জিন্‌স ‘বেচতে’ গোয়েন্দারা লালুর বাড়িতে

আরজেডি শীর্ষনেতার ‘সিংহদুয়ারে’ পৌঁছেই স্বমূর্তি ধরেন ২৫-৩০ জন সিবিআই আধিকারিক। বাড়িতে ছিলেন না লালুপ্রসাদ। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় রাঁচীর সিবিআই আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন। তাঁর বাড়িতে ঢুকেই রাবড়ীদেবী, তেজস্বীপ্রসাদ ও তেজপ্রসাদকে ডাকেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পটনা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৭ ০৩:৩৮
Share:

মুখোমুখি: সিবিআই হানার পরে বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে লালুপ্রসাদ, রাবড়ী দেবী, তেজস্বী এবং তেজপ্রতাপ যাদব। ছবি: পিটিআই।

বৃহস্পতিবার দুপুর। পটনার আয়কর চকের দু’টি হোটেলে ঢুকলেন কয়েক জন। ঘর ভাড়া নেওয়ার সময় রিসেপশনে জানালেন, জিন্‌সের ব্যবসা করেন তাঁরা। সেই কাজেই এসেছেন বিহারে। শুক্রবার সকালে শহরে ঘোরার জন্য কয়েকটি গাড়ির ব্যবস্থা করতেও বলে রাখেন হোটেলকর্মীদের।

Advertisement

ব্যবসায়ী সেজে নয়াদিল্লির সিবিআই অফিসাররা ঘাঁটি গেড়েছেন সেখানে, তা টের পাননি হোটেলের কেউ। আজ সকাল ৬টা নাগাদ পাঁচটি গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হন ‘ব্যবসায়ীরা’। চালকদের পটনা হাইকোর্টের দিকে যেতে বলা হয়। সেখানে পৌঁছনোর পর রুট বদলে সার্কুলার রোডে লালুপ্রসাদ, রাবড়ীদেবীর বাড়িতে পৌঁছন তাঁরা।

আরজেডি শীর্ষনেতার ‘সিংহদুয়ারে’ পৌঁছেই স্বমূর্তি ধরেন ২৫-৩০ জন সিবিআই আধিকারিক। বাড়িতে ছিলেন না লালুপ্রসাদ। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় রাঁচীর সিবিআই আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন। তাঁর বাড়িতে ঢুকেই রাবড়ীদেবী, তেজস্বীপ্রসাদ ও তেজপ্রসাদকে ডাকেন তদন্তকারীরা। তলব করা হয় অন্য লোকেদেরও। গোটা বাড়ি ঘিরে ফেলা হয়। বাড়ির সবাইকে এক জায়গায় বসিয়ে শুরু হয় তল্লাশি। বেডরুম থেকে স্নানঘর— খোঁজা হয় সব জায়গা।

Advertisement

সাতসকালে সিবিআই হানার খবর পেয়ে হতবাক পটনার পুলিশকর্তারা। সিবিআই আধিকারিকরা লালুর বাড়িতে প্রহরায় মোতায়েন কয়েক জন পুলিশকর্মীকে তাঁদের সাহায্য করতে ডেকে নিয়েছিলেন। জেলা পুলিশের আধিকারিকরা তড়িঘড়ি সাকুর্লার রোডে পৌঁছলেও, বাড়িতে ঢোকার অনুমতি পাননি। সিবিআই অফিসাররা তাঁদের এলাকার আইনশৃঙ্খলার দিকে নজর রাখতে বলেন।

আরও পড়ুন:স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিল বুরহান, বলছেন মা

লালুর বাড়িতে আগেও হানা দিয়েছে সিবিআই। কিন্তু প্রতি বার সাহায্য চাওয়া হতো বিহার পুলিশের কাছে। এ বারই ঘটল ব্যতিক্রম। রাজ্য পুলিশের কয়েক জন কর্তার মতে, এর পিছনে সিবিআইয়ের অতিরিক্ত নির্দেশক রাকেশ আস্থানার পরিকল্পনা রয়েছে। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির প্রথম মামলা দায়ের হওয়ার সময় গুজরাত ক্যাডারের আইপিএস রাকেশবাবু অবিভক্ত বিহারের ধানবাদের এসপি ছিলেন।
রাজনৈতিক শিবিরে কানাঘুষো, তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অত্যন্ত আস্থাভাজন আধিকারিক। সিবিআইয়ের প্রাক্তন নির্দেশক রঞ্জিৎ সিনহা, অনিল সিনহারা ছিলেন বিহার ক্যাডারের আইপিএস। অনেক সময় অভিযোগ উঠেছিল, ওই অফিসারদের সঙ্গে লালুপ্রসাদের ‘সম্পর্কের’ প্রভাব পড়েছে আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তে।

শীর্ষনেতার বাড়িতে সিবিআই অভিযানের খবর পেয়ে দলের কর্মী-সমর্থকরা সার্কুলার রোডে ভিড় জমান। আসেন লালু পরিবারের আইনজীবীও। প্রথম দিকে কয়েক জন ভিতরে ঢোকার অনুমতি পেলেও, পরে কারও জন্য বাড়ির দরজা খোলেনি। বেলা গড়ালে লালুর আইনজীবী বেরিয়ে দাবি করেন, বাড়ির সবাই তদন্তে সাহায্য করেছেন। কোনও নথি, লুকানো সম্পদ হাতে পাননি সিবিআই অফিসাররা।

বিহার পুলিশের এডিজি (সদর) এস কে সিঙ্ঘল জানিয়েছেন, এই অভিযানের জেরে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গোটা রাজ্যে সতর্ক রয়েছে পুলিশ। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে প্রদেশ বিজেপি দফতরে।

এ দিন লালুর বাড়ি, পটনার দু’টি হোটেল-সহ নয়াদিল্লি, রাঁচী, গুরুগ্রাম ও পুরীর মোট ১২টি জায়গায় অভিযান চালায় সিবিআই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন