বন্ড বেচে সামলানোর চেষ্টা, এ বার কঠিন হতে পারে রেল বাজেট

যাত্রী ক্ষেত্রে তো বটেই, আর্থিক মন্দায় পণ্য পরিবহণেও আয় নেতিবাচক। প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও নজিরবিহীন ভাবে কমেছে অর্থ মন্ত্রকের সাহায্যের পরিমাণ। এই পরিস্থিতিতে অর্থের জোগান বাড়াতে ফের একপ্রস্থ বন্ড বাজারে ছাড়ল রেল। সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বন্ড বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মন্ত্রক। আশার বিষয় হল, বাজার থেকে প্রায় তিনগুণের কাছাকাছি অর্থ কোষাগারে টেনে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে রেল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১৯:০৭
Share:

যাত্রী ক্ষেত্রে তো বটেই, আর্থিক মন্দায় পণ্য পরিবহণেও আয় নেতিবাচক। প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও নজিরবিহীন ভাবে কমেছে অর্থ মন্ত্রকের সাহায্যের পরিমাণ। এই পরিস্থিতিতে অর্থের জোগান বাড়াতে ফের একপ্রস্থ বন্ড বাজারে ছাড়ল রেল। সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বন্ড বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মন্ত্রক। আশার বিষয় হল, বাজার থেকে প্রায় তিনগুণের কাছাকাছি অর্থ কোষাগারে টেনে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে রেল।

Advertisement

নগদ অর্থের জোগান বাড়াতে বাজারে মাঝে মধ্যেই বন্ড ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে রেল। আর্থিক বছরে শেষ তিন মাসে টাকার ঘাটতি মেটাতে ওই বন্ড ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রক। মন্ত্রক জানিয়েছে, সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বন্ড বেচে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছে রেল। মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘বাজারে রেলের বন্ডের গ্রহণযোগ্যতা বেশি হওয়ায় ‘বেস প্রাইজ’-র তিনগুণ বেশি দামে তা বিক্রি হয়েছে।’’ রেলের বন্ড বিক্রি সংক্রান্ত গোটা বিষয়টির দেখভাল করে ইন্ডিয়ান রেল ফিনান্স কর্পোরেশন (আইআরএফসি)। রেল জানিয়েছে, সংগৃহীত অর্থ রেলের পরিকাঠামো উন্নয়নেই কাজে লাগানো হবে।

কী ভাবে?

Advertisement

মন্ত্রক জানিয়েছে, আইআরএফসি ওই টাকার বিনিময়ে চেন্নাইস্থিত ইন্টিগ্র্যাল কোচ ফ্যাক্টরি থেকে একাধিক নুতন কোচ চুক্তিতে ভাড়া নেবে। যার অধিকাংশ ব্যবহার হবে পণ্য পরিবহণের কাজে। ভাড়ার টাকা মিটিয়ে পণ্য পরিবহণ করে যে বাড়তি অর্থ হাতে থাকবে তা নিজের প্রয়োজনে লাগাবে আইআরএফসি। বাড়তি টাকার একটি অংশ রেলকে দিয়ে বাকি টাকা রেখে দেওয়া হবে বাজারের দেনা মেটানোর জন্য। রেল জানাচ্ছে, অর্থের অভাবে এ ভাবে ঘুরপথ বেছে নেওয়া ছাড়া আর কোনও রাস্তা খোলা নেই তাদের কাছে। এতে এক দিকে নতুন কোচ তৈরি হবে। যার মাধ্যমে পণ্য পরিবহণ করা সম্ভব হবে। কিছু হলেও ঘুরপথে অর্থ আসবে রেলের ঘরে।

সামনেই রেল বাজেট। কিন্তু আয়ের হিসাব-নিকেশ বলছে, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা তো দূর, পণ্য পরিবহণ থেকে যাত্রী-সব ক্ষেত্রেই লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়ার প্রশ্নে ভালরকম ভাবে পিছিয়ে রয়েছে রেল। এই অবস্থায় আসন্ন রেল বাজেটে নতুন কোনও ট্রেন, বা বড় কোনও রেল প্রকল্পের ঘোষণা-আশায় বুক বাঁধতে বারণ করছে রেলমন্ত্রক। উল্টে রেলকর্তারা ধারণা, বাড়তে পারে যাত্রী ভাড়া। বিশেষ করে স্লিপার, সাধারণ শ্রেণি ও শহরতলীর মাসিক টিকিটে যে ভর্তুকি দেওয়া হয় তার অনেকটাই কমানোর বিষয়ে শেষ মুহূর্তের অঙ্ক কষা চলছে রেলমন্ত্রকে। শুধু তাই নয়, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে যাত্রীদের জন্য যে ছাড় (সিনিয়র সিটিজন, পদকধারীদের) রয়েছে সেগুলিতেও ভর্তুকি তুলে দেওয়া যায় কিনা তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে রেলমন্ত্রককে।

রেলের সব থেকে আয় হয় পণ্য পরিবহণ থেকে। রেল সূত্রের খবর, এই আর্থিক বছরে লক্ষ্য মাত্রার চাইতে রেল অনেকটাই কম পণ্য পরিবহণ করেছে। একই ভাবে কমে গিয়েছে যাত্রীর সংখ্যাও। রেল সূত্রের খবর, যাত্রী কমেছে নয়নয় করে ১০ কোটি। ফলে আয়ের ভাঁড়ার প্রায় তলানিতে ঠেকেছে। এ দিকে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খরচ। আন্তর্জাতিক মহলে ডিজেল খরচ কমলেও, বিদ্যুত, বেতন, প্রকল্প খরচ সব বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। ফলে এই মুহূর্তে রেলের অপারেটিং রেশিও এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯৭-এর কাছাকাছি। অর্থাৎ একশো টাকা আয় করতে গিয়ে রেলের খরচ হচ্ছে ৯৭ টাকা। পড়ে থাকা তিন টাকায় করতে হচ্ছে উন্নয়নের কাজ।

গত বাজেটেও একটিও নতুন ট্রেন ঘোষণা করেননি রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। পরে চাহিদা অনুযায়ী একটি-দু’টি করে নিশ্চুপে নতুন ট্রেন চালিয়েছেন প্রভুর মন্ত্রক। বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে পুরনো প্রকল্প শেষ করার দিকে। তাপ বিদ্যুতের দাম বেশি হওয়ায় খরচ কমাতে জোর দেওয়া হচ্ছে গ্যাস থেকে উৎপন্ন বিদ্যুত কেনার উপরে। সম্প্রতি সেন্ট্রাল রেল রত্নগিরি বিদ্যুৎ কেন্দ্র গ্যাস বিদ্যুত কিনে মাসে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা খরচ কমিয়েছে। মন্ত্রকের এই দৃষ্টিভঙ্গিকে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ হিসাবে মন্তব্য করে রেল বোর্ডের প্রাক্তন কর্তারা সুভাষরঞ্জন ঠাকুরের বক্তব্য, ‘‘নতুন কিছু ঘোষণা না করে বরং চালু প্রকল্পগুলি আগে শেষ করা দরকার। শুধু তাই নয়, যে প্রকল্পগুলি থেকে আয় বাড়তে পারে, রেলের উচিৎ ওই প্রকল্পগুলিতে টাকা বরাদ্দ করে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে চালু করে দেওয়া।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন