জারি কার্ফু। মোটরবাইক আটকে চলছে তল্লাশি। বৃহস্পতিবার শ্রীনগরে। ছবি: পিটিআই।
পাকিস্তানের উস্কানি তো রয়েছেই। কিন্তু কাশ্মীরে সাম্প্রতিক একটানা অশান্তির পিছনে যে বাহিনীর হাতে থাকা ছররা গুলির বন্দুকের বড় ভূমিকা রয়েছে তা পরোক্ষে স্বীকার করে নিল কেন্দ্র। তাই ভবিষ্যতে উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে প্রাণঘাতী নয় এমন কোনও অস্ত্রের কথা বিবেচনা করতে কমিটি গঠন করল নরেন্দ্র মোদী সরকার। দু’মাসের মধ্যে সরকারকে রিপোর্ট জমা দেবে ওই কমিটি।
এরই মধ্যে আজ সাউথ ব্লকের রক্তচাপ বাড়িয়ে পাক-চিন সীমান্তে যৌথ টহলদারি করেছে দু’দেশের সেনা। এরপরেই ক্ষুব্ধ ভারত অবিলম্বে অধিকৃত কাশ্মীর থেকে পাকিস্তানকে সরে যাওয়ার জন্য বার্তা দিয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীর সরকার ও কেন্দ্রের কর্তারা ঘরোয়া আলোচনায় স্বীকার করছেন, জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পরে যে গোলমাল হবে তা আঁচ করতে পেরেছিল প্রশাসন। কিন্তু পরিস্থিতি যে এ ভাবে হাতের বাইরে চলে যাবে তা গোয়েন্দারা বুঝতে পারেননি। উত্তেজিত জনতার মোকাবিলায় ছররা গুলির ব্যবহার পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করেছে বলে দাবি করেছে নানা শিবির। কারণ ছররায় মানুষ আহত হন। চোখও নষ্ট হয়ে যায়। তাতে বিক্ষোভকারীরা আরও তেতে ওঠে। এ দিন শ্রীনগরে কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদল বৈঠকেও ছররা ব্যবহার বন্ধ করার দাবি উঠেছে।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী চলতি বিক্ষোভের জেরে কাশ্মীরে এখনও পর্যন্ত ৩৮ জন মারা গেলেও বেসরকারি মতে সংখ্যাটি ৪০ ছাড়িয়েছে। আহত ২১৮০ । আহতদের মধ্যে অধিকাংশই হাসপাতালে ভর্তি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের মতে, খুব প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বাহিনীকে শরীরের নির্দিষ্ট অংশ লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ছররা গুলির উপরে বন্দুকধারীর নিয়ন্ত্রণ কম থাকে। তাই ওই গুলি শরীরের কোথায় লাগবে তা নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় না।
মেহবুবা মুফতি সরকারের অনুরোধে আপাতত কাশ্মীরে ছররা গুলির বন্দুক ব্যবহার করছে না নিরাপত্তা বাহিনী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এ দিন বলেছেন, ‘‘ছররার পরিবর্তে প্রাণঘাতী নয় এমন কী অস্ত্র ব্যবহার করা যায় তা দেখতে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। যারা দু’মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেবে।’’ কংগ্রেসের দাবি, কাশ্মীরে যথেচ্ছ গুলি চালানো হয়েছে। সে কথা উড়িয়ে দিয়েছেন রাজনাথ। তাঁর মতে, উপত্যকায় অশান্তিতে পাকিস্তানই মদত দিচ্ছে। গত কাল কাশ্মীর নিয়ে কালা দিবস পালন করেছে পাকিস্তান। ফলে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে বড় মাপের বিক্ষোভের আয়োজন করেছিল বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জঙ্গি সংগঠন।
আজ আবার চিনা-পাক সীমান্তে প্রথম যৌথ টহলদারির আয়োজন করেছে দু’দেশ। কাশ্মীর নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে ভারতকে আরও চাপ দেওয়াই এর উদ্দেশ্য বলে মনে করছে সাউথ ব্লক। এর পরেই পাকিস্তানকে নিশানা করে বিদেশ মন্ত্রক। মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ জানিয়েছেন, কাশ্মীরে অশান্তিতে মদত দিচ্ছে পাকিস্তান। তাদের উচিত বেআইনি ভাবে দখল করে রাখা অধিকৃত কাশ্মীর থেকে অবিলম্বে নিজেদের সেনা সরিয়ে নেওয়া। কাশ্মীরে অশান্তি ছড়াতে রাষ্ট্রপুঞ্জের তালিকায় থাকা জঙ্গিদেরও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছে বিদেশ মন্ত্রক। তাদের মতে, যে জঙ্গি নেতারা গত কয়েক দিন ধরে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে বিক্ষোভ-মিছিল করছে তারা ওসামা বিন লাদেন ও তালিবান নেতা আখতার মনসুরকে হত্যা করারও বিরোধিতা করেছিল।