মাওয়ের চিন এখন সাম্রাজ্যবাদী! বলছেন এ দেশের মাওবাদীরা

দলিল লিখে চিনকে ‘একটি নয়া সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি’ আখ্যা দিয়েছে সিপিআই (মাওবাদী)। ওই ৭৬ পৃষ্ঠার দলিলের শিরোনামে লেখা হয়েছে, চিন ‘বিশ্বের পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থারই অংশ’

Advertisement

রোশনী মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:৪৬
Share:

এক কালে স্লোগান ছিল ‘চিনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান’! সোভিয়েত আর চিনের মধ্যে দ্বিতীয় মডেলকে সামনে রেখেই পাঁচ দশক আগে শুরু হয়েছিল নকশালপন্থীদের পথ চলা। পঞ্চাশ বছর পরে আজকের চিনকে সরাসরি ‘সাম্রাজ্যবাদী’ তকমা দিলেন তাঁদেরই উত্তরসূরিরা। যাঁদের দলই চলে চিন বিপ্লবের নায়কের নামে!

Advertisement

দলিল লিখে চিনকে ‘একটি নয়া সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি’ আখ্যা দিয়েছে সিপিআই (মাওবাদী)। ওই ৭৬ পৃষ্ঠার দলিলের শিরোনামে লেখা হয়েছে, চিন ‘বিশ্বের পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থারই অংশ’। ভারতের রাজনৈতিক শিবিরের একটি বড় অংশ অবশ্য মনে করে, বিশ্বের বাণিজ্যে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে চিন মাও জে দঙের পথ ছেড়ে ঠিকই করেছে। এর ফলেই মার্কিন শক্তির চোখে চোখ রেখে কথা বলার মতো অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক শক্তি অর্জন করতে পেরেছে তারা। তবু বামপন্থী আদর্শগত দৃষ্টিকোণ থেকে মাওবাদীদের চিন সম্পর্কিত মূল্যায়ন তাৎপর্যপূর্ণ বৈকি!

মাওবাদী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বিশ্লেষণের ফসল ওই দলিল তৈরি হয়েছে গত বছর, অর্থাৎ ২০১৭ সালে। ঘটনাচক্রে, যে বছর নকশালবাড়ি আন্দোলনের সুবর্ণ জয়ন্তী হয়েছে। তবে এত দিন তেলুগু ছাড়া অন্য কোনও ভাষায় তা প্রকাশ করা হয়নি। অতি সম্প্রতি নিজেদের এই বিশ্লেষণ সমাজে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছে সিপিআই (মাওবাদী)।

Advertisement

দলিলের মুখবন্ধে মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটি জানিয়েছে, ‘সাম্রাজ্যবাদী’ চিন দুনিয়ার নির্যাতিত মানুষের শত্রু। বলা হয়েছে, বিশ্ব জুড়ে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের লক্ষ্যে যারা লড়ছে, সেই মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী এবং মাওবাদী দলগুলির যুদ্ধের নিশানা হবে এই চিন। মাওবাদীদের মতে, ‘সাম্রাজ্যবাদী’ চিন পিছিয়ে পড়া এবং অন্যান্য দেশে যুদ্ধাস্ত্র ও পুঁজি রফতানি এবং অসম বাণিজ্য চাপিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে সেই দেশগুলির প্রাকৃতিক সম্পদকে গ্রাস করছে। ওই সব দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়েও নাক গলাচ্ছে তারা। এমনকি, ওই সব দেশে সামরিক ঘাঁটি গড়ে তোলার জন্য উপযুক্ত সুযোগেরও অপেক্ষা করছে। বস্তুত, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছে চিন।

বস্তুত, চিনকে আর সমাজতান্ত্রিক বলা যায় কি না, তা নিয়ে সিপিএম-সহ ভারতের সব কমিউনিস্ট দলগুলির মধ্যেই বিতর্ক আছে। তবে সিপিএমের ঘোষিত মতে এখনও চিন সমাজতান্ত্রিকই। চিনা কমিউনিস্ট পার্টি অবশ্য তাদের দেশকে ‘চৈনিক বৈশিষ্ট্য সমেত সমাজতান্ত্রিক’ আখ্যা দিয়েছে। কিন্তু মাওবাদী তাত্ত্বিকেরা ওই অভিধা নিয়েও তীব্র কটাক্ষ করেছেন তাঁদের দলিলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন