আগামী এক দশকের মধ্যে ২০ মিলিয়ন পাউন্ড সংগ্রহ করে ভারতে হাতি চলাচলের ১০০টি রাস্তা বা এলিফ্যান্ট করিডর সুরক্ষিত করতে লন্ডনে হাত মেলালো বিশ্বের পাঁচটি পশুপ্রেমী সংগঠন। লন্ডনের ল্যাঙ্কাস্টার হাউসে রাজকুমার চার্লস (প্রিন্স অফ ওয়েল্স) ও ক্যামিলা (ডাচেস অফ কর্নওয়াল) এবং ইংল্যান্ডে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রাজন মাথাইয়ের উপস্থিতিতে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই পাঁচটি সংগঠন হল ভারতের ডব্লিউটিআই, নেদারল্যান্ডসের আইইউসিএন, আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার, ইংল্যান্ডের ওয়ার্ল্ড ল্যান্ড ট্রাস্ট এবং এলিফ্যান্ট ফ্যামিলি।
ভারত সরকারের তরফে ২০১৪ সালের যে ফরেস্ট রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে সেই অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে কেবল উত্তর-পূর্ব ভারতেই ৬২৭ বর্গকিলোমিটার অরণ্য ধ্বংস হয়েছে. যার বিরাট প্রভাব পড়েছে হাতিদের উপরে। সেই সঙ্গে ক্রমাগত নগরায়ন ও শিল্পায়নের ধাক্কায় এলিফ্যান্ট করিডরগুলি দখল হয়ে গিয়েছে। সেখানে গড়ে উঠেছে রাস্তা, গ্রাম, কারখানা বা রেললাইন।
বিশ্বের মোট এশীয় হাতির মধ্যে অর্ধেকের বাস ভারতে। ডব্লিউটিআই জানায়, তারা ভারত সরকারের বন দফতরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশের ১০০টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতি করিডর চিহ্নিত করেছে। ডব্লুটিআইয়ের কার্যনির্বাহী অধিকর্তা বিবেক মেনন বলেন, ‘‘২০০১ থেকে উত্তর-পূর্ব সমেত ভারতের বিভিন্ন এলাকায় হাতি চলাচলের রাস্তা নিরাপদ করার কাজ চালাচ্ছি আমরা। কর্নাটক, কেরল, মেঘালয়ে তিনটি করিডর পুরোপুরি সুরক্ষিত করা হয়েছে। এতে দীর্ঘ দিনের প্রয়াস, দর কষাকষি, গ্রাম স্থানান্তরকরণের প্রয়োজন। বর্তমানে আমরা কাজিরাঙায় চারটি হাতি চলাচলের রাস্তা সুরক্ষিত করার কাজ চালাচ্ছি। এই কাজে একক প্রচেষ্টার চেয়ে যৌথ প্রচেষ্টা সবসময় অধিক কার্যকরী। তাই, বিশ্বের পাঁচটি সংগঠন একসঙ্গে ভারতের হাতি বাঁচাতে হাত মেলানো এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা।’’
তিনি জানান, জঙ্গল কমার জেরে প্রতি বছর ভারতে হাতি-মানুষ সংঘাতে গড়ে অন্তত ৪০০ মানুষ ও ৫০টি হাতির প্রাণ যায়। বাঘের ক্ষেত্রে তাদের প্রায় পুরো চারণভূমিই সংরক্ষিত এলাকায় পড়ে। কিন্তু, হাতিদের চারণভূমির মাত্র ২২ শতাংশ সংরক্ষিত এলাকায়। তাই হাতিদের নিরাপত্তা নেই বললেই চলে। খাদ্যের অভাবে তারা মানববসতিতে আসতে থাকে। সংঘাতও বাড়ে। এই পরিস্থিতিতে অন্তত এক অরণ্য থেকে অন্য অরণ্য অবধি তাদের যাতায়াতের রাস্তাটুকু সুরক্ষিত করতে পারলেও অনেক লাভ। এলিফ্যান্ট ফ্যামিলি-র সিইও রুথ পইজ বলেন, ‘‘আমরা পাঁচটি সংগঠন হাত মিলিয়ে আধুনিক যুগের উপযোগী সংরক্ষণ প্রণালী গড়ে তুলতে চাই।’’
ছবি: ডব্লিউটিআই এবং রয়টার্স।