‘পোষা’ কেউটেই কাল বুদ্ধিনাথের

বুদ্ধিনাথ টুডু মানুষটা ছিল বড় একা। স্ত্রী ও ছেলে মারা যাওয়ার পর একাকীত্ব ঘিরেছিল তাঁকে। তাই ঘাটশিলার চাকুলিয়া গ্রামের প্রত্যন্ত গ্রামের ওই প্রৌঢ় ‘বন্ধু’ করেছিলেন তিনটে কেউটে সাপকে!

Advertisement

আর্যভট্ট খান

রাঁচি শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৬ ০৩:৫৪
Share:

বুদ্ধিনাথ টুডু

বুদ্ধিনাথ টুডু

Advertisement

মানুষটা ছিল বড় একা। স্ত্রী ও ছেলে মারা যাওয়ার পর একাকীত্ব ঘিরেছিল তাঁকে। তাই ঘাটশিলার চাকুলিয়া গ্রামের প্রত্যন্ত গ্রামের ওই প্রৌঢ় ‘বন্ধু’ করেছিলেন তিনটে কেউটে সাপকে!

তিন বছর ধরে বাড়িতে সাপগুলি পুষছিলেন বুদ্ধিনাথ টুডু। কিন্তু শেষে একটির ছোবলেই মৃত্যু হল তাঁর।

Advertisement

বছর তিনেক আগে মৃত্যু হয়েছিল বছর পঞ্চাশের দিনমজুর বুদ্ধিনাথের ছেলের। তার পরই কেমন যেন হয়ে যান তিনি। এক দিন গ্রামের লাগোয়া জঙ্গল থেকে তিনটে কেউটে সাপ ধরে আনেন। সেগুলিকে রেখে দেন ঝুড়িতে। আতঙ্কিত পড়শিরা অনেক বার তাঁকে সাপগুলি জঙ্গলেই ছেড়ে দিয়ে আসতে বলেছিলেন। আপত্তিতে লাভ হয়নি। গত বছর বুদ্ধিনাথের স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে সাপগুলিই যেন এক মাত্র ‘বন্ধু’ হয়ে ওঠে তাঁর। এমনই কথা পাড়াপড়শিদের বলতেন বুদ্ধিনাথ।

কিন্তু আদপে যে তা ছিল না, তার প্রমাণ মিলল কাল। চাকুলিয়া গ্রামের বাসিন্দারা জানান, সকালে পোষ্যগুলিকে ডিমসেদ্ধ খাওয়াচ্ছিলেন ওই প্রৌঢ়। তখনই একটি সাপ তাঁর ডান হাতে ছোবল মারে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। প্রৌঢ়ের পড়শি ঘনশ্যাম টুডু বলেন, ‘‘উনি বলতেন, বড় একা হয়ে গিয়েছি। সাপ তিনটে রয়েছে বলে সময় কাটে।’’

এক গ্রামবাসী জানান, তাঁরা বুদ্ধিনাথকে কুকুর পুষতে বলেছিলেন। সে কথা কানে তোলেননি তিনি। ভাঙাচোরা ঘরে তিনটে ঝুড়িতে ছিল সাপগুলি।। ভয়ে সহজে বুদ্ধিনাথের বাড়ির ত্রিসীমানায় ঘেঁষতেন না কেউ। গ্রামবাসী রামবাবু টুডু বলেন, ‘‘সাপগুলিকে হাতে নিয়ে ঘোরাঘুরি করতেন। সেই ছবিও তুলেছিলাম। সেটা দেখে উনি কী খুশি! ’’

কী ঘটেছিল কাল? গ্রামবাসীরা জানান, সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ডান হাতের কব্জি চেপে এক পড়শির বাড়িতে যান বুদ্ধিনাথ। বলেন— তাঁকে একটা কেউটে ছোবল মেরেছে। তার পরই এলিয়ে পড়েন মাটিতে। আর জ্ঞান ফেরেনি।

বুদ্ধিনাথের এই সর্প-প্রেমের কারণ খুঁজে পাননি গ্রামবাসীরা। তবে তাঁর মৃত্যু অনেকে মেনে নিতে পারছেন না। প্রশ্ন তুলছেন— সত্যিই কী সাপ কামড়েছিল বুদ্ধিনাথকে? নাকি একাকীত্ব শেষ করতে ইচ্ছা করেই ছোবল খেয়েছেন তিনি? উত্তর মেলেনি। কখনও মিলবেও না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন