কল ড্রপ মন্ত্রীকে ‘ড্রপ’ করার দাবি কংগ্রেসের

হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল খোদ নরেন্দ্র মোদীকেই। তা-ও কল ড্রপের সমস্যা মেটেনি। তাই বিদেশে যখন ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ন ফেরি করে এলেন মোদী, তখন এই সমস্যা নিয়ে তাঁকে বিপাকে ফেলতে তৎপর কংগ্রেস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:১৩
Share:

হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল খোদ নরেন্দ্র মোদীকেই। তা-ও কল ড্রপের সমস্যা মেটেনি। তাই বিদেশে যখন ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ন ফেরি করে এলেন মোদী, তখন এই সমস্যা নিয়ে তাঁকে বিপাকে ফেলতে তৎপর কংগ্রেস। কল ড্রপের সমস্যা মেটাতে ব্যর্থ টেলিকম মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদকেই মন্ত্রিসভা থেকে ‘ড্রপ’ করার দাবি তুলেছে তারা।

Advertisement

বেশ কয়েক মাস ধরেই গোটা দেশের মোবাইল উপভোক্তারা কল ড্রপের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। এই বিষয়ে সংসদের বাদল অধিবেশনেও তোলপাড় হয়েছে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি টেলিকম সচিব ও পরিষেবা সংস্থাগুলিকে ডেকে ব্যাখ্যাও চেয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এই বিষয়ে তাঁর সচিবালয়ে সম্প্রতি একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডাকেন। বিজেপি সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে সরাসরি রবিশঙ্করের কাছে কৈফিয়ত চান মোদী।

জবাবে রবিশঙ্কর জানান, নতুন মোবাইল টাওয়ার বসাতে গিয়ে পরিষেবা সংস্থাগুলি বাধা পাচ্ছে। পরিবেশগত কারণে অনেক পুরসভা ও আবাসন কল্যাণ সমিতি টাওয়ার বসাতে বাধা দিচ্ছে। পরিকাঠামোগত ঘাটতিই কল ড্রপ ও বেমক্কা নেটওয়ার্ক উবে যাওয়ার কারণ। এ নিয়ে কী পদক্ষেপ করা যেতে পারে তা নিয়ে মন্ত্রক ধন্দে রয়েছে।

Advertisement

দলীয় সূত্রে খবর, রবিশঙ্করের কথার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আপনি যদি বুঝতে না পারেন, তা হলে আমাকে অন্য ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে।’’ বিজেপি সূত্রের মতে, প্রকারান্তরে রবিশঙ্কর প্রসাদকে টেলিকম মন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ, তিনি বুঝতে পারছেন এই সমস্যাকে কেন্দ্র করে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে যুব সম্প্রদায় অসন্তুষ্ট হতে পারে। কারণ, দেশের সামগ্রিক ইন্টারনেট ব্যবহারের এখন সিংহভাগই হয় মোবাইলের মাধ্যমে। তা ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ই-কমার্স সংস্থাগুলির পক্ষ থেকেও এই বিষয়ে সরকারের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান অরুন্ধতী ভট্টাচার্য এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কল ড্রপের এই সমস্যা অব্যাহত থাকলে সকলকে আর্থিক পরিষেবার আওতায় আনা এবং ডিজিটাল ব্যাঙ্কিংয়ের পথে বাধা দেখা দেবে।’’

আমেরিকায় মোদী ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ন ফেরি করায় কংগ্রেস আক্রমণের সুযোগ পেয়ে গিয়েছে। কল ড্রপের সমস্যা না মিটলে ডিজিটাল যোগাযোগের বিশাল স্বপ্ন কী ভাবে পূরণ করা যেতে পারে, সেই প্রশ্ন তুলেছে তারা।

বস্তুত ডিজিটাল ইন্ডিয়া নিয়ে মোদীর প্রচারকে কটাক্ষ করে গত কাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা রকম ব্যঙ্গচিত্র ও মন্তব্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই সমালোচনাও চলছে যে প্রধানমন্ত্রী আগে কল ড্রপের সমস্যা দূর করুন, পরে ডিজিটাল ইন্ডিয়া হবে। একটি ব্যঙ্গচিত্রে আবার দেখানো হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী নিজস্বী তুলে সেটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করবেন বলে মোবাইল হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কিন্তু নেটওয়ার্ক পাচ্ছেন না। এই প্রেক্ষাপটেই আজ কল ড্রপের বিষয়টি নিয়ে সরব হয় কংগ্রেস। দল জানিয়েছে, রবিশঙ্করের ইস্তফার দাবিতে এ বার যুব কংগ্রেস রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাবে।

কংগ্রেস সূত্রে স্পষ্টই বলা হচ্ছে, ডিজিটাল ইন্ডিয়া নিয়ে মোদীর বেলুন চুপসে দিতেই এই প্রসঙ্গে হইচই করতে চাইছে দল। যাতে ফেসবুকের সদর দফতরেও সেই খবর পৌঁছয়। এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে টিপ্পনি কেটে আজ কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য শাকিল আহমেদ বলেন,‘‘ভারতের সব গ্রামে ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্প ইউপিএ জমানাতেই শুরু হয়েছিল। মোদী ডিজিটাল ইন্ডিয়া নাম দিয়ে সেই পুরনো প্রকল্প নিয়েও কৃতিত্ব নিতে চাইছেন। অথচ মোবাইল পরিষেবার ত্রুটি দূর করার ক্ষমতা পর্যন্ত তাঁর নেই।’’

রবিশঙ্কর প্রসাদ বিহারের বিজেপি নেতা। আজই দলীয় সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে তিনি পটনায় পৌঁছন। স্বাভাবিক ভাবেই বিহার ভোটে তিনি দলীয় প্রচারের অন্যতম মুখ হবেন। সেক্ষেত্রে তাঁকে ‘কল ড্রপ মিনিস্টার’ হিসেবে তুলে ধরে পাল্টা প্রচার করা হবে বলেও আজ শাকিল ইঙ্গিত দেন।

তবে রবিশঙ্কর আজ জানান, সরকার উপভোক্তাদের অসন্তোষ মেটানোর জন্য সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে। এমনকী যে পরিষেবা সংস্থাগুলি ইচ্ছাকৃত ভাবে কল ড্রপের সমস্যা জিইয়ে রাখছে তাদের জরিমানা করতে টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছ‌ে। যদিও টেলিকম বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হুঁশিয়ারি দিয়ে কাজের কাজ হবে না। আসল প্রয়োজন হল, মোবাইলের নতুন টাওয়ার বসানো এবং উপভোক্তাদের সংখ্যার অনুপাতে পরিকাঠামো বাড়ানো। তা যত দিন না হচ্ছে, এই সমস্যা অব্যাহত থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন