—ফাইল চিত্র।
ভোট প্রচারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে এ বার বস্ত্রশিল্পকেই পাখির চোখ করছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
লোকসভা ভোটের আগে মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বছরে ২ কোটি নতুন চাকরির বন্দোবস্ত হবে। তিন বছরে সেই লক্ষ্যের ধারে কাছেও যেতে পারেনি মোদী সরকার। বিরোধীদের অভিযোগ, আর্থিক বৃদ্ধির হারে ভারত বিশ্ব সেরা বলে মোদী সরকার ঢাক পেটাচ্ছে। কিন্তু চাকরি তৈরি হচ্ছে না। এই ধাঁধার সমাধানে বস্ত্রশিল্প হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টারা। নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষ অরবিন্দ পানগঢ়িয়া দাবি করেছেন, “অন্যান্য কারখানার থেকে বস্ত্রশিল্পে অপেক্ষাকৃত কম লগ্নিতে অনেক বেশি সংখ্যায়, ভালো চাকরির সুযোগ তৈরি সম্ভব।”
গাঁধীনগরে বস্ত্রশিল্পের প্রথম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলন ‘টেক্সটাইল ইন্ডিয়া ২০১৭’-র মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে তারই চেষ্টা শুরু করে দিল স্মৃতি ইরানির বস্ত্র মন্ত্রক।
কৃষির পরেই এ দেশে সব থেকে বেশি কর্মসংস্থান হয় বস্ত্রশিল্পে। প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ভাবে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। অনুসারী শিল্পে আরও বেশি। এই শিল্পে আগের চেয়ে অনেক বেশি লগ্নি টানা সম্ভব বলে মনে করছে বস্ত্র মন্ত্রক।
তিন দিনের সম্মেলনের শেষে বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি আজ বলেন, “এই প্রথম শিল্পমহল ও মন্ত্রকের অফিসারদের নিয়ে একটি টাস্ক ফোর্স তৈরি হয়েছে। লগ্নিকারীরা কোনও সমস্যায় পড়লে তার সমাধান করবে এই টাস্ক ফোর্স।”
বস্ত্রশিল্পকে কতখানি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তা বোঝাতে এ দিন মুখ খোলেন বেঙ্কাইয়া নায়ডু। তাঁর বক্তব্য, এই মন্ত্রককে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেই স্মৃতিকে এর ভার দেওয়া হয়েছে। মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে সরিয়ে বস্ত্র মন্ত্রকে পাঠানো হয়েছিল স্মৃতিকে। সে সময়ে মনে করা হয়েছিল, নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়ায় স্মৃতির গুরুত্ব কিছুটা কমানো হলো। কিন্তু বেঙ্কাইয়ার যুক্তি, কাউকে কোণঠাসা করতে বস্ত্র মন্ত্রকে পাঠানোর মতো ঘটনা আগের জমানায় হতো।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলে বিশেষ কর্মসংস্থান ক্ষেত্র বা ‘কোস্টাল এমপ্লয়মেন্ট জোন’-এর রূপরেখা তৈরির কাজ শুরু করেছে নীতি আয়োগ। পানগঢ়িয়ার যুক্তি, চিনের শেনঝেন, গুয়াংদং প্রদেশের ধাঁচে উপকূলবর্তী অঞ্চলে শিল্পায়নের কাজ হবে। সেখানেও বস্ত্রশিল্প প্রধান ভূমিকা নেবে।
আরও পড়ুন:পিটুনির খোঁচায় প্রশংসার মলম
শুধু বস্ত্রশিল্প নয়। বস্ত্রশিল্পে উন্নতি হলে, কৃষি, সুতো শিল্প, পোশাক, ফ্যাশন, রফতানি— সব শিল্পেরই উন্নতি হবে। স্মৃতি জানান, নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগেই ‘ফার্ম টু ফাইবার, ফাইবার টু ফ্যাশন, ফ্যাশন টু ফরেন’-এর মন্ত্র দিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ীই এ বার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলি একসঙ্গে কাজ করবে।
গাঁধীনগরে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন এ দিন বলেন, “বস্ত্রশিল্পে ভারতের আসল শক্তি হল গ্রামের শিল্পী, নকশাকার, তাঁতিরা। তাঁরা যাতে অন্য পেশায় চলে না যান, তা দেখতে হবে।”
দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ (স্কিল ডেভেলপমেন্ট) দফতরের মন্ত্রী রাজীবপ্রতাপ রুডি বলেন, “এই সব শিল্পীদের কুশলতা যাতে তাঁদের পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের সঙ্গে অন্যেরাও আয়ত্ত করতে পারেন, সে দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে।”
এই সব শিল্পীরা মূলত বাড়িতে বসে কাজ করেন। যাঁরা কার্পেট বোনেন, তাঁরাও কোনও কারখানায় গিয়ে কাজ করেন না। ফলে অন্যান্য শিল্পসংস্থার জন্য প্রযোজ্য শ্রম আইনের আওতায় এঁরা পড়েন না। শিল্পমহল থেকে তাই দাবি উঠেছে, এই সব শিল্পীদের জন্য শ্রম আইনে বিশেষ বন্দোবস্ত হোক। শিল্পমহলের থেকে নির্দিষ্ট প্রস্তাব এলে তা খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নির্মলা সীতারমন।