জঞ্জাল রুখতে পথে এক দিনের পুর-কমিশনার

নিকিতাকে স্বাগত জানাতে তখন পুরসভায় সাজো সাজো রব। নিকিতার গাড়ি ঢুকতেই বেজে উঠল ব্যান্ড। পুর-প্রতিনিধিরা তাঁর হাতে তুলে দিলেন ফুলের তোড়া।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রাঁচী শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫৭
Share:

স্বাগত: ধানবাদ পুরসভায় নিকিতা। ছবি: চন্দন পাল।

অন্য দিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে কলেজ যেতে অটোরিকশা ধরেন ধানবাদের কালীমন্দির রোডের বেকারবাঁধের ছাত্রী নিকিতা শর্মা। আজ একেবারে অন্যরকম হলো। সকাল ১০টায় তাঁর বাড়ির দরজায় পৌঁছল পুর-কমিশনারের গাড়ি। নিকিতা ঘর থেকে বেরোতেই স্যালুট ঠুকে গাড়ির দরজা খুলে দিলেন দেহরক্ষী। গাড়ি ছুটলো ধানবাদ পুরসভার দিকে।

Advertisement

নিকিতাকে স্বাগত জানাতে তখন পুরসভায় সাজো সাজো রব। নিকিতার গাড়ি ঢুকতেই বেজে উঠল ব্যান্ড। পুর-প্রতিনিধিরা তাঁর হাতে তুলে দিলেন ফুলের তোড়া।

হবে না-ই বা কেন, ধানবাদের শ্রী শ্রী লক্ষ্মীনারায়ণ ট্রাস্ট মহাবিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্রী নিকিতা আজ যে ছিলেন পুর-কমিশনার। এক দিনের জন্যে হলেও বা! অনেক সিঁড়ি পেরিয়ে তবেই ওই চেয়ারে বসার সুযোগ পেলেন তিনি। পরিবেশের স্বচ্ছতা নিয়ে ধানবাদের বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল পুরসভা। বিজয়ীদের ডাকা হয় ইন্টারভিউয়ে। তাতে অন্যদের টপকে এক দিনের পুর-কমিশনার হওয়ার সুযোগ পান নিকিতা।

Advertisement

এক দিনের জন্য পুর-কমিশনার হলেও, অনেক কাজের ভাবনা ছিল তাঁর। কী কী কাজ তিনি এক দিনে করতে চান, আগেই তার তালিকা তৈরি করে নিয়েছিলেন। বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে নিকিতা বলেন, ‘‘আমি স্বচ্ছতার উপরেই জোর দেব। শহরে যানজট কী ভাবে কমানো যায়, সে কথাও ভাবছি।’’

পুর-কমিশনারের ঘরে ঢুকেই সময় নষ্ট না করে পুর-প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসে যান তিনি। বিভিন্ন ওয়ার্ডের সমস্যার কথা শুনে, সে সবের সমাধান কী ভাবে হতে পারে, তা নিয়ে কথাবার্তা বলেন। ধানবাদের একটি ওয়ার্ডের পুর-প্রতিনিধি মনসুর আলম বলেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডে নর্দমায় জমে থাকা জঞ্জালের কথা ওঁকে বলি। ওঁর পরামর্শ শুনে মনে হলো, অভিজ্ঞ কোনও অফিসার কথা বলছেন।’’ অফিসেই বসে ছিলেন না নিকিতা। সমস্যা দেখতে গাড়ি নিয়ে শহর ঘুরতে বের হন। দোকানে দোকানে ঢুকে দোকানদারদের প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করতে নিষেধ করেন। ফের তা ব্যবহার করা হচ্ছে দেখলে, জরিমানা নিয়ে দোকান বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন। রাস্তায় উপচে পড়া জঞ্জাল দেখলেই দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল তাঁর গাড়ি। সাফাইকর্মীদের সঙ্গেও তিনি কথা বলেন। নিকিতা বলেন, ‘‘ওঁদের কাছে সমস্যার কথা শোনা প্রয়োজন। তা হলেই সমাধান খুঁজতে সুবিধা হবে।’’

এমন কাণ্ড দেখে পুরসভার কর্মীদের অনেকেই অবাক। ধানবাদের মিউনিসিপ্যাল কমিশনার রাজীব রঞ্জন বলেন, ‘‘পুর-পরিষেবা আরও ভাল করতে আজকের প্রজন্ম কী ভাবছে, তা জানার জন্যই এই উদ্যোগ। নিকিতার পরামর্শ আমাদের অনেক কাজে লাগবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন