জ্বলছে সাহারানপুর। শনিবার। ছবি: পিটিআই
বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ফের গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত উত্তরপ্রদেশ। মুজফ্ফরনগরের পর এ বার সাহারানপুর। সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। আহত ১২ জন। আহতদের মধ্যে কয়েক জন পুলিশকর্মীও রয়েছেন। এই অশান্তির জেরে ছ’টি জায়গায় কার্ফু জারি করতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসনকে কড়া হাতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব।
ঘটনার সূত্রপাত আজ ভোরে। কুতুবশের এলাকায় একটি জমি বিবাদকে ঘিরে প্রথমে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। শেষে সেই গোলমালই হিংসাত্মক আকার নেয়। ইট বৃষ্টি থেকে শুরু করে গুলি পর্যন্ত চলে। রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত ডি জি (আইন ও শৃঙ্খলা) মুকুল গয়াল বলেছেন, “জমি বিবাদ ঘিরেই সমস্যার সূত্রপাত বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে ডজনখানেক দোকান ও গাড়ি তছনছ হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। নিহতদের মধ্যে এক জন ব্যবসায়ীদের নেতা।” গয়াল আরও জানিয়েছেন, গোলমালের খবর পাওয়ার পরই পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। ছয় এলাকায় জারি করা হয় কার্ফু। দু’পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে এক পুলিশকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি।
সাহারানপুর ছাড়া উত্তরপ্রদেশের আরও একটি এলাকায় গত কয়েক দিন ধরে গোলমাল চলছে। মোরাদাবাদের কান্ত এলাকা। গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে গত ৪ জুলাই সেখানে একটি মহাপঞ্চায়েতের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন তার অনুমতি না দেওয়ায় গোলমাল আরও বাড়ে। বিজেপি কর্মী সমর্থক ও পুলিশের মধ্যে হাতাহাতিও হয়। তার পর থেকেই এলাকায় চাপা উত্তেজনা চলছে। স্থানীয় বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, এলাকায় ঢুকতে তাঁদের বাধা দিচ্ছে পুলিশ।
রাজ্যের মুখ্যসচিব (তথ্য) নবনীত সহগল বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী সাহারানপুরের পরিস্থিতি কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। নজর রাখা হচ্ছে মোরাদাবাদেও। ওই দুই এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না-হয়, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রসচিবকে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন।” গত সেপ্টেম্বরে উত্তরপ্রদেশেরই মুজফ্ফরনগরে গোষ্ঠী সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছিল ষাট জনের। সংঘর্ষের জেরে ঘরছাড়া হন বহু মানুষ। সেই পরিস্থিতি যাতে ফের ফিরে না আসে, সে জন্য প্রথম থেকেই তৎপর হয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। আজ বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছে অখিলেশ যাদবের। রাজনাথ জানিয়েছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে উত্তরপ্রদেশে আধা সামরিক বাহিনীর ৬০০ জওয়ান পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র।
উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতি জানার পরে সতর্ক হয়েছে কলকাতা পুলিশও। সর্বত্র যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকে, সে দিকে বিশেষ ভাবে নজর রাখছে তারা। এই সুযোগে এখন মাঠে নেমেছে কংগ্রেস। সম্প্রতি দিল্লির মহারাষ্ট্র নিবাসে শিবসেনা সাংসদদের তাণ্ডব, সংসদে বিজেপি সাংসদদের সাম্প্রদায়িক মন্তব্য এবং সাহারানপুরের গোষ্ঠী সংঘর্ষের বিরোধিতা করে আগামী সপ্তাহে সংসদে সরব হতে চলেছে তারা। দলীয় সূত্রে খবর, আজ দশ জনপথে সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের রাজনীতি বিষয়ক কমিটির বৈঠক হয়। তাতে স্থির হয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে গোষ্ঠী সংঘর্ষ ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা নিয়ে সংসদের উভয় কক্ষে আলোচনার দাবি জানাবে কংগ্রেস। সেই সঙ্গে সংসদে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দমন বিল পাশ করানোরও দাবি জানাবে তারা। কেন্দ্র সম্মত না হলে সংসদ অচল করা হবে।
সাহারানপুরের ঘটনার নিন্দা করে রাহুল গাঁধী আজ বলেছেন, “ঘৃণা ও বিভাজনের রাজনীতির স্থান এ দেশে নেই। অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। ধর্মীয় ভাবাবেগের বশে কোনও প্ররোচনায় পা না দিয়ে সকলেরই শান্তি বজায় রাখা উচিত।” রাহুলের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, শুধু সংখ্যালঘুদের বার্তা দিতে কংগ্রেস সংসদে বিতর্ক চাইছে না। উদার হিন্দুদেরও কংগ্রেস বার্তা দিতে চাইছে। দলের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, “দেশে মেরুকরণের রাজনীতি করে তার ফায়দা তুলতে চাইছে বিজেপি। লোকসভা ভোটে তারা তা একপ্রস্ত করেছে। সেই বিভাজন আরও বাড়িয়ে এ বার গোটা দেশে রাজনৈতিক দখল কায়েম করতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। তাতে আখেরে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশই। ধর্মীয় ভাবাবেগের উর্ধ্বে উঠে সকলেরই উচিত এই ধরনের রাজনীতির বিরোধিতা করা।”
সমালোচনার মুখে পড়ে মুখ খুলেছে বিজেপিও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, “বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না দল। মোদী সরকার যে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে কোনও কাজ করে না, তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত।”