Fuel Price

দীপাবলির আগেই জ্বালানি তেলের দর কমানোর ভাবনা কেন্দ্রের

অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালেও এই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তেলের উৎপাদন শুল্ক কমিয়ে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম কমানো হয়েছিল।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:৫৭
Share:

—প্রতীকী ছবি।

প্রথমে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম ২০০ টাকা কমানো। তার পরে আগামী পাঁচ বছর বিনামূল্যে রেশনের ঘোষণা। রাজনৈতিক শিবির মনে করছে, এ বার পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটকে পাখির চোখ করে মোদী সরকার পেট্রল ও ডিজ়েলের দাম কমানোর পথে হাঁটতে পারে। ভোটের দিকে লক্ষ্য রেখে সিদ্ধান্ত হলেও তা আমজনতার জন্য ‘দীপাবলির উপহার’ হিসেবে প্রচার করা হবে।

Advertisement

সরকারি সূত্রের বক্তব্য, সামান্য হলেও পেট্রল, ডিজ়েলের দাম কমানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বস্তুত তেল মন্ত্রক বেশ কিছু দিন ধরেই জ্বালানির দাম কমানোর পক্ষে সওয়াল করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত নিলে, তেলের উপর উৎপাদন শুল্ক ছাঁটাই করেই পেট্রল, ডিজ়েলের দাম কমানো হতে পারে। বিজেপি নেতাদের মতে, আগামী বছর লোকসভা ভোটের আগে হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্য, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানে বিজেপি কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছে। তার সঙ্গে তেলঙ্গানা, মিজ়োরামে বিজেপি সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে নেই। এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই সাধারণ মানুষকে সুরাহা দেওয়ার দাবি তুলছেন। মোদী সরকারও সেই পথেই হাঁটছে।

বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটের মুখে নানা রকম সুরাহার কথা ঘোষণা করে নরেন্দ্র মোদী নিজেই প্রমাণ করছেন, আমজনতা কতখানি আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে রয়েছেন। তাই তাঁকে ১৪০ কোটি ভারতীয়ের মধ্যে ৮০ কোটি মানুষকে পাঁচ বছরের জন্য বিনামূল্যে রেশনের কথা বলতে হচ্ছে। এখন তিনি রান্নার গ্যাসের দাম কমানোর পরে মানুষের মন জিততে তেলের দাম কমানোর কথাও ভাবছেন।

Advertisement

অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালেও এই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তেলের উৎপাদন শুল্ক কমিয়ে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম কমানো হয়েছিল। সে বার কেন্দ্রীয় সরকার লিটার প্রতি দেড় টাকা হারে শুল্ক কমিয়েছিল। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলিকে এক টাকা কমাতে বলা হয়েছিল। সব মিলিয়ে লিটারপিছু আড়াই টাকা করে জ্বালানির দাম কমেছিল। সরকারি সূত্রের যুক্তি, শুধু ভোটের জন্য নয়। দু’বছর আগে, ২০২১-এও দীপাবলির আগে পেট্রলের উৎপাদন শুল্ক লিটার প্রতি ৫ টাকা ও ডিজ়েলে ১০ টাকা কমানো হয়েছিল। তার জেরে বাজারে পেট্রলের দাম প্রতি লিটারে ৬ থেকে ৭ টাকা, ডিজ়েলের দাম ১১ থেকে ১২ টাকা কমেছিল।

একই পথে হেঁটে এ বারও দীপাবলির আগে পেট্রল, ডিজ়েলের দাম কমানো হলে, তার পরিমাণ কতখানি হবে, তা নিয়ে অবশ্য কেউই মুখ খুলতে রাজি নন। জেএম ফিনান্সিয়ালসের মতো ব্রোকারেজ সংস্থা অবশ্য সেপ্টেম্বর মাসে পূর্বাভাস করেছিল, পেট্রল-ডিজ়েলের দাম ৩ টাকা থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত কমানো হতে পারে। বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, রাখিবন্ধনের আগে ‘মহিলাদের জন্য উপহার’ রান্নার গ্যাসের দাম কমানো হয়েছিল। শুক্রবার ছত্তীসগঢ়ে ভোট প্রচারে গিয়ে মোদী আগামী পাঁচ বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনায় পাঁচ বছরের জন্য বিনামূল্যে রেশনের ঘোষণা করেছেন। এ বার পেট্রল-ডিজ়েলের দামও কমানো উচিত।

কংগ্রেস তথা বিরোধী নেতাদের বক্তব্য, বিরোধী শাসিত রাজ্য সরকার আমজনতার জন্য সুরাহা, ভর্তুকি, ভাতা ঘোষণা করলে নরেন্দ্র মোদী তাকে খয়রাতি বিলির (রেউড়ি বা গুড়ের মিষ্টি বিলির) সংস্কৃতি বলে আক্রমণ করেছেন। এখন কংগ্রেসের বিভিন্ন রাজ্যে আমজনতার সুরাহার গ্যারান্টির চাপে তিনি নিজেই খয়রাতি শুরু করেছেন। ভোটের মধ্যে বিনামূল্যে রেশনের ঘোষণা করে মোদী আদর্শ আচরণবিধি ভেঙেছেন বলেও তৃণমূলের অভিযোগ।

কোভিডের সময় প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা ঘোষণা করে বিনামূল্যে বাড়তি রেশন দিয়েছিল মোদী সরকার। পরে বাড়তি রেশন বন্ধ করা হলেও জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় থাকা ৮০ কোটি মানুষকেই ওই যোজনায় বিনামূল্যে রেশনের দেওয়ার ঘোষণা করে মোদী সরকার। এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত তার মেয়াদ ছিল। শুক্রবার ছত্তীসগঢ়ের দুর্গে গিয়ে মোদী জনসভা থেকে ঘোষণা করেন, আগামী পাঁচ বছর এই যোজনা চালু থাকবে। বিরোধীদের জাতগণনার দাবির মুখে গরিবরাই সব থেকে বড় জাত বলেও মন্তব্যকরেন মোদী।

শনিবার মধ্যপ্রদেশের সিওনিতে ভোটের প্রচারে মোদী বলেন, “আমি নিজে দারিদ্র থেকে উঠে এসেছি। তাই দারিদ্র কী, তা আমাকে বই পড়ে জানতে হয় না। আমি গরিবের যন্ত্রণা বুঝি। তাই আপনাদের পুত্র, আপনাদের ভাই, আপনাদের সেবক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনায় পাঁচ বছর নিখরচায় রেশনদেওয়া হবে।”

কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ একে মোদীর ‘ইউ-টার্ন’ বা ডিগবাজি বলে কটাক্ষ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা আসলে ইউপিএ সরকারের জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের নামান্তর। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যার ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন মোদী। এ বার সেই যোজনার মেয়াদ বাড়ানো থেকে স্পষ্ট, মোদী সরকার নিজেই দেশে ক্রমবর্ধমান আর্থিক দুরবস্থা, অর্থনৈতিক অসাম্য মেনে নিচ্ছে। যে হারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, সেই হারে দেশের বড় অংশের মানুষের আয় বাড়েনি। কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, আগামী পাঁচ বছরের জন্য ১৪০ কোটি মানুষের মধ্যে ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার ঘোষণা করে মোদী বুঝিয়ে দিলেন, আগামী পাঁচ বছরও তাঁরা গরিবই থাকবেন।

তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখলের অভিযোগ, পাঁচ বছরের জন্য রেশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। মোদী তা অন্য সময় ঘোষণা না করে বিজেপির জনসভায় ঘোষণা করেছেন। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম বলে, নির্বাচনের সময় এই ধরনের ঘোষণা ভোটারদের প্রভাবিত করে। এ বিষয়ে ছত্তীসগঢ়ের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিককে চিঠি পাঠিয়েছেন গোখলে।

কংগ্রেস ইতিমধ্যেই ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, তেলঙ্গানায় ক্ষমতায় এলে কম দামে সিলিন্ডার থেকে বেকার ভাতার মতো একগুচ্ছ গ্যারান্টির কথা ঘোষণা করেছে। রমেশ বলেন, মোদী সরকারের জনবিরোধী আর্থিক নীতি থেকে সুরাহা দিতেই কংগ্রেসের এই সব গ্যারান্টির পরিকল্পনা। প্রধানমন্ত্রী গত এক বছর ধরে এই সব গ্যারান্টিকে ‘রেউড়ি’ বলে সমালোচনা করছিলেন। এখন তাঁর দল নির্লজ্জের মতো কংগ্রেসের নকল করছে। মোদীর দ্বিচারিতার কোনও সীমা নেই। এটা তারই উদাহরণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন