জমি বিল পাশ করানোয় মোদী সরকারের উপর চাপ ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। অন্য দিকে, জমি বিল পাশ করানো কঠিন দেখে কয়লা ও খনি বিল পাশ করিয়ে আর্থিক সংস্কারের পথে কিছুটা হলেও এগোতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী।
শিল্পে নতুন লগ্নি আনতে মরিয়া সরকার ইউপিএ-জমানার জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ বিলে সংশোধন করতে চাইছে। কিন্তু সেই বিলের বিরুদ্ধে কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম থেকে শুরু করে সব দলই এককাট্টা হয়েছে। কাল সনিয়ার নেতৃত্বে শতাধিক সাংসদ সংসদ ভবন থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন পর্যন্ত মিছিল করে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তা ছাড়া, জমি বিলের সমালোচনা করে দিন কয়েক আগে সনিয়াকে চিঠি লিখেছিলেন অণ্ণা হজারে। সেই অণ্ণা, যিনি ইউপিএ সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে অনশনে বসেছিলেন। এ বার তিনিই জমি বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সনিয়াকে পাশে চাওয়ায় কালবিলম্ব করেননি কংগ্রেস সভানেত্রী। কাল রাতেই অণ্ণাকে জবাবি চিঠিতে তিনি লেখেন, “আপনাকে কথা দিচ্ছি, এ ব্যাপারে কংগ্রেসের লড়াই অব্যহত থাকবে।”
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যসভায় জমি বিল নিয়ে আসা ঠিক হবে না বলেই মনে করছে মোদী সরকার। শুক্রবার বাজেট অধিবেশনের প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার কথা। ২০ এপ্রিল থেকে অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে। চলবে ৮ মে। তখনই রাজ্যসভায় জমি বিল নিয়ে আসা হতে পারে। তার আগে কয়লা ও খনি বিল পাশ করিয়ে কাজ কিছুটা এগিয়ে রাখতে চাইছে মোদী সরকার। সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু আজ বলেন, “জমি বিলের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে, কয়লা ও খনি সংক্রান্ত বিলের উপর।”
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কয়লা খনি নিলাম করার জন্য কয়লা অর্ডিন্যান্স এনেছিলেন মোদী। অন্যান্য খনিজের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতার সঙ্গে খনি বণ্টনের প্রক্রিয়া চালু করতে খনি ও খনিজ উন্নয়ন আইনেও সংশোধন করে অর্ডিন্যান্স আনা হয়। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে এই দু’টি অর্ডিন্যান্সের মেয়াদ ফুরোবে। তার আগেই সেগুলিকে আইনের চেহারা দিতে চান মোদী। তৃণমূল বা অন্যান্য আঞ্চলিক দলেরও এতে আপত্তি নেই। কারণ কয়লা খনি নিলামের আয় রাজ্যের কোষাগারেই যাবে। সরকারের তরফে তাই বিরোধীদের কাছে বার্তা দেওয়া হয়েছে, দু’দিনের মধ্যে এই বিল দু’টি পাশ করাতে হবে। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, বিল পাশ না হলে রাজ্যগুলির পাওনা টাকা আটকে যাবে।
জমি-নীতি নিয়ে বিজেপি-বিরোধিতায় অবশ্য সুর একটুও নরম করছে না কংগ্রেস। কালকের মিছিলের সাফল্যের রেশ মেলানোর আগেই বিভিন্ন রাজ্যে সফরে যাচ্ছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। তাঁর সফরসূচিতে সেই সব জায়গাগুলোই প্রাধান্য পাচ্ছে, যেখানে অকালবৃষ্টিতে চাষের প্রবল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শুক্রবার রাজস্থানের কোটায় যাচ্ছেন সনিয়া। সভা করবেন জয়পুরে। হরিয়ানার কয়েকটি জায়গাতেও সভা করার কথা রয়েছে তাঁর।
এত সব রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অনুপস্থিত যিনি, সেই রাহুল গাঁধী যাতে ফিরে এসেই আন্দোলনের হাল ধরতে পারেন, তার জন্যই পাকাপোক্ত জমি তৈরি করে দিচ্ছেন মা।