সিবিআই-এর অভ্যন্তরীণ টালমাটাল নিয়ে সরাসরি বিজেপিকে আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।— ফাইল চিত্র।
সিবিআই-এর অভ্যন্তরীণ টালমাটাল নিয়ে সরাসরি বিজেপিকে আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিবিআই এখন ‘বিজেপি ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন’-এ পরিণত হয়েছে। বুধবার সকালে টুইটারে এমনই লিখলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
শীর্ষ কর্তাদের মধ্যে শুরু হওয়া বেনজির দ্বৈরথে এখন টালমাটাল সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটিতে এমন সাংঘাতিক সঙ্কট আগে কখনও দেখেনি দেশ। বিরোধী শিবির থেকে কটাক্ষ ভেসে আসতে শুরু করেছিল ঠিকই। তবে, সব পক্ষই একটু জল মেপে নিয়ে মন্তব্য করার কথা ভাবছিলেন। বড় বিরোধী দলগুলোর শীর্ষনেতারা মুখ খুলছিলেন না। কিন্তু বুধবার মুখ খুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খুব স্পষ্ট করে নিশানা করলেন বিজেপিকে।
এ দিন টুইটে মমতা লিখেছেন, ‘‘সিবিআই এখন তথাকথিত বিবিআই (বিজেপি ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) হয়ে গিয়েছে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’’ সকাল ১১টা ৪৮ নাগাদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটটি করেন। টুইটে কোথাও অলোক বর্মা বা রাকেশ আস্থানার নাম উল্লেখ করেননি তিনি। তাঁদের মধ্যে শুরু হওয়া দ্বৈরথের কথাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উল্লেখ করেননি। কিন্তু বর্মা-আস্থানা বিবাদের নেপথ্যে বিজেপি এবং মোদী ক্যাবিনেটের নানা অভ্যন্তরীণ সমীকরণের যে সব খবর প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইঙ্গিত যে সে দিকেই, তা খুব স্পষ্ট। বিজেপির তথা কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের অভ্যন্তরীণ চোরাস্রোতই সিবিআই-এর মতো সংস্থাকে এমন বেনজির সঙ্কটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত করেছেন। বলছেন বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুন: যুদ্ধক্ষেত্র সিবিআই: ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হল বর্মা, আস্থানা দু’জনকেই
সিবিআই-কে বিজেপি রাজনৈতিক সংস্থায় পরিণত করে তুলেছে বলে আগেও অজস্র বার মন্তব্য করেছেন তৃণমূল চেয়ারপার্সন তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সারদা কাণ্ড, নারদ কাণ্ডের তদন্তে সিবিআই-এর তৎপরতা যত বার বেড়েছে, তত বারই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র আক্রমণ করেছেন কেন্দ্রকে। সিবিআই-কে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির বিরুদ্ধে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত এক বার একটা পর্যবেক্ষণে সিবিআই-কে ‘তোতাপাখি’ বলে কটাক্ষ করেছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে বার বার শোনা গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের সেই পর্যবেক্ষণের কথা। এ বার সিবিআই-এর অভ্যন্তরীণ টালটামাটালের প্রেক্ষিতে ফের একই অভিযোগ তুলে সরব হলেন মমতা।
কংগ্রেস এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি সরব রাফাল চুক্তি নিয়ে। ফরাসি সংস্থার কাছ থেকে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার যে চুক্তি ভারত সরকার করেছে, তাতে বিপুল দুর্নীতি হয়েছে বলে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী বার বার দাবি করছেন। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারেও রাফাল নিয়েই সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছেন রাহুল। কিন্তু রাফাল নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তাঁর দল সে ভাবে মুখ খোলেনি। সারদা কাণ্ড বা নারদ কাণ্ড নিয়ে বিজেপি যাতে বেশি হইচই না করে, তা নিশ্চিত করতেই জন্যই রাফাল কাণ্ড নিয়ে চুপচাপ তৃণমূল— বামেদের তরফ থেকে এই রকম অভিযোগ তোলা শুরু হয়েছিল। কিন্তু এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের সরাসরি বিজেপি-কে আক্রমণ করে বিরোধীদের সেই কটাক্ষকে কিছুটা ভোঁতা করে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: মধ্যরাতে ‘অভ্যুত্থান’ সিবিআই দফতরে, কী ভাবে কী হল...
সারদা এবং নারদ কাণ্ড নিয়ে সিবিআই-এর সক্রিয়তা বাড়তে পারে দীপাবলির পর থেকে— এমন জল্পনাও শোনা যাচ্ছে রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরে। বিজেপি নেতারা অবশ্য বলছেন, ও সব জল্পনা ভিত্তিহীন। সিবিআই নিজের মতো করে তদন্ত করছে এবং সে তদন্তে কবে কী ভাবে সিবিআই কতটা সক্রিয় হবে, তা রাজনৈতিক চর্চার বিষয় নয় বলে বিজেপি নেতাদের দাবি। কিন্তু জল্পনাটাকে উড়িয়ে দিচ্ছে না তৃণমূল। ভোটের দিকে তাকিয়েই সক্রিয়তা বা নিষ্ক্রিয়তা বাড়তে-কমতে পারে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্মা-আস্থানা বিবাদে সিবিআই-এর টালমাটাল দশা তৃণমূলের সুবিধা করে দিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের দাবি করলেন যে, সিবিআই পুরোপুরি রাজনীতির গ্রাসে। এর পরে সারদা-নারদে অভিযুক্ত নেতাদের নিয়ে টানাটানি হলে তাকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে আখ্যা দিতে তৃণমূলের আরও সুবিধা হবে।