মইন কুরেশি যোগে কেন্দ্র বিড়ম্বনায়

অলোক বর্মা বনাম রাকেশ আস্থানা— সিবিআইয়ের শীর্ষ স্তরে গৃহযুদ্ধের মধ্যে তৃতীয় যে নামটি সব চেয়ে বেশি চর্চিত হচ্ছে, তা হল মইন কুরেশি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৮ ০২:২৮
Share:

মইন কুরেশি

অলোক বর্মা বনাম রাকেশ আস্থানা— সিবিআইয়ের শীর্ষ স্তরে গৃহযুদ্ধের মধ্যে তৃতীয় যে নামটি সব চেয়ে বেশি চর্চিত হচ্ছে, তা হল মইন কুরেশি। অভিযোগ, দু’কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে বিতর্কিত মাংস ব্যবসায়ী কুরেশির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা মিটমাট করে দিয়েছিলেন সিবিআইয়ের দ্বিতীয় শীর্ষ অফিসার রাকেশ আস্থানা।

Advertisement

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থায় ডামাডোলের মধ্যে এই ঘুষের অভিযোগ অস্বস্তি বাড়িয়েছে মোদী সরকারের। কারণ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘বিশেষ আস্থাভাজন’ হিসেবে পরিচিত আস্থানা যার মামলা ঘুষ নিয়ে মিটিয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকাটি বেশ দীর্ঘ। এবং খুবই গুরুতর। আয়কর ফাঁকি থেকে হাওয়ালা, এমনকি পাক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগেরও অভিযোগ রয়েছে কুরেশির বিরুদ্ধে। ইউপিএ জমানায় কংগ্রেসের একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল তার। প্রভাব খাটাত সিবিআই কর্তাদের নিয়োগেও। ফলে প্রচুর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাকে ছোঁয়ার সাহস করেননি গোয়েন্দারা। মোদী ক্ষমতায় আসার পরে কুরেশির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। শেষ পর্যন্ত গত বছর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার
করেছে তাকে।

প্রথমে দেহরাদূনের দূন স্কুল, তার পরে দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ থেকে পাশ করে ১৯৯৩ সালে উত্তরপ্রদেশের রামপুরে মাংস রফতানির জন্য জবাইখানা খুলেছিল কুরেশি। ৪-৫ বছরেই দেশের সব থেকে বড় মাংস রফতানিকারী
হয়ে ওঠে তার সংস্থা। তদন্তকারীদের বক্তব্য, নামী স্কুল-কলেজে পড়ার সুবাদে প্রাক্তনী সংগঠনের সঙ্গে সুসম্পর্ককে সুকৌশলে ব্যবসা বাড়ানোর কাজে লাগাত সে। আড়ালে চালাত বেআইনি লেনদেন। বিদেশে মাংস রফতানির সুযোগে হাওয়ালা লেনদেনের চক্র গড়ে তুলেছিল কুরেশি। যার মাধ্যমে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে কয়েকশো কোটি টাকা বেআইনি ভাবে
বিদেশে গিয়েছে বলে জানতে
পেরেছে আয়কর দফতর। তাদের মতে, ঘোষিত সম্পত্তি ছাড়াও ভারতে প্রায় ২০০ কোটি টাকার বেনামি সম্পত্তি রয়েছে কুরেশির। আরও কয়েকশো কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে ব্রিটেন, হংকং, দুবাই ও আমেরিকায়।

Advertisement

সন্ত্রাসে জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে কুরেশির বিরুদ্ধে। ব্যবসার কাজে প্রায়ই পাকিস্তানে
যেত সে। গোয়েন্দাদের দাবি, হাওয়ালার মাধ্যমে পাকিস্তানে টাকা পাঠাত। ভারত-বিরোধী কার্যকলাপে যা ব্যবহার হত। পাকিস্তানের একাধিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত থাকার প্রমাণ মিলেছে কুরেশির বিরুদ্ধে।

নিজের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ থেকে বাঁচতে ইউপিএ জমানায় সিবিআইয়ের নিয়োগেও হস্তক্ষেপ শুরু করে কুরেশি। সিবিআইয়ের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলার নীতি নেয়। ২০১২ সালে সিবিআই প্রধান এ পি সিংহ অবসর নেওয়ার পরেই ইউপিএসসি-র সদস্য হিসেবে যোগ দেন। যা কুরেশির হস্তক্ষেপেই হয়েছিল বলে মত গোয়েন্দাদের।

পরে মোদী সরকার এসে এ পি সিংহকে ওই পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এ পি-র পরে সিবিআই প্রধান হন রঞ্জিত সিন্‌হা। পরে রঞ্জিত সিন‌্‌হার ‘ভিজিটরস বুক’ থেকে জানা যায়, সিবিআই-প্রধানের সঙ্গে ১৫ মাসে ৭০বার দেখা করেছিল কুরেশি। মাঝে মধ্যে কুরেশির স্ত্রীও দেখা করে যেতেন রঞ্জিতের সঙ্গে। এ-হেন কুরেশির সঙ্গে আস্থানার যোগ সামনে আসায় নিঃসন্দেহে
তা বিড়ম্বনায় ফেলল মোদী সরকারকে। যার পিছনে অবশ্য বিদায়ী সিবিআই প্রধান অলোক বর্মার হাত দেখছেন অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন