বিহার

দরজায় নির্বাচন, ফিরল জাতপাতের রাজনীতিও

ভোটের মরশুম ফিরতেই বিহারে ফিরল সেই জাতপাতের রাজনীতি। বছর পাঁচেক আগে কলকাতায় ‘পরিবর্তন চাই’ স্লোগানকে সামনে রেখে ক্ষমতায় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নীতীশ-লালুর জোটকে সরাতে এ বার সেই স্লোগানই দিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। পটনার গাঁধী ময়দান থেকে আজ ‘পরিবর্তন রথ’-এর যাত্রা শুরু করালেন তিনি।

Advertisement

দিবাকর রায়

পটনা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৩:৩২
Share:

পাশাপাশি। পরিবর্তন রথের সূচনায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝি। বৃহস্পতিবার পটনার গাঁধী ময়দানে। ছবি: পিটিআই।

Advertisement

ভোটের মরশুম ফিরতেই বিহারে ফিরল সেই জাতপাতের রাজনীতি।

বছর পাঁচেক আগে কলকাতায় ‘পরিবর্তন চাই’ স্লোগানকে সামনে রেখে ক্ষমতায় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নীতীশ-লালুর জোটকে সরাতে এ বার সেই স্লোগানই দিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। পটনার গাঁধী ময়দান থেকে আজ ‘পরিবর্তন রথ’-এর যাত্রা শুরু করালেন তিনি। পরিবর্তনের ভোট প্রচারের দামামা বাজিয়ে বিজেপি সভাপতি সুকৌশলে উস্কে দিলেন জাতপাতের রাজনীতিকেও।

Advertisement

রামবিলাস পাশোয়ান, জিতনরাম মাঁঝি, উপেন্দ্র কুশওয়াকে পাশে বসিয়ে অমিত শাহ দলিত, মহাদলিত ও পিছড়ে বর্গের অঙ্ক কষা শুরু করলেন। জাতি সংক্রান্ত জনগণনার রিপোর্ট নিয়ে আগাম মুখ খুললেন অমিত শাহ। তাঁর কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওবিসি সম্প্রদায়ের লোক। তিনি চা বিক্রি করতেন। দেশের ভার তাঁর হাতে। কিছু লোক জাতিগত জনগণনার রিপোর্ট নিয়ে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু তাতে তাদের কোনও লাভ হবে না। সব কিছুরই একমাত্র সমাধান উন্নয়ন। সেই পথেই দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী।’’ বিজেপি নেতার দাবি, মোদী সরকার দেশের ৪৬ লক্ষ জাতি, সম্প্রদায় ও গোত্র নিয়ে সমীক্ষা করার পরেই সেই তথ্য প্রকাশ করবে। নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষ অরবিন্দ পানাগড়িয়ার নেতৃত্বে কমিটি তৈরি করা হচ্ছে। সমস্ত রাজ্যের থেকেই সমীক্ষা সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে। কিন্তু বিহার সরকারের তরফে সেই রিপোর্ট দেওয়া হয়নি।

শুধু অমিত শাহ নন, মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রামবিলাস পাশোয়ান ও জিতনরাম মাঁঝিও জাতি সংক্রান্ত জনগণনার রিপোর্ট সময় মতোই প্রকাশ করা হবে বলে জানান। তাঁদের বক্তব্য: ২০১১-র ১৯ মে জাতি সংক্রান্ত জনগণনা রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দেয় তত্কালীন ইউপিএ সরকার। সে সময়ে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রককে নোডাল এজেন্সি করা হয়। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের তরফে যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়েছে। নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের রিপোর্ট সামনে আসবে শীঘ্রই। সেই সূত্র ধরেই রাজ্যের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী বলেন, ‘‘মণ্ডল নিয়ে আন্দোলন করে আর লাভ হবে না। এক সময়ে লালুপ্রসাদ বলতেন আমরা কমণ্ডলের দল, ওরা মণ্ডলের। এখন আমাদের সঙ্গে কমণ্ডলও রয়েছে, মণ্ডলও রয়েছে।’’ আজকের সভায় অমিত শাহ বলেন, ‘‘বিহারের নির্বাচনে ১৮৫টি আসনে জিতব।’’

রাজনীতির অভি়জ্ঞদের বক্তব্য, কোনও নির্বাচনের আগে এমন ভাবে নির্দিষ্ট আসন সংখ্যা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি অমিত। বিহার নির্বাচনের আগে সেই মন্তব্য করে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইলেন অমিত। এক দিকে, দলীয় কর্মীদের উজ্জীবিত করা। কেন না, সংবাদমাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছিল। বিধান পরিষদের নির্বাচনে ফল ভাল হলেও সংশয় একটা ছিলই। সেই সংশয় বিজেপি সভাপতির এই মন্তব্যে দূর হবে বলেই মনে করছেন তাঁরা। পাশাপাশি, বিরোধী শিবিরের উপরে কিছুটা হলেও চাপ তৈরি করা গেল। বিহারের নির্বাচন যে শুধু রাজ্যের নির্বাচন নয় তা মেনে নিয়েছেন অমিত শাহ। নীতীশ বনাম মোদীর এই লড়াইয়ের এর প্রভাব যে সারা দেশে পড়বে তা স্বীকার করতেও দ্বিধা করেননি বিজেপি সভাপতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন