কংগ্রেস-সপা জোটে গলার কাঁটা ১৫ আসন

দু’দলে জোট হয়েছে। কিন্তু যে শহর থেকে এক সঙ্গে প্রচার শুরু করেছিলেন রাহুল গাঁধী ও অখিলেশ যাদব, সেই লখনউতেই মুখোমুখি লড়ছে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৫৪
Share:

দু’দলে জোট হয়েছে। কিন্তু যে শহর থেকে এক সঙ্গে প্রচার শুরু করেছিলেন রাহুল গাঁধী ও অখিলেশ যাদব, সেই লখনউতেই মুখোমুখি লড়ছে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি!

Advertisement

পোশাকি নাম ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’। ঘটনা হল, লখনউ সেন্ট্রাল বিধানসভা কেন্দ্রের মতো উত্তরপ্রদেশের আরও ১৪টি আসনে মুখোমুখি লড়বে কংগ্রেস ও সপা। গাঁধী পরিবারের গড় বলে পরিচিত অমেঠী-রায়বরেলীর একাধিক আসনেও দু’দলের লড়াই প্রায় নিশ্চিত। কারণ সনিয়া-রাহুলের লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সব বিধানসভা আসনেই প্রার্থী দিতে চায় কংগ্রেস। কিন্তু সেখানে নিজেদের জেতা আসনগুলি ছাড়তে নারাজ সপা।

১৫ আসনে কাঁটা ফুটলেও রাহুল-অখিলেশের দোস্তিতে কিন্তু ফাটল ধরেনি। শুক্রবারই যেমন দু’জনে এক সঙ্গে হেলিকপ্টারে আলিগড়ে পৌঁছেছেন। তার পর দু’জনে দু’দিকে নিজেদের প্রার্থীদের হয়ে প্রচারে বেরিয়ে পড়েছেন। রাহুল গিয়েছিলেন কইলে। সেখানেও কংগ্রেস ও সপা মুখোমুখি। দুই দলের নেতারা বলছেন, সব জোটেই কিছু আসনের ক্ষেত্রে এটা হয়। উপরতলায় জোট হলেও সব সময় তাকে নিচুতলায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না।

Advertisement

শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে উত্তরপ্রদেশের মেগা-নির্বাচন পর্ব। প্রথম দফায় মূলত পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের ৭৩টি আসনে ভোট। তার আগে রাহুল-অখিলেশের জোট যে তাঁর ঘুম কেড়েছে, শুক্রবার তা বিজনৌরে প্রচারে গিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী নিজেই! রাহুলের সঙ্গে জোট করার জন্য অখিলেশের সমালোচনা করে মোদী বলেন, ‘‘বালখিল্য আচরণের জন্য কংগ্রেসের প্রবীণ নেতারাও ওঁর থেকে দূরত্ব রেখে চলেন। আপনি তাঁর সঙ্গেই কোলাকুলি করলেন!’’ এমন আক্রমণ থেকেই জোট নিয়ে মোদীর উদ্বেগ স্পষ্ট। মোদীর দুশ্চিন্তা বাড়াতে শনিবার তাঁর গড়ে ঢুকে আক্রমণ করার পরিকল্পনা ছিল রাহুল-অখিলেশের। ঠিক ছিল, শনিবার মোদীর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীতে ‘রোড শো’ করবেন দু’জনে। কিন্তু রবিদাস জয়ন্তীর জন্য তা বাতিল করতে হয়েছে। যদিও বিজেপির দাবি, রাহুল-অখিলেশ ঝগড়াতেই ওই ‘রোড-শো’ বাতিল হয়েছে। জোটের তরফে জানানো হয়েছে, বারাণসীর বদলে শনিবার সকালে লখনউয়ে যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করবেন রাহুল-অখিলেশ। তাৎপর্যপূর্ণ হল, শনিবারই উত্তরপ্রদেশে প্রথম দফার ৭৩টি আসনে ভোট। আর সে দিনই সকাল ১০টা নাগাদ লখনউয়ে দু’দলের ১০টি অভিন্ন প্রতিশ্রুতি জনতার সামনে তুলে ধরবেন রাহুল-অখিলেশ। এবং শনিবারই প্রথম প্রচারে নামছেন মুলায়ম সিংহ যাদব। এটাওয়ায় যশবন্তনগর বিধানসভা কেন্দ্রে ভাই শিবপালের হয়ে প্রচার করবেন সপা-র ‘নেতাজি’। সমাজবাদী পার্টির নাটকীয় পালাবদলের পরে মুলায়মের এই সভা ঘিরে স্বাভাবিক ভাবেই আগ্রহ তৈরি হয়েছে সব মহলে। সাত দফার ভোটে শনিবার উত্তরপ্রদেশের যে ৭৩টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে, তার মধ্যে গত বিধানসভা ভোটে ২৪টি করে আসনে জিতেছিল সপা ও বসপা। বিজেপি জিতেছিল ১১টি। রাষ্ট্রীয় লোক দল ৯টি এবং কংগ্রেস ৫টি আসন পেয়েছিল। কিন্তু ২০১৪-র লোকসভা ভোটে বিজেপি ছাড়া আর কোনও দল এখানে খাতাই খুলতে পারেনি। কারণ পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের অনেকটা এলাকা জাঠ অধ্যুষিত। ২০১৩-য় মুজফ্‌ফরনগরে গোষ্ঠী সংঘর্ষের পরে জাঠেরা লোকসভায় হাত খুলে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তাঁদের ক্ষোভ, মোদী সরকার প্রতারণা করেছে। প্রতিশ্রুতি মতো জাঠেদের সংরক্ষণ দেওয়া হয়নি। সেই ক্ষতে নুন ছিটিয়েছে নোট বাতিলের পরে দৈনন্দিন সমস্যা। কৃষিপ্রধান এই এলাকার অসংখ্য মানুষ নোট বাতিলের ফলে তুমুল সমস্যায় পড়েছেন। তা নিয়ে তাঁরা নিজেদের ক্ষোভও উগড়ে দিয়েছেন। জোটের পাশাপাশি জাঠ-ক্ষোভও চিন্তা বাড়িয়েছে বিজেপির।

শেষবেলায় তাই জাঠ সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। দু’দিন আগের ওই বৈঠকে তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেন, বিজেপি জাঠ সংরক্ষণের পক্ষে। জাঠেদের মন জিততে আজ মোদীও জানান, বিজেপি ক্ষমতায় এলে উত্তরপ্রদেশের সব জেলায় চৌধরি চরণ সিংহের নামে কৃষকদের জন্য তহবিল তৈরি হবে। কিন্তু এত করেও জাঠ-মন পাওয়া নিয়ে সংশয়ে বিজেপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন