থাকত না দলের। কিন্তু মুন্ডের অকালমৃত্যু অনেক হিসেব ওলটপালট করে দিয়েছে। মুন্ডের উত্তরসূরি হিসেবে পঙ্কজার নাম উঠেছে ঠিকই। কিন্তু প্রথম বার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েই তাঁর পক্ষে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া বেশ কঠিন বলেই মনে করছেন দিল্লির বিজেপি নেতারা।